পুকুর ও ফসলি জমি অধিগ্রহণ

বিদ্যুৎ বাদ দিয়ে আধুনিক জীবনযাত্রা যেহেতু কল্পনা করা যায় না, সেহেতু দেশের প্রতিটি প্রত্যন্ত এলাকাতেও বিদ্যুৎ-সংযোগ যাওয়া জরুরি। বিদ্যুৎ পৌঁছালে একেকটি এলাকা দ্রুত উন্নত হয়। কৃষি থেকে শুরু করে সব ধরনের খাতে গতি আসে। কিন্তু যে এলাকার মানুষের কল্যাণের জন্য বিদ্যুৎ দেওয়া হবে, সেই বিদ্যুৎ অবকাঠামো যদি তাদেরই অসুবিধার কারণ হয়ে দাঁড়ায়, তাহলে সেটা গ্রহণযোগ্য হতে পারে না। সম্প্রতি রাজবাড়ী ও মুন্সিগঞ্জে এ ধরনের দুটি অনভিপ্রেত ঘটনা লক্ষ করা গেছে। প্রথম আলোয় প্রকাশিত প্রতিবেদনে দেখা গেছে, রাজবাড়ী পৌরসভার বিনোদপুর এলাকায় পুকুর ভরাট করে বিদ্যুতের সাবস্টেশন নির্মাণ করা হচ্ছে। স্থানীয় মানুষ এর প্রবল আপত্তি করলেও তাদের কথা গ্রাহ্য করা হচ্ছে না। অন্যদিকে, মুন্সিগঞ্জের গজারিয়ার ইমামপুর ইউনিয়নে তিন ফসলি জমিতে কয়লাভিত্তিক তাপবিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণ করা হচ্ছে। সেটি ঠেকাতে স্থানীয় লোকজন মিছিল ও সমাবেশ করেছে।

রাজবাড়ীতে পুকুর ভরাট করে বিদ্যুতের সাবস্টেশন নির্মাণের ক্ষেত্রে একদিকে যেমন আইনের লঙ্ঘন হচ্ছে, তেমনি পরিবেশ ও জনস্বার্থের বিষয়টিও উপেক্ষিত হচ্ছে। প্রকাশিত খবর অনুযায়ী, ওয়েস্ট জোন পাওয়ার ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানি লিমিটেড (ওজোপাডিকো) এই সাবস্টেশন নির্মাণ করছে। এ জন্য ১৮ সেপ্টেম্বর থেকে পাওয়ার হাউসের পুকুর নামে পরিচিত পুকুরটিতে বালু ফেলা শুরু হয়েছে। পুকুরপাড়ের কয়েকটি বড় গাছও কেটে ফেলা হয়েছে। এলাকাবাসীর আশঙ্কা, পুকুর ভরাট করার ফলে শহরের পানিনিষ্কাশনে সমস্যা হবে। কেননা, বৃষ্টির পানি এই পুকুরেই এসে জমা হয়। পুকুর ভরাট হলে বর্ষা মৌসুমে জলাবদ্ধতা দেখা দেবে। প্রাকৃতিক জলাধার সংরক্ষণ আইন-২০০০ অনুযায়ী, কোনো পুকুর, জলাশয়, নদী, খাল ইত্যাদি ভরাট করা বেআইনি। এ ছাড়া পুকুর ভরাট করার জন্য প্রতিষ্ঠানটি পরিবেশ অধিদপ্তরেরও কোনো ছাড়পত্র নেয়নি।

অন্যদিকে মুন্সিগঞ্জের গজারিয়ার ষোলআনী ও দৌলতপুর গ্রামের বাসিন্দারা বলছেন, বিদ্যুৎকেন্দ্র হোক সেটা তাঁরাও চান, কিন্তু যে জমিতে বছরে তিনবার ফসল ফলে, সেই জমি নষ্ট করে নয়। তাঁদের অভিযোগ, সরকারি লোকদের ভুল বুঝিয়ে সেখানেই তাপভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণের ষড়যন্ত্র করছে একটি স্বার্থান্বেষী মহল। যদি এসব জমিতে বিদ্যুৎকেন্দ্র করা হয়, ফসলি জমি নষ্ট হবে। পরিবেশ মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হবে। তিন ফসলি জমিতে চাষাবাদ করে যঁারা জীবিকা নির্বাহ করেন, এমন অনেকেই তঁাদের জীবিকা হারাবেন।

সরকারের প্রতিটি উন্নয়ন প্রকল্পের আগে প্রকৃতি, পরিবেশ ও সাধারণ জনগণের সুবিধা–অসুবিধার বিষয়গুলো বিবেচনায় নেওয়া উচিত। উন্নয়ন অনেক ক্ষেত্রেই পরিবেশ ও স্থানীয় জনগণের ওপর প্রভাব ফেলে, কিন্তু সেই প্রভাব বা ক্ষতি যাতে ন্যূনতম হয়, তা সব সময় বিবেচনায় রাখা জরুরি। যাদের সেবায় সরকার কাজ করবে তারাই যদি ক্ষতির শিকার হয়, তাহলে সে উন্নয়নকে কার্যকর উন্নয়ন হিসেবে বিবেচনার সুযোগ নেই।