সৌদিফেরত নারীদের পুনর্বাসন

গৃহকর্মীর কাজ নিয়ে আমাদের নারীদের সৌদি আরব যাওয়া অব্যাহত আছে। তাঁরা যাচ্ছেন ভাগ্য পরিবর্তনের আশা নিয়ে। কিন্তু সে দেশে গিয়ে গৃহকর্তাদের শারীরিক-মানসিক ও যৌন নির্যাতন সইতে না পেরে আর্থিক ক্ষতির শিকার হয়ে, মানসিকভাবে পর্যুদস্ত হয়ে নারীদের ফিরে আসাও অব্যাহতভাবে চলছে। সর্বশেষ গত মঙ্গলবার ফিরে এসেছেন ৪২ জন। এর আগে ১৩ সেপ্টেম্বর ফিরে এসেছেন ৬৫ জন।

প্রশ্ন হলো, ভাগ্য পরিবর্তনের স্বপ্ন নিয়ে সৌদি আরব গিয়ে উল্টো ভাগ্যাহত হয়ে যাঁরা ফিরে আসতে বাধ্য হচ্ছেন, সেই নারীরা স্বদেশে কী পরিস্থিতির মুখে পড়ছেন। বাংলাদেশ মহিলা অভিবাসী শ্রমিক অ্যাসোসিয়েশনের পরিচালক সুমাইয়া ইসলামের ভাষ্য, সৌদি আরবে নির্যাতনের শিকার হয়ে ফিরে আসা নারীদের অনেকে নিজের পরিবারের কাছে যেতে চান না। যাঁরা যেতে চান, তাঁদের অনেককে তাঁর পরিবার গ্রহণ করতে চায় না।

এই পরিস্থিতি যারপরনাই দুঃখজনক। যেসব নারী স্বজনদের কাছে ফিরে যেতে চান না, তাঁরা হয়তো নিজেদের পরিত্যক্ত ভাবেন। তাঁরা সম্ভবত মনে করেন, তাঁরা ফিরে গেলে পরিবারের সামাজিক সম্মান ক্ষুণ্ন হবে। তা যদি হয়, তাহলে আমাদের ভেবে দেখা উচিত, কী গভীর হতাশায় নিমজ্জিত হলে মানুষ নিজেকে এমন পরিত্যক্ত মনে করতে পারে। অন্যদিকে, যেসব নারীকে তাঁদের পরিবার আর গ্রহণ করতে চায় না, তাঁরা বড় দুর্দশায় পড়েন, আশ্রয়হীন হয়ে পড়েন। উভয় পরিস্থিতিতেই তাঁদের জন্য রাষ্ট্রীয় বা প্রাতিষ্ঠানিক সহযোগিতা প্রয়োজন। কেউ কেউ বলেন, তাঁদের দীর্ঘমেয়াদি পুনর্বাসনের উদ্যোগ নেওয়া সরকারের দায়িত্ব।

প্রবাসীকল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের সূত্রে জানা গেছে, সৌদিফেরত নারীদের জন্য এই মুহূর্তে সরকারের কোনো পুনর্বাসন কার্যক্রম নেই। সৌদি আরব থেকে ফিরে কোনো নারী গৃহকর্মী ঢাকা বিমানবন্দরের প্রবাসীকল্যাণ ডেস্কের কাছে সাহায্য চাইলে তাঁকে হাসপাতালে ভর্তি করানো বা বাড়িতে পৌঁছে দেওয়ার ব্যবস্থা করা হয়। এ ছাড়া তাঁদের জন্য সরকারের আর কোনো উদ্যোগ নেই। আমরা মনে করি, তাঁদের জন্য সরকারি কিছু ব্যবস্থা থাকা উচিত। প্রথমত, উপলব্ধি করতে হবে যে সৌদি আরবে তাঁদের তিক্ত অভিজ্ঞতার দায় তাঁদের নিজেদের নয়। তাঁদের আর্থিক ক্ষতি যা-ই হোক, শারীরিক ও মানসিক ক্ষতি বিরাট; সামাজিক মর্যাদার ক্ষতি অপূরণীয়। তাঁদের দীর্ঘমেয়াদি পুনর্বাসনের ব্যবস্থা করা প্রয়োজন, প্রয়োজন নানা রকমের ভোকেশনাল প্রশিক্ষণ দিয়ে কর্মসংস্থানে সহায়তা করা।

তাঁদের আর্থিক ক্ষতিপূরণ দিতে সংশ্লিষ্ট রিক্রুটিং এজেন্সিগুলোকে বাধ্য করা উচিত।