পোকা দমনে আলোক ফাঁদ

যশোরের ঝিকরগাছা উপজেলায় আলোক ফাঁদ প্রযুক্তি ব্যবহার করে আমন ধানে ক্ষতিকর পোকামাকড়ের উপস্থিতি পর্যবেক্ষণ ও দমন করার খবরটি আশান্বিত হওয়ার মতোই। বৃহস্পতিবার প্রথম আলোয় প্রকাশিত প্রতিবেদন অনুযায়ী, কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের সহায়তায় ঝিকরগাছা উপজেলার কৃষকেরা ১০ সেপ্টেম্বর থেকে ৩৪টি ব্লকে আলোক ফাঁদ প্রযুক্তির ব্যবহার শুরু করেছেন এবং তা ১৫ অক্টোবর পর্যন্ত চলবে। আলোক ফাঁদ প্রযুক্তিটি হচ্ছে রাতের বেলায় খেতে বৈদ্যুতিক বাল্ব টাঙানো হয়। বাল্বের নিচে পাত্র রাখা হয়। ওই পাত্রের মধ্যে ডিটারজেন্ট বা কেরোসিনমিশ্রিত পানি থাকে। আকৃষ্ট হয়ে পোকামাকড় আলোর কাছে আসে এবং পাত্রের পানির মধ্যে পড়ে মারা যায়। ওই পোকামাকড় দেখে ক্ষতিকর পোকামাকড়ের উপস্থিতি নির্ণয় করা হয়। ঝিকরগাছা উপজেলার কৃষকেরা এরই মধ্যে এই প্রযুক্তি ব্যবহারের সুফল পেতে শুরু করেছেন।

ধানগাছে পোকামাকড়ের আক্রমণ স্বাভাবিক হলেও ফলনের জন্য তা খুবই ক্ষতিকর। ধানগাছে বাদামি ঘাসফড়িং, সবুজ ঘাসফড়িং, পাতা মোড়ানো পোকা, গান্ধী পোকা, মাজরা পোকাসহ বিভিন্ন ক্ষতিকর পোকা আক্রমণ করে। এর মধ্যে বাদামি ঘাসফড়িং বা কারেন্ট পোকা সবচেয়ে ক্ষতিকর। এ পোকা যে গাছে আক্রমণ করে, সেই গাছের শিষ সম্পূর্ণভাবে নষ্ট হয়ে যায়। এর ফলে ফলন কমে যায়। অনেক সময় ফলন নেমে আসতে পারে শূন্যের কোঠায়।

সাধারণত ধানে কাইচ থোড় আসার আগে এসব পোকামাকড়ের আক্রমণ দেখা দেয়। আমাদের দেশে এসব পোকামাকড় মারার জন্য কৃষকেরা সাধারণত বিষাক্ত কীটনাশক ব্যবহার করেন। অথচ বাংলাদেশ ধান গবেষণা ইনস্টিটিউটের (বিআরআরআই) এক গবেষণার তথ্য অনুযায়ী, ধান চাষে কীটনাশক ব্যবহার করে কৃষকেরা কোনো সুবিধা পান না। উৎপাদন তো বাড়েই না, বরং উৎপাদন ব্যয় বাড়ে, আর এর পাশাপাশি পরিবেশও দূষিত হয়। এ ক্ষেত্রে আলোক ফাঁদ প্রযুক্তি ভালো বিকল্প হিসেবে বিবেচিত হতে পারে। কেননা, এতে খরচ কম হয় এবং পরিবেশবান্ধবও বটে।

ঝিকরগাছা উপজেলার কৃষকদের অনুসরণে দেশের অন্যান্য স্থানের ধানচাষিরা ধানগাছের পোকামাকড় দমনে আলোক ফাঁদ প্রযুক্তি ব্যবহার করতে পারেন। এ জন্য এই প্রযুক্তির ব্যবহার ও উপকারিতা সম্পর্কে কৃষকদের মাঝে প্রচারণা চালাতে হবে। এ ব্যাপারে কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরকে কৃষকদের সহায়তায় এগিয়ে আসতে হবে। আলোক ফাঁদ প্রযুক্তি ছাড়াও ধানের পোকামাকড় দমনের জন্য আরও বেশ কিছু পরিবেশবান্ধব প্রযুক্তি রয়েছে, সেসব প্রযুক্তি সম্পর্কে কৃষকদের জানাতে হবে এবং জনপ্রিয় করার ব্যবস্থা করতে হবে। মনে রাখতে হবে, ধান আমাদের প্রধান কৃষিজাত ফসল। তাই এর উচ্চ ফলনের ব্যাপারে সরকারসহ সবাইকে আরও আন্তরিক হতে হবে।