দুদকের সতর্কতা

দুর্নীতিবিরোধী জাতীয় প্রতিষ্ঠান দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) একটি জনসতর্কতা সৃষ্টিমূলক পদক্ষেপ নিয়েছে, যা কিছু ভাবনা ও প্রশ্নের উদ্রেক করে। প্রতিষ্ঠানটির জনসংযোগ বিভাগ থেকে গত সোমবার সংবাদমাধ্যমগুলোর দপ্তরে একটি সংবাদ বিজ্ঞপ্তি পাঠানো হয়েছে। সেখানে বলা হয়েছে, দুদক তার নিজস্ব গোয়েন্দা তথ্য ও বিভিন্ন ভুক্তভোগী ব্যক্তির কাছ থেকে জানতে পেরেছে, এক বা একাধিক সংঘবদ্ধ প্রতারক চক্রের লোকেরা দুদকের কর্মকর্তার পরিচয় দিয়ে অবসরপ্রাপ্ত সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারী, ব্যবসায়ী, বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তা, ব্যাংক-বিমার কর্মকর্তাসহ বিভিন্ন পেশাজীবী ব্যক্তিকে বলছে, তাঁদের নামে দুদকে অভিযোগ আছে। অভিযোগ থেকে অব্যাহতি দেওয়া হবে—এমন প্রতিশ্রুতি দিয়ে তারা ‘অনৈতিক আর্থিক সুবিধা দাবি করছে’ বলে দুদকের সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে সতর্ক করা হয়েছে।

দুদকের সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে আরও বলা হয়েছে, সংস্থাটির কাছে কোনো ব্যক্তির বিরুদ্ধে অভিযোগ থাকলে সংস্থাটি থেকে অভিযুক্ত ব্যক্তির সঙ্গে টেলিফোনে বা মুঠোফোনে যোগাযোগ করার কোনো প্রশাসনিক ও আইনি সুযোগ নেই। দুদকের অনুসন্ধান বা তদন্তসংক্রান্ত সব যোগাযোগ লিখিত চিঠির মাধ্যমে করা হয়। তা ছাড়া দুদকের মতো সংবিধিবদ্ধ সংস্থায় কোনো ব্যক্তির একক ইচ্ছায় কারও অভিযুক্ত হওয়ার বা অভিযোগ থেকে অব্যাহতি পাওয়ার কোনো সুযোগ নেই। দুদকের সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে প্রতারকদের এ ধরনের অবৈধ কর্মকাণ্ড সম্পর্কে সবাইকে সতর্ক থাকার অনুরোধ জানানো হয়েছে। এ ধরনের কোনো ঘটনা ঘটলে নিকটস্থ থানা অথবা র‍্যাব কার্যালয় অথবা দুদকের পরিচালককে জানানোর অনুরোধ করা হয়েছে এবং সংশ্লিষ্ট টেলিফোন ও মুঠোফোনের নম্বর দেওয়া হয়েছে। দুদকের এই পদক্ষেপ নিশ্চয়ই জনমুখী এবং এর ফলে হয়তো অনেক মানুষ প্রতারণা ও হয়রানির ব্যাপারে সতর্ক হবে। তবে ভাবনার বিষয় হলো দুদকের মতো সংবিধিবদ্ধ জাতীয় প্রতিষ্ঠানের নাম ভাঙিয়ে লোকজনকে দুর্নীতির অভিযোগ থেকে অব্যাহতি দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়ে টাকাপয়সা আদায় করা সম্ভব—এমন উদ্ভাবনী প্রতিভাধর প্রতারক চক্র কীভাবে গড়ে উঠতে পারল? এমন দুঃসাহস তারা কোথা থেকে কীভাবে পেল?

কোনো কোনো আইন প্রয়োগকারী সংস্থার সদস্য বলে পরিচয় দিয়ে ভয় দেখিয়ে লোকজনের কাছে টাকাপয়সা দাবি করা ও আদায় করার ঘটনা এই দেশে খুব বিরল নয়। এমন প্রতারণা ঘটতে পারে এই কারণে যে আইন প্রয়োগকারী সংস্থার কিছু সদস্য অনৈতিক পন্থায় লোকজনের কাছ থেকে আর্থিক সুবিধা আদায় করেন—এমন অভিযোগ লোকমুখে বা সংবাদমাধ্যমে প্রচারিত হয়। দুদকের মতো সংস্থা যখন নিশ্চিতভাবে জানতে পেরেছে যে দুদকের নাম ভাঙিয়ে লোকজনের কাছ থেকে অনৈতিক আর্থিক সুবিধা নিতে এক বা একাধিক সংঘবদ্ধ চক্র দাঁড়িয়ে গেছে, তখন সংস্থাটির নিজের অভ্যন্তরেই তীক্ষ্ণ সতর্ক দৃষ্টিতে তাকানো জরুরি হয়ে উঠেছে। দুদককে খুব ভালোভাবে খতিয়ে দেখতে হবে, সংস্থাটির কর্মকর্তা-কর্মচারীদের মধ্যে নৈতিকতার কোনো ঘাটতি আছে কি না, থাকলে তা সম্পূর্ণভাবে দূর করতে হবে। দুদক নিজের নৈতিকতার সর্বোচ্চ মানদণ্ড নিশ্চিত করলে তার নাম ভাঙিয়ে প্রতারণা করা বা প্রতারিত হওয়ার মতো পরিস্থিতি অসম্ভব হবে।