সাহসী নারী পুরস্কৃত

‘পুলিশ ও লোকাল ট্রেন কদাচ সময়মতো আসে’—প্রমথনাথ বিশীর এই শ্লেষোক্তি সমর্থন না করা লোক কদাচ মিলবে। কিন্তু এটিও সত্য যে পুলিশ ভবিষ্যদ্‌দ্রষ্টা নয়। সদস্যসংখ্যার দিক থেকে তাদেরও সীমাবদ্ধতা আছে। কোথায় কখন চুরি, ডাকাতি, ছিনতাই, লুটপাট, খুন, জখম হবে তা সব ক্ষেত্রেই আগেভাগে তারা জেনে যাবে—এমনটা আশা করা অন্যায়। আবার সদস্যসংখ্যার সীমাবদ্ধতা এবং ক্ষমতাধর রাজনীতিকদের প্রভাবও তাদের ‘সময়মতো’ হাজির হওয়ার পথে বিরাট বাধা। এ কারণে যেকোনো অপরাধ সংঘটনের প্রাথমিক পর্যায়ে যদি সাধারণ মানুষ পুলিশ আসার অপেক্ষায় না থেকে সাহস করে প্রতিরোধ গড়ে তুলতে পারে, তাহলে সেটিই বহু সমস্যার আগাম সমাধান দিতে পারে।

সম্প্রতি ঢাকায় অন্তরা রহমান নামের এক নারী এই ধরনের একটি সাহসিকতার স্বাক্ষর রেখেছেন। যাত্রাবাড়ী এলাকায় এক ছিনতাইকারী তাঁর হাতব্যাগ নিয়ে দৌড় দিয়েছিল। তিনি সাহস করে তাকে ধাওয়া করেছিলেন। ছুটতে ছুটতে ছিনতাইকারী চলন্ত বাসে উঠে গেলে অন্তরাও সেই বাসে উঠে তাকে ধরে ফেলেন। পরে সাহায্য নেন টহল পুলিশের। ছিনতাইকারীর বিরুদ্ধে পরে তিনি যাত্রাবাড়ী থানায় মামলা করেন।

এর চেয়ে আনন্দের খবর হলো, ঢাকা মহানগর পুলিশ (ডিএমপি) অন্তরার এই সাহসিকতাকে স্বীকৃতি দিয়ে তাঁকে পুরস্কৃত করেছে। ডিএমপি প্রতি মাসে বীরত্বপূর্ণ ও ভালো কাজের জন্য পুলিশ সদস্যদের পুরস্কৃত করে। পুলিশ সদস্যদের পাশাপাশি প্রথমবারের মতো পুরস্কৃত করা হলো অন্তরাকে।
ডিএমপির পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, অন্তরা রহমান বীরত্বপূর্ণ সাহসিকতার জন্য দৃষ্টান্ত হয়ে থাকবেন। অন্তরার এই সাহসিকতা এবং পুলিশের এই স্বীকৃতি প্রশাসন ও সাধারণ মানুষের দূরত্ব ঘোচানোর ক্ষেত্রে একধরনের ইতিবাচক মনস্তাত্ত্বিক প্রভাব ফেলবে।

যেহেতু আইনশৃঙ্খলা রক্ষার দায়িত্ব পুলিশের; তাই ছিনতাই-ডাকাতি প্রতিরোধের দায় অবশ্যই তাদের। এসব অপরাধ দমনে ব্যর্থ হলে জবাবদিহি তাদেরই করতে হবে। সমাজে চুরি ও ছিনতাইয়ের মতো কিছু ঘটনা ঘটতেই পারে। কিন্তু সেগুলো যদি বিচ্ছিন্ন ঘটনা না হয়ে সংঘবদ্ধ চক্রের পরিকল্পিত অপরাধের অংশ হয়ে যায়, তাহলে সেটা সমাজের জন্য খুবই উদ্বেগের বিষয়। এই ধরনের চক্রকে নিষ্ক্রিয় করতে সাধারণ মানুষকে নিয়েই পুলিশের এগোতে হবে। অন্তরা রহমানকে পুরস্কৃত করার মধ্য দিয়ে তাদের সেই ধরনের প্রচেষ্টার প্রতিফলন দেখা গেল। এটি অপরাধ দমনচেষ্টার ক্ষেত্রে খুবই আশাব্যঞ্জক দিক।