গুরুতর অপরাধ সংঘটিত হয়েছে

>

মিয়ানমার নিয়ে স্বাধীন আন্তর্জাতিক তথ্যানুসন্ধানী মিশনের প্রতিবেদন

জাতিসংঘের মানবাধিকার পরিষদ মিয়ানমারের পরিস্থিতি নিয়ে গত বছর একটি তথ্যানুসন্ধানী মিশন গঠন করে। এক বছরের বেশি সময় অনুসন্ধানের পর গত ২৭ আগস্ট মিশন এই সংক্ষিপ্ত প্রতিবেদন প্রকাশ করে। এতে রোহিঙ্গাসহ অন্য জাতিগুলোর ওপর চালানো অপরাধ, সামরিক ও বেসামরিক কর্তৃপক্ষের ভূমিকা, অপরাধের মাত্রা ও বিচার নিয়ে বিশদ বলা হয়েছে। ১৮ সেপ্টেম্বর মানবাধিকার পরিষদে পূর্ণাঙ্গ প্রতিবেদন উপস্থাপন করা হবে। প্রথম আলোর পাঠকদের জন্য সংক্ষিপ্ত প্রতিবেদনটি অনুবাদ করে ছাপা হচ্ছে। আজ ছাপা হলোশেষ পর্ব

রাখাইনে যে পদ্ধতিগত নির্যাতন ও বৈষম্য চালানো হয়েছে, তা বর্ণবাদী অপরাধের শামিল হওয়ার যোগ্য
রাখাইনে যে পদ্ধতিগত নির্যাতন ও বৈষম্য চালানো হয়েছে, তা বর্ণবাদী অপরাধের শামিল হওয়ার যোগ্য

পনেরো. আন্তর্জাতিক আইনের অধীন অপরাধ

সংগৃহীত তথ্যের ওপর ভিত্তি করে বর্তমান মিশন এই যুক্তিসংগত উপসংহারে এসেছে যে আন্তর্জাতিক আইনের অধীনে গুরুতর অপরাধ সংঘটিত
হয়েছে, যা ফৌজদারি তদন্ত এবং আইনের কাঠগড়ায় দাঁড় করানোর দাবি রাখে। মিশনের পূর্ণ বিশ্লেষণ নথিতে উপস্থাপন করা হয়েছে এ/এইচআরসি/৩৯/সিআরপি.২ নথিতে। 

ক. গণহত্যা

কোনো ব্যক্তি যখন একটি জাতীয়, নৃগোষ্ঠীগত, বর্ণগত বা ধর্মীয় বা এ রকম কোনো গোষ্ঠীকে সম্পূর্ণ বা আংশিক ধ্বংসের অভিপ্রায়ে নিষিদ্ধ কর্মকাণ্ড করে, তখন গণহত্যা সংঘটিত হয়। এ সংজ্ঞার আওতায় রোহিঙ্গারা একটি সুরক্ষিত গোষ্ঠী। তাদের সঙ্গে মিয়ানমারের নিরাপত্তা বাহিনীগুলো যে আচরণ করেছে এবং যা করার জন্য কিছু বেসামরিক লোককেও যুক্ত করছে, তা সংজ্ঞাবদ্ধ পাঁচটি নিষিদ্ধ কর্মকাণ্ডের চারটির আওতায় পড়ে। এগুলো হলো:
১. হত্যাকাণ্ড, ২. গুরুতর শারীরিক বা মানসিক ক্ষতিসাধন, ৩. জীবনযাপনের ক্ষেত্রে দুর্দশা সৃষ্টি, যেখানে কোনো গোষ্ঠীকে সম্পূর্ণ বা আংশিকভাবে ধ্বংস করা হয়, ৪. জন্মগ্রহণ ঠেকাতে বিভিন্ন পদক্ষেপ চাপিয়ে দেওয়া।

সংঘটিত এ অপরাধের গুরুত্বপূর্ণ উপাদান হলো ‘গণহত্যার অভিপ্রায়’। এমন অভিপ্রায়-সংক্রান্ত যৌক্তিক সিদ্ধান্ত নিয়ে আন্তর্জাতিক ট্রাইব্যুনালের আইনি বিধিবিধানের আলোকে মিশন তার সংগৃহীত তথ্য মূল্যায়ন করেছে। রাখাইন রাজ্যে সংঘটিত অপরাধগুলো এবং যে পন্থায় সেসব সংঘটিত করা হয়েছে তা প্রকৃতি, গুরুত্ব ও মাত্রার দিক থেকে একই চরিত্রের। অন্যান্য প্রেক্ষাপট বিবেচনায়ও এসব অপরাধের পেছনে গণহত্যার অভিপ্রায় প্রতিষ্ঠিত। ঘটনাগুলো নির্দেশ করে, গণহত্যার অভিপ্রায়ে যে বিষয়গুলো অন্তর্ভুক্ত ছিল তা হলো: বৃহত্তর নির্যাতনমূলক প্রেক্ষাপট ও বিদ্বেষমূলক প্রচারণা; কমান্ডার ও প্রত্যক্ষ দোষীদের সুনির্দিষ্ট বক্তব্য; রাখাইনের ভৌগোলিক গঠনচিত্র পাল্টে দেওয়াসহ প্রতারণামূলক নীতি; ধ্বংসের পরিকল্পনা-নির্দেশক তৎপরতা এবং সহিংসতার চূড়ান্ত মাত্রা ও বর্বর রূপ।

অভিপ্রায়-সংক্রান্ত সম্ভাব্য অন্যান্য অনুমান সতর্কভাবে বিবেচনা করে তথ্যানুসন্ধানী এই মিশন মনে করছে, অযৌক্তিক মনে হলে সম্ভাব্য অনুমানের ব্যাপারে ছাড় দেওয়া যেতে পারে। এ ব্যাপারে মিশন উল্লেখ করতে চায়, ৩৫ নম্বর অনুচ্ছেদে তুলে ধরা সেনাপ্রধানের উক্তি থেকে উদ্ঘাটিত হয়েছে যে ‘নির্মূল অভিযান’ আরসার কাছ থেকে পাওয়া বাস্তব হুমকির সাড়া নয়, বরং যে ‘বাঙালি সমস্যা দীর্ঘদিনের’, তা সমাধানে ‘অসমাপ্ত কাজের’ অংশ।

গণহত্যার অভিপ্রায় নিয়ে সিদ্ধান্ত বিবেচনা করে মিশন এই উপসংহারে এসেছে যে সেনাবাহিনীর চেইন অব কমান্ডের জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তাদের তদন্তের আওতায় আনার ও বিচার করার পক্ষে যথেষ্ট তথ্য আছে। ফলে রাখাইন রাজ্যের পরিস্থিতি নিয়ে উপযুক্ত কোনো আদালত সংঘটিত গণহত্যার জন্য এই কর্মকর্তাদের দায় নির্ধারণ করতে পারেন। 

খ. মানবতাবিরোধী অপরাধ

সংগৃহীত তথ্যের ভিত্তিতে মিশন দেখেছে, কাচিন, রাখাইন ও শান রাজ্যে মানবতাবিরোধী অপরাধ সংঘটিত হয়েছে এবং তা প্রধানত সেনাবাহিনীর মাধ্যমে। কাচিন ও শান রাজ্যের ক্ষেত্রে মানবতাবিরোধী অপরাধের মধ্যে ছিল খুন, আটক, জোরপূর্বক গুম, নির্যাতন, ধর্ষণ, যৌন দাসত্ব ও অন্যান্য ধরনের যৌন সহিংসতা, নিপীড়ন ও দাসত্ববন্ধন। রাখাইনে এসবের বাইরেও অন্যান্য মানবতাবিরোধী অপরাধের ঘটনা ঘটেছে। এর মধ্যে সম্পূর্ণভাবে বিনাশ করা এবং তাড়িয়ে দেওয়ার উপাদানও রয়েছে। যে পদ্ধতিগত নির্যাতন ও বৈষম্য চালানো হয়েছে, তা নিপীড়ন-সংক্রান্ত সিদ্ধান্ত শুধু সমর্থনই করে না, বরং বর্ণবাদী অপরাধেরও শামিল হওয়ার যোগ্য। উত্তরাঞ্চলীয় মিয়ানমার ও রাখাইন রাজ্য—উভয় অঞ্চলেই এসব কর্মকাণ্ড চালানো হয়েছে বেসামরিক জনগণের ওপর ব্যাপক ও পদ্ধতিগত হামলার অংশ হিসেবে। 

গ. যুদ্ধাপরাধ

মিশনের বিবেচনায় কাচিন ও শান রাজ্যে অ-আন্তর্জাতিক সশস্ত্র সংঘাত চলছে (পর্যালোচনার পুরো সময়জুড়ে) এবং রাখাইন রাজ্যে তা চলছে অন্তত ২০১৭ সালের আগস্ট থেকে। এই সংঘাতের বহু কর্মকাণ্ডই মানবতাবিরোধী অপরাধকে তুলে ধরেছে। সেখানে রয়েছে যুদ্ধাপরাধের উপাদান তথা খুন, নির্যাতন, নিষ্ঠুর আচরণ, আত্মমর্যাদার ওপর আঘাত, বেসামরিক লোকজনের ওপর আক্রমণ, বেসামরিক লোকজনকে বাস্তুচ্যুত করা, লুটতরাজ, সংরক্ষিত স্থাপনায় হামলা, পণবন্দী করা, যথাযথ প্রক্রিয়া না মেনে কারাদণ্ড বা মৃত্যুদণ্ড, ধর্ষণ, যৌন দাসত্ব ও যৌন সহিংসতা। সশস্ত্র জাতিগোষ্ঠীভিত্তিক সংগঠনগুলো (ইএও) এবং আরসার মাধ্যমে সংঘটিত কিছু কর্মকাণ্ডও যুদ্ধাপরাধ বলে বিবেচিত হতে পারে। 

ষোলো. দায়দায়িত্ব

সশস্ত্র গোষ্ঠীগুলো বেসামরিক নাগরিকদের ওপর অপরাধ করায় তাদের জবাবদিহির মুখোমুখি করা উচিত। পর্যালোচনাধীন সময়ে কাচিন, রাখাইন ও শান রাজ্যে মানবাধিকার লঙ্ঘন ও আন্তর্জাতিক আইন লঙ্ঘন করে মূল অপরাধ সংঘটনকারী ছিল মিয়ানমারের সেনাবাহিনী। এ ছাড়া রাখাইন রাজ্যে মিয়ানমারের পুলিশ বাহিনী, নাসাকা ও বর্ডার গার্ড পুলিশও অপরাধ করেছে। স্থানীয় কর্তৃপক্ষ, স্থানীয় বিদ্রোহী গোষ্ঠী, জঙ্গি ‘বেসামরিক’ গোষ্ঠী, রাজনীতিবিদ ও ভিক্ষুরাও নানা মাত্রায় অপরাধে অংশ নিয়েছে কিংবা সহযোগিতা করেছে।

সামরিক নেতৃত্ব নিজেদের সদস্যসহ সামরিক অভিযানে অংশ নেওয়া অন্য সশস্ত্র ব্যক্তিদের ওপর কার্যকর নিয়ন্ত্রণ অনুশীলন করে। সামরিক বাহিনীর সামঞ্জস্যপূর্ণ কৌশলগত এই সূত্রের বাস্তবায়ন প্রদর্শন করে যে সমন্বয় তখনই সম্ভব, যখন সব সেনা একক সমন্বিত নেতৃত্বের কার্যকর নিয়ন্ত্রণের অধীনে থাকবে। অধীন ব্যক্তিদের অপরাধ সংঘটনের বিষয়ে অবগত থাকাসহ এই কার্যকর নিয়ন্ত্রণ, অপরাধ প্রতিরোধে প্রয়োজনীয় ও যৌক্তিক পদক্ষেপ নেওয়ার ও শাস্তি দিতে ব্যর্থতা এবং এই ব্যর্থতা ও সংঘটিত নৃশংসতার মধ্যে যোগসূত্র ইঙ্গিত করে যে ব্যক্তির অপরাধের দায় ব্যক্তি অপরাধীকে ছাপিয়ে তাদের প্রধান নেতৃত্বের ওপর বর্তায়। বর্তমান মিশন আন্তর্জাতিক আইন অনুসারে অভিযুক্ত অপরাধীদের একটি অসম্পূর্ণ তালিকা তৈরি করেছে। এর মাধ্যমে ইঙ্গিত পাওয়া যায় কাদের বিরুদ্ধে আগে তদন্ত ও বিচার করতে হবে। তালিকায় সরাসরি অভিযুক্ত অপরাধীদের নাম থাকলেও তাদের ওপর কার্যকর নিয়ন্ত্রণের অনুশীলনকারীদের ওপরও আলোকপাত করা হয়েছে। রাখাইন রাজ্যে সাম্প্রতিক ঘটনাবলির পরিপ্রেক্ষিতে এই তালিকায় সামরিক বাহিনীর প্রধান সিনিয়র জেনারেল মিন অং হ্লাইংসহ আরও রয়েছেন:

উপপ্রধান ভাইস সিনিয়র জেনারেল সোয়ে উইন; ·কমান্ডার, ব্যুরো অব স্পেশাল অপারেশনস-৩, লেফটেন্যান্ট জেনারেল অং কিয়াও জ; কমান্ডার, সেনাবাহিনীর পশ্চিমাঞ্চলীয় কমান্ড, মেজর জেনারেল মং মং সোয়ে; কমান্ডার, ৩৩তম লাইট ইনফ্যান্ট্রি ডিভিশন, ব্রিগেডিয়ার জেনারেল অং অং; ·কমান্ডার, ৯৯তম লাইট ইনফ্যান্ট্রি ডিভিশন, ব্রিগেডিয়ার জেনারেল থান উ।

মিশনের মহাফেজখানার অংশ হিসেবে সম্পূর্ণ তালিকা তৈরি করা হবে। সেটা জাতিসংঘের মানবাধিকার–বিষয়ক হাইকমিশনারের হেফাজতে থাকবে এবং আন্তর্জাতিক নিয়ম ও মানদণ্ড অনুযায়ী জবাবদিহি চাওয়া উপযুক্ত ও বিশ্বাসযোগ্য কর্তৃপক্ষকে সরবরাহ করা যাবে।

সামরিক বাহিনীর কার্যক্রম নিয়ন্ত্রণে বেসামরিক কর্তৃপক্ষের খুবই কম সাংবিধানিক ক্ষমতা রয়েছে। এমন কোনো লক্ষণ দেখা যায়নি যে তারা নিরাপত্তা বাহিনীর অভিযানের পরিকল্পনা বা বাস্তবায়নে সরাসরি অংশ নিয়েছে কিংবা নেতৃত্ব অবকাঠামোর অংশ ছিল। তা সত্ত্বেও এমন কোনো ইঙ্গিতও পাওয়া যায়নি যে বেসামরিক কর্তৃপক্ষ রাখাইন রাজ্যে, যেখানে অপরাধ সংঘটিত হয়েছে, প্রভাব বিস্তার করতে তাদের সীমিত ক্ষমতা ব্যবহার করেছে। ঘটনাপ্রবাহ থামাতে বা প্রতিরোধে স্টেট কাউন্সেলর অং সান সু চি সরকারপ্রধান হিসেবে তাঁর কার্যকর অবস্থান বা নৈতিক কর্তৃত্ব কাজে লাগাননি কিংবা বেসামরিক জনগোষ্ঠীকে সুরক্ষা দেওয়ার দায়িত্ব পালনে বিকল্প কোনো উপায়ের অনুসন্ধান করেননি। বরং বেসামরিক কর্তৃপক্ষ মিথ্যা বিবৃতি ছড়িয়েছে, সামরিক বাহিনীর অন্যায়কে প্রত্যাখ্যান করেনি, তথ্যানুসন্ধান মিশনসহ স্বাধীন তদন্ত প্রক্রিয়াকে বাধাগ্রস্ত করেছে এবং প্রমাণ বিনষ্ট করার প্রক্রিয়া তত্ত্বাবধান করেছে। তাদের কার্যক্রম ও বিভ্রান্ত পদক্ষেপের মাধ্যমে বেসামরিক কর্তৃপক্ষ নৃশংস অপরাধ সংঘটনে অবদান রেখেছে।

মিয়ানমারে যে সময়টাতে উল্লেখযোগ্য আন্তর্জাতিক সংশ্লিষ্টতা চলছিল এবং যখন জাতিসংঘের হিউম্যান রাইটস আপ ফ্রন্ট অ্যাকশন প্ল্যান বাস্তবায়নের কথা ছিল, তখনো আন্তর্জাতিক আইন অনুসারে পদ্ধতিগত বৈষম্য ও অপরাধ সংঘটিত হয়েছে। মিয়ানমারের পরিস্থিতিকে যখন অ্যাকশন প্ল্যানের প্রয়োজনীয় পরিস্থিতি হিসেবে চিহ্নিত করে বারবার সংকট নিরসনে ‘জাতিসংঘের সামগ্রিক’ মানবাধিকারভিত্তিক পদক্ষেপের কথা বলা হয়েছে, সে সময়ও এই পরিকল্পনা খুব কমই অনুসরণ করা হয়েছে। বরং জাতিসংঘের বহু সংস্থা উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা, মানবিক সহায়তার প্রবেশ্যতা এবং নীরব কূটনীতিকেই কেবল অগ্রাধিকার দিয়েছে। এই পদক্ষেপ পরিষ্কারভাবে ব্যর্থ হয়েছে। মানবাধিকার সংকটকে যথাযথভাবে চিহ্নিত করতে জাতিসংঘ পুরোপুরি ব্যর্থ হয়েছে। এই পদক্ষেপ থেকে কোনো শিক্ষা অর্জিত হয়েছে কি না, তার নিদর্শন এমনকি বর্তমানেও খুব কমই দেখা গেছে। সরকারের সঙ্গে জাতিসংঘের স্বাক্ষরিত সাম্প্রতিক চুক্তিতে মানবাধিকারের বিষয়টি নেই। জাতিসংঘের যেসব সংস্থা মূল্যবান সহযোগিতা ও তথ্য দিয়েছে, তাদের ধন্যবাদ জানানোর পাশাপাশি মিশন অন্য যে সংস্থাগুলো সহযোগিতা করেনি, তাদের ব্যাপারে দুঃখ প্রকাশ করছে। 

সতেরো. জবাবদিহি

‘আমার তো শিক্ষাদীক্ষা নেই। তবে আমি বুঝি যে জাতিসংঘের ক্ষমতা আছে। মিয়ানমার সরকার আমাদের সঙ্গে যা করেছে, জাতিসংঘ নিশ্চয়ই সেসবের জন্য তাদের জবাবদিহি করে আমাদের ইনসাফ এনে দেবে।’ 

দশকের পর দশক ধরে মিয়ানমারে ভুক্তভোগীদের জন্য ন্যায়বিচার ধরাছোঁয়ার বাইরে। কর্তৃপক্ষ পদ্ধতিগতভাবে নিন্দা জানাতে, তদন্ত করতে এবং অপরাধীদের বিচার করতে ব্যর্থ হয়েছে। সার্বিক মানবাধিকার লঙ্ঘনে দায়মুক্তি উল্লেখযোগ্য ও পরিষ্কারভাবে গভীর নিপীড়ন ও বৈষম্যমূলক আচরণকে বৈধতা দিতে অবদান রেখেছে, মানবাধিকার লঙ্ঘন ও নৃশংস অপরাধের পুনরাবৃত্তি ঘটিয়েছে এবং অপরাধীদের উৎসাহিত করেছে ও ভুক্তভোগীদের মুখ বন্ধ করে দিয়েছে। এই দায়মুক্তি চিহ্নিত এবং নিরাপত্তা বাহিনীর সব পদাধিকারীকে তাঁদের অতীত, বর্তমান ও ভবিষ্যৎ কর্মের জন্য জবাবদিহি না করা পর্যন্ত একই ধরনের সহিংস ঘটনার সঙ্গে নৃশংসতা অব্যাহত থাকার আশঙ্কা রয়েছে। তার স্থানীয় ও আঞ্চলিক প্রভাব হবে ভয়ানক।

রাখাইন সংকটের মুখে মিয়ানমার কর্তৃপক্ষ বিশেষ তদন্ত কমিশন ও পর্ষদ গঠন করেছে। ২০১২ সালের পরে নেওয়া এমন আটটি প্রচেষ্টা যাচাই করেছে মিশন। এগুলোর কোনোটিই নিরপেক্ষ, স্বাধীন, কার্যকর ও বিশদ মানবাধিকার তদন্তের মানদণ্ড নিশ্চিত করতে পারেনি। মিশনের জানামতে, এগুলোর কোনোটিই সার্বিক মানবাধিকার লঙ্ঘনের অভিযোগে কাউকে বিচারের মুখোমুখি করতে পারেনি এবং ভুক্তভোগীকে প্রতিকার দিতে পারেনি। এর কারণ স্পষ্ট: মিয়ানমারে তা সম্ভব নয়।

দায়মুক্তি মিয়ানমারের রাজনৈতিক ও আইনি ব্যবস্থায় গভীরভাবে প্রোথিত, যা সামরিক বাহিনীকে কার্যকরভাবে আইনের ঊর্ধ্বে রাখে। সংবিধান ও অন্য আইনগুলো দায়মুক্তি নিশ্চিত করে এবং সামরিক বাহিনীকে বেসামরিক নজরদারির আওতার বাইরে রাখে। অভ্যন্তরীণ বিষয়গুলোয় সামরিক বাহিনী স্বাধীনভাবে সিদ্ধান্ত নিতে পারে। সেনাপ্রধানের বক্তব্যই সেখানে শেষ কথা। দায়মুক্তির সার্বিক এই ধারার বিপরীতে কালেভদ্রে যে দু–একটা মামলা হয়, সেগুলো সার্বিকভাবে যথেষ্ট নয়। বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই সামরিক আদালতে মামলার নিষ্পত্তি হয়। সেখানে স্বচ্ছতা থাকে না। এ ছাড়া সেনাবাহিনীর বিস্তর পরিসরে মানবাধিকার লঙ্ঘনের ঘটনাগুলো মোকাবিলায় সামরিক আদালতগুলোও পর্যাপ্ত নয়। বেসামরিক আদালতও সেখানে সমাধান নয়, স্থানীয় বিচারব্যবস্থা স্বাধীন নয় এবং ন্যায়বিচারের মানদণ্ডকে সমীহ করার সক্ষমতাও সেখানে নেই। উচ্চপদস্থ কর্মকর্তাদের অপরাধের, বিশেষ করে আন্তর্জাতিক আইন অনুসারে সংঘটিত অপরাধের প্রসার ও গুরুত্ব বিবেচনায় সেগুলো মোকাবিলার সক্ষমতা এসব আদালতের নেই। যাঁরা অভিযোগ দায়ের করেন, তাঁরা প্রায়ই হুমকি ও প্রতিহিংসার শিকার হন। সংক্ষেপে, স্থানীয় পর্যায়ে বর্তমানে জবাবদিহি দুর্লভ।

আন্তর্জাতিক আইন অনুসারে অপরাধের তদন্ত ও বিচার করার দায়িত্বপ্রাথমিকভাবে মিয়ানমার সরকারের হলেও তারা অক্ষমতা ও অনিচ্ছা প্রদর্শন করেছে। জবাবদিহি নিশ্চিত করতে হলে দেশটির পুরো বিচার বিভাগ ও নিরাপত্তা বিভাগকে ঢেলে সাজাতে হবে। মিশন যুক্তিসংগত কারণেই সিদ্ধান্তে এসেছে যে সামান্য আন্তর্জাতিক সংশ্লিষ্টতা থাকা সত্ত্বেও সরকারের সম্প্রতি গঠন করা তদন্ত কমিশন জবাবদিহি নিশ্চিতে প্রকৃত উপায় বের করতে পারে না এবং পারবে না। জবাবদিহি নিশ্চিত করার জন্য অবশ্যই আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় থেকে তাগিদ আসতে হবে।

বিস্তারিত প্রতিবেদনে বর্তমান মিশন পরিবর্তিত, ভুক্তভোগীকেন্দ্রিক, সমন্বিত ও অন্তর্ভুক্তিমূলক জবাবদিহি প্রক্রিয়ার প্রস্তাব করেছে। তিনটি মৌলিক পরিবর্তনে এটি অবদান রাখতে পারে: দায়মুক্তির সংস্কৃতি ভাঙা; নিরাপত্তা বাহিনীসহ সব রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠানের জনগণের কাছে দায়বদ্ধতা নিশ্চিত করা; এবং সবার মানবাধিকারের প্রতি শ্রদ্ধা প্রদর্শনের ও সমতার ভিত্তিতে অন্তর্ভুক্তিমূলক মিয়ানমার রাষ্ট্র ও জাতির ধারণার প্রচার। সত্য, ন্যায়বিচার, ক্ষতিপূরণ ও অপরাধের পুনরাবৃত্তি রোধের নিশ্চয়তার ক্ষেত্রে এসব বিবেচ্য বিষয়ের পরিসর এমন হওয়া উচিত, যেখানে সব পদক্ষেপ গ্রহণ করা সম্ভব হবে। 

আঠারো. মূল উপসংহার ও সুপারিশ

কাচিন, রাখাইন ও শান রাজ্যে সার্বিক যে মানবাধিকার লঙ্ঘন ও নিপীড়ন হয়েছে, ভয়াবহ প্রকৃতি ও ব্যাপকতার জন্য এসব ঘটনা অত্যন্ত বেদনাদায়ক। এসব লঙ্ঘনের বহু ঘটনাই নিঃসন্দেহে আন্তর্জাতিক আইন অনুসারে গুরুতর অপরাধ। ঘটনাগুলো অত্যন্ত বেদনাদায়ক, কারণ এসব সমাজের গভীর, চিরন্তন ও অবকাঠামোগত সমস্যা থেকে উৎসারিত, যা দশকের পর দশক ধরে দৃশ্যমান ও অচিহ্নিত। অস্বীকৃতির মাত্রা, স্বাভাবিকতা ও দায়মুক্তির কারণে এসব ঘটনা বেদনাদায়ক। মিশন এই সিদ্ধান্তে উপনীত হয়েছে যে এসব অবমাননাকর নিদর্শন মিয়ানমারের সার্বিক পরিস্থিতিরই প্রতিফলন।

অত্যন্ত জরুরি ভিত্তিতে এই পরিস্থিতির প্রতিকারের গুরুদায়িত্ব মিয়ানমারেরই। নয়তো দেশটির গণতান্ত্রিক সংস্কার প্রক্রিয়া ধ্বংসের ঝুঁকিতে পড়বে। আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়েরও দায়িত্ব রয়েছে। লঙ্ঘনের নিন্দা জানাতে ও বারবারের এই সমস্যার মূল কারণ চিহ্নিত করতে মিয়ানমারকে সহযোগিতা করতে অবশ্যই জোটবদ্ধ হতে হবে। এর শুরুটা হবে অপরাধ সংঘটনকারীদের জবাবদিহি নিশ্চিত করার এবং ভুক্তভোগীদের ভয়হীন ও নিরাপদ ভবিষ্যতের আশা দেওয়ার মাধ্যমে। মিয়ানমারে মানবাধিকার সংকট চিহ্নিত করতে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপগুলো সুবিদিত। প্রায় তিন দশক ধরে মিয়ানমারে মানবাধিকার পরিস্থিতি–বিষয়ক পাঁচজন বিশেষ দূত সাধারণ পরিষদ ও মানবাধিকার কাউন্সিলে বার্ষিক প্রতিবেদন দিয়েছেন, যেগুলোয় সব অংশীজনের জন্য বিস্তারিত সুপারিশ রয়েছে। একইভাবে জাতিসংঘের মানবাধিকার–বিষয়ক হাইকমিশনার সুস্পষ্ট সুপারিশমালা প্রণয়ন করেছেন, যেমনটা বহু আন্তর্জাতিক ও জাতীয় নাগরিক সমাজের সংগঠন করেছে। রাখাইন রাজ্যবিষয়ক পরামর্শক কমিশনও বিস্তারিত প্রতিবেদন দিয়েছে। এসব সুপারিশ অবিলম্বে বাস্তবায়ন করা উচিত।

মিশনের বিস্তারিত প্রতিবেদনে বিস্তৃত সুপারিশ রয়েছে। এখানে পদক্ষেপ নেওয়ার ক্ষেত্রে নিচের সুপারিশগুলো আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের জন্য অগ্রাধিকার ভিত্তিতে বিশেষ মনোযোগের বিষয় হবে:

ক. মিয়ানমারের নির্যাতিত জনগোষ্ঠীর ওপর সংঘটিত গণহত্যা, মানবতাবিরোধী অপরাধ ও যুদ্ধাপরাধ থেকে তাদের রক্ষা করতে দেশটির দায়িত্ব পালনে জাতিসংঘের মাধ্যমে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের উচিত কূটনৈতিক, মানবিক ও অন্যান্য শান্তিপূর্ণ উপায় অবলম্বন করা। জাতিসংঘ সনদ অনুসারে সম্মিলিত পদক্ষেপ নিতে হবে;

খ. আন্তর্জাতিক আইন অনুসারে মিয়ানমারে সংঘটিত অপরাধের জবাবদিহি নিশ্চিত করতে নিরাপত্তা পরিষদের আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালতকে সম্পৃক্ত করা, তা না হলে বিশেষ আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল গঠন করা বাঞ্ছনীয়। অধিকন্তু নিরাপত্তা পরিষদের উচিত আন্তর্জাতিক আইন অনুসারে গুরুতর অপরাধে সর্বোচ্চ দায়ী ব্যক্তিদের ওপর সম্পদ জব্দ করা এবং ভ্রমণসহ অন্যান্য নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা। মিয়ানমারের ওপর নিরাপত্তা পরিষদের অস্ত্র নিষেধাজ্ঞাও আরোপ করা উচিত;

গ. নিরাপত্তা পরিষদ যতক্ষণ পর্যন্ত পদক্ষেপ না নেয়, সে পর্যন্ত সাধারণ পরিষদের কিংবা বিকল্প উপায়ে মানবাধিকার কাউন্সিলের উচিত আন্তর্জাতিক মানবিক আইন ও মানবাধিকার লঙ্ঘন এবং নিপীড়নের প্রমাণাদি সংগ্রহ, জমা, সংরক্ষণ ও বিশ্লেষণে একটি স্বাধীন, নিরপেক্ষ ব্যবস্থা গঠন করা এবং জাতীয়, আঞ্চলিক, আন্তর্জাতিক আদালত কিংবা ট্রাইব্যুনালে ন্যায্য ও স্বাধীন বিচার প্রক্রিয়া এগিয়ে নিতে ও সহজ করতে নথিপত্র প্রস্তুত করা;

ঘ. মানবাধিকার কাউন্সিলের উচিত মিয়ানমার বিষয়ক বিশেষ দূত ও মানবাধিকার–বিষয়ক হাইকমিশনারের নির্দেশনাগুলোর প্রতি সমর্থন অব্যাহত রাখা এবং মিয়ানমারে মানবাধিকার সংকটের ওপর জোরালোভাবে আলোকপাত বজায় রাখতে নিজেদের পর্যাপ্ত সম্পদ নিশ্চিত করা;

ঙ. মানবাধিকার কাউন্সিলের উচিত মিয়ানমারে মানবাধিকার লঙ্ঘন ও নিপীড়নের ব্যাপারে নজরদারি জোরদার, নথিকরণ, বিশ্লেষণ ও মানবাধিকার পরিস্থিতি নিয়ে জনপ্রতিবেদন তৈরি; সংশ্লিষ্ট আন্তর্জাতিক মানদণ্ড অনুসারে মানবাধিকার লঙ্ঘন নথিবদ্ধ করতে নাগরিক সমাজ ও অন্য সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের মধ্যে সচেতনতা বৃদ্ধি; ন্যায়বিচার পাওয়ার বিকল্পগুলোর ব্যাপারে ভুক্তভোগী সম্প্রদায়ের মধ্যে সচেতনতা সৃষ্টিতে কাজ এবং আন্তর্জাতিক মানবাধিকারের নিয়ম ও মানদণ্ড অনুসারে মিয়ানমারে সার্বিক আইনের শাসন ও নিরাপত্তা বিভাগে সংস্কারের প্রতি সমর্থন দেওয়ার মাধ্যমে জবাবদিহি নিশ্চিত করতে ওএইচসিএইচআরকে বিশেষভাবে অনুরোধ করা;

চ. মানবাধিকার কাউন্সিলের উচিত মিশনের গৃহীত কাজগুলো এগিয়ে নিতে সীমিত সময়ের জন্য দ্বিতীয় তথ্যানুসন্ধান মিশন গঠন করা, যতক্ষণ পর্যন্ত না খ বা গ-এ উল্লিখিত ব্যবস্থা কার্যকর হয় কিংবা ঙ-এ উল্লিখিত ওএইচসিএইচআরের জোরদার কাজ শুরু না হয়;

ছ. হিউম্যান রাইটস আপ ফ্রন্ট অ্যাকশন প্ল্যান অনুসারে মানবাধিকার বিষয়ক উদ্বেগগুলো চিহ্নিত করা এবং মিয়ানমারের সঙ্গে স্বাক্ষরিত সব চুক্তি বাস্তবায়নের বিষয়গুলো নিশ্চিত করতে জাতিসংঘের জরুরি ভিত্তিতে একটি সাধারণ কৌশল নেওয়া উচিত। এতে মিয়ানমারে জাতিসংঘের সব ধরনের সংশ্লিষ্টতার বিষয়ে, বিশেষ করে রাখাইন রাজ্য সম্পর্কে নির্দেশনা এবং নীতি ও জনস্বার্থের সুপারিশমালা থাকা উচিত। মিয়ানমার কর্তৃপক্ষের প্রতি জাতিসংঘের সব সমর্থন যুক্তিযুক্ত পদক্ষেপের মাধ্যমে মানবাধিকারের পূর্ণ বিশ্লেষণের ভিত্তিতে হওয়া উচিত;

জ. পরিস্থিতির গুরুত্ব বিবেচনায় যে সংকটের সৃষ্টি হয়েছে, তা প্রতিহত বা প্রশমিত করতে সব ধরনের পদক্ষেপ নেওয়া সম্ভব ছিল কি না, ব্যর্থতা থেকে শিক্ষা অর্জিত হয়েছে কি না এবং উত্তম অনুশীলনের বিষয়ে জবাবদিহি নিশ্চিত করাসহ যেসব সুপারিশ করা হয়েছে, সেগুলো যথাযথ কি না এবং ভবিষ্যতে আরও কার্যকর উপায়ে কাজ সম্পাদনের দৃষ্টিকোণ থেকে ২০১১ সালের পর মিয়ানমারে জাতিসংঘের সংশ্লিষ্টতার ব্যাপারে স্বাধীন ও ব্যাপক তদন্ত করতে হবে;

ঝ. জাতিসংঘ ও আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে অবশ্যই নিশ্চিত করতে হবে যে শরণার্থীদের প্রত্যাবাসন ও অভ্যন্তরীণ বাস্তুচ্যুত ব্যক্তিদের প্রত্যাবর্তন কেবল তখনই শুরু করা হবে, যখন নিরাপদে, স্বেচ্ছায় ও মর্যাদার সঙ্গে ফেরা সম্ভব এবং নাগরিকত্বসহ মানবাধিকারের সুস্পষ্ট সুরক্ষা নিশ্চিত হবে। বর্তমান পরিস্থিতিতে প্রত্যাবর্তন সম্ভব নয়;

ঞ. সব সদস্যরাষ্ট্রের মিয়ানমারের সঙ্গে সম্পৃক্ততা ও ত্রাণ সহায়তা, উন্নয়ন ও সংস্কার প্রকল্প, মানবাধিকার–বিষয়ক উদ্বেগগুলো চিহ্নিত করা ও জবাবদিহি নিশ্চিত করা এবং পরিষ্কারভাবে বৈষম্যহীনতা ও সমতার নীতিগুলো মেনে চলার বিষয়টি নিশ্চিত করা উচিত। মিয়ানমারে যে মানবিক সহায়তা দানকারী সংস্থাগুলো কাজ করছে, তাদের যথেষ্ট তহবিল পাওয়ার বিষয়টি রাষ্ট্রগুলোর নিশ্চিত করা উচিত। ১. সংস্কারের দৃশ্যমান প্রতিশ্রুতি, ২. সংস্কার সাধনে আন্তর্জাতিক সহযোগিতা, এবং ৩. আন্তর্জাতিক আইন অনুসারে সংঘটিত অপরাধের জবাবদিহি নিশ্চিত করতে আন্তর্জাতিক ব্যবস্থা গ্রহণ ও সহযোগিতা না করা পর্যন্ত সদস্যরাষ্ট্রগুলোর সেনাবাহিনী ও অন্য নিরাপত্তা বাহিনীগুলোর প্রতি বিদ্যমান সমর্থন স্থগিত করা উচিত;

ট) নিরাপত্তা পরিষদ অস্ত্র নিষেধাজ্ঞা আরোপ না করলেও শান্তি ও নিরাপত্তা বিঘ্নিত করতে এবং আন্তর্জাতিক আইন অনুসারে গুরুতর অপরাধ সংঘটনে অস্ত্রের ব্যবহারের বিষয়টি বিবেচনায় নিয়ে সদস্যরাষ্ট্রগুলোর উচিত মিয়ানমারে অস্ত্র সরবরাহের অনুমতি না দেওয়া;

ঠ. ইউরোপীয় ইউনিয়ন, আসিয়ানসহ সংশ্লিষ্ট আঞ্চলিক সংগঠনগুলোর উচিত মিয়ানমারের সঙ্গে টেকসই সম্পৃক্ততা এবং একটি আন্তর্জাতিক বিচার ব্যবস্থার প্রতি সমর্থন দিয়ে এমন কৌশল অবলম্বন করা, যার মাধ্যমে মিয়ানমারে আন্তর্জাতিক আইন অনুসারে অপরাধ সংঘটনকারীদের জবাবদিহি নিশ্চিত করা যায়;

ড. সদস্যরাষ্ট্রগুলোর উচিত মিয়ানমারে আন্তর্জাতিক আইন অনুসারে অভিযুক্ত গুরুতর অপরাধ সংঘটনকারীদের বিরুদ্ধে তদন্ত ও বিচারের ব্যবস্থা করতে আইনি পদক্ষেপ ও বিচারের অনুশীলন করা;

ঢ. জাতিসংঘের কর্তব্য ভুক্তভোগীদের সমর্থনে একটি ট্রাস্ট তহবিল গঠন করা। তার মাধ্যমে ভুক্তভোগীদের মনোসামাজিক সমর্থন, আইনি সহযোগিতা, জীবনযাত্রাসহ অন্যান্য সহায়তা সহযোগিতা করা। ভুক্তভোগীদের সঙ্গে আলোচনা করে সব ট্রাস্ট তহবিল প্রকল্পের পরিকল্পনা প্রণয়ন করতে হবে। (শেষ)

ইংরেজি থেকে অনূদিত