পবিত্র ঈদুল আজহা

বছর ঘুরে আবার এসেছে পবিত্র ঈদুল আজহা; ত্যাগের মহিমায় চিরভাস্বর এক আনন্দোৎসব। এ দেশে ‘কোরবানির ঈদ’ নামে পরিচিত এই উৎসব শুরুর বেশ আগে থেকেই একধরনের আনন্দের পরিবেশ সৃষ্টি হয়। কোরবানির পশু কেনাবেচার জন্য সারা দেশে জমে ওঠে পশুর হাট। পশু কেনার পর তার যত্ন-পরিচর্যা চলে, এবং সবাই মহান আল্লাহর উদ্দেশে তা কোরবানি করার জন্য অপেক্ষায় থাকে। তারপর আসে ঈদের দিন; ঈদগাহে কিংবা মসজিদে ধনী-গরিব, ছোট-বড় নির্বিশেষ সব মুসলমান কাতারবন্দী হয়ে আদায় করে পবিত্র ঈদুল আজহার নামাজ। সেখানে কোলাকুলি ও কুশল বিনিময়ের মাধ্যমে পারস্পরিক সম্প্রীতি ও মিলনের প্রকাশ ঘটে। ঈদুল ফিতরের মতো ঈদুল আজহায়ও বিপুলসংখ্যক মুসলমানের এক জায়গায় মিলিত হয়ে নামাজ আদায় করা এবং সম্প্রীতি বিনিময়ের সুযোগ ঘটে। এসবই মহান আল্লাহর অশেষ রহমত।

মহান আল্লাহর উদ্দেশে পশু কোরবানি করার রীতি অনেক প্রাচীন। প্রায় চার হাজার বছর আগে হজরত ইব্রাহিম (আ.) স্বপ্নে তাঁর সবচেয়ে প্রিয় বস্তু কোরবানি করার জন্য মহান আল্লাহ তাআলার নির্দেশ পেয়েছিলেন। আল্লাহর নির্দেশ শিরোধার্য: হজরত ইব্রাহিম (আ.)–এর জীবনে সবচেয়ে প্রিয় ছিলেন তাঁর পুত্র হজরত ইসমাইল (আ.)। আল্লাহর সন্তুষ্টি বিধানের জন্য তিনি তাঁর সেই প্রিয়তম পুত্রকেই কোরবানি করার প্রস্তুতি নেন। তিনি পুত্রকে মহান আল্লাহর নির্দেশের কথা জানান এবং পুত্র সানন্দে নিজের জীবন উৎসর্গ করতে সম্মত হন। কেননা তা মহান আল্লাহর নির্দেশ। কিন্তু মহান আল্লাহর কী অপার মহিমা, হজরত ইব্রাহিম (আ.)–এর ছুরির তলে তাঁর প্রিয়তম পুত্র ইসমাইল (আ.)–এর পরিবর্তে কোরবানি হয়ে যায় একটি দুম্বা!

মহান আল্লাহ তাআলার সন্তুষ্টি বিধানের লক্ষ্যে পশু কোরবানি করার ঘটনাটির প্রকৃত তাৎপর্য হলো আল্লাহর সন্তুষ্টি কামনা করে সমস্ত লোভ-লালসা, হিংসা-বিদ্বেষ, ক্রোধ, স্বার্থপরতা তথা ভেতরের পশুত্ব ত্যাগের মধ্য দিয়ে আত্মশুদ্ধি অর্জনের প্রয়াস। আরবি জিলহজ মাসের ১০ তারিখ পবিত্র ঈদুল আজহা অনুষ্ঠিত হয়, তবে তার পরের দুই দিন অর্থাৎ ১১ ও ১২ জিলহজেও পশু কোরবানি করার বিধান রয়েছে।

ঈদুল আজহার দিনে সারা দেশে বিপুলসংখ্যক পশু কোরবানি হয়। এ জন্য পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতার যে সমস্যা দেখা দেয়, তা মোকাবিলা করতে হবে সবাই মিলে। সিটি করপোরেশন ও পৌরসভাগুলোর নির্ধারিত স্থানগুলোতেই পশু কোরবানি করা উচিত। কোরবানির পশুর বর্জ্য দ্রুত সরিয়ে ফেলার জন্য পৌর কর্তৃপক্ষকে তৎপর থাকতে হবে। তবে তাদের কাজে সবাইকে আন্তরিকভাবে সহযোগিতা করতে হবে। প্রতিটি পাড়া-মহল্লার মানুষ নিজ নিজ দায়িত্বে পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতার কাজে উদ্যোগী হলে সিটি করপোরেশন বা পৌরসভার কাজ অনেকটাই সহজ হতে পারে।

ঈদের ছুটিতে বিপুলসংখ্যক মানুষ রাজধানী ঢাকা ও অন্যান্য শহর থেকে গ্রামের বাড়িতে যায়। আমরা কামনা করি, সবার ঈদযাত্রা স্বচ্ছন্দ ও নিরাপদ হোক। ঈদুল আজহার এই আনন্দময় উৎসবে আমাদের অগণিত পাঠক, লেখক, বিজ্ঞাপনদাতা ও শুভানুধ্যায়ীদের প্রতি রইল শুভেচ্ছা। পবিত্র ঈদুল আজহার আনন্দ অমলিন থাকুক। সবাইকে ঈদ মোবারক।