সর্বোত্তম আমল আল্লাহর প্রতি মহব্বত

মহব্বত, প্রেম, প্রীতি, ভালোবাসা খোদার সৃষ্ট প্রকৃতিরই অংশ। মানবীয় গুণাবলি বিকাশে ও মনুষ্য চরিত্রের উৎকর্ষ সাধন বা সুকুমারবৃত্তি অর্জনের মূলে রয়েছে বিশ্বাস, আশা ও ভালোবাসা। সৃষ্টিকুল কায়েনাত ভালোবাসারই ফল। হাদিসে কুদসিতে রয়েছে, রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, আল্লাহ তাআলা বলেন, ‘আমি ছিলাম গোপন ভান্ডার; ভালোবাসলাম প্রকাশ হতে, তাই সৃজন করলাম সমুদয় সৃষ্টি।’ আল্লাহর কুদরতের জগতে ভালোবাসাই হলো প্রথম সম্পাদিত ক্রিয়া বা কর্ম।

সৃষ্টির আদিতে বা সূচনায় স্রষ্টার ভালোবাসা, সৃষ্টির অন্তে বা পরিণতিতে সৃষ্টির ভালোবাসা; ইমানের শর্ত নবীজি (সা.)–এর ভালোবাসা, নবীজি (সা.)–এর ভালোবাসার প্রমাণ সুন্নতের প্রতি ভালোবাসা; জীবনের লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য আল্লাহ ও নবী (সা.)–এর ভালোবাসা। হাদিস শরিফে প্রিয় নবীজি (সা.) বলেন, ‘যে ব্যক্তি আল্লাহর জন্য মহব্বত করে ও আল্লাহর জন্য ঘৃণা করে এবং আল্লাহর জন্য দান করে ও আল্লাহর জন্য বিরত থাকে; অবশ্যই তার ইমান পূর্ণ হলো।’ (আবুদাউদ: ৪০৬৪)।

মহব্বতের ধারাবাহিকতা হলো আল্লাহর প্রতি মহব্বত, রাসুলের প্রতি মহব্বত, আল্লাহ ও রাসুলের প্রিয়জনদের প্রতি মহব্বত, পিতা-মাতার প্রতি মহব্বত, স্বামী-স্ত্রীর প্রতি মহব্বত, সন্তানের প্রতি মহব্বত, ভাইবোনের প্রতি মহব্বত, আত্মীয়স্বজনের প্রতি মহব্বত, পাড়া-প্রতিবেশীর প্রতি মহব্বত, স্বদেশ ও স্বজাতির প্রতি মহব্বত, বিশ্ববাসীর প্রতি মহব্বত, সমগ্র সৃষ্টিজগতের প্রতি মহব্বত।

আল্লাহকে ভালোবাসার জন্য রাসুল (সা.)-এর পথ অনুসরণ করতে হবে। এ প্রসঙ্গে কোরআনে আছে, ‘যদি তোমরা আল্লাহকে ভালোবাসো, তবে আমার (নবীর) অনুসরণ করো; তাহলে আল্লাহ তোমাদের ভালোবাসবেন এবং তোমাদের পাপসমূহ মার্জনা করবেন।’ (আলে ইমরান: ৩১)।

আল্লাহ কাদের ভালোবাসেন আর ভালোবাসেন না, তা পবিত্র কোরআনে বিধৃত হয়েছে। ‘আল্লাহ সৎকর্মশীলদের ভালোবাসেন।’ (সুরা বাকারা: ১৯৫)। ‘আল্লাহ পবিত্রদের ভালোবাসেন।’ (সুরা তাওবা: ১০৮)। ‘আল্লাহ তওবাকারীদের ভালোবাসেন।’ (সুরা বাকারা: ২২২)। ‘আল্লাহ মুত্তাকিদের ভালোবাসেন।’ (সুরা আলে ইমরান: ৭৬)। ‘আল্লাহ ধৈর্যশীলদের ভালোবাসেন।’ (সুরা আলে ইমরান: ১৪৬)। ‘আল্লাহ (তাঁর ওপর) নির্ভরকারীদের ভালোবাসেন।’ (সুরা আলে ইমরান: ১৫৯)। ‘আল্লাহ ন্যায়নিষ্ঠদের ভালোবাসেন।’ (সুরা মায়িদা: ৪২)।

‘আল্লাহ সীমা লঙ্ঘনকারীদের ভালোবাসেন না।’ (সুরা বাকারা: ১৯০)। ‘আল্লাহ অকৃতজ্ঞদের ভালোবাসেন না।’ (সুরা আলে ইমরান: ৩২)। ‘আল্লাহ জালিমদের ভালোবাসেন না।’ (সুরা আলে ইমরান: ৫৭)। ‘আল্লাহ অহংকারীদের ভালোবাসেন না।’ (সুরা নাহল: ২৩)। ‘আল্লাহ অপব্যয়কারীদের ভালোবাসেন না।’ (সুরা আনআম: ১৪১)। ‘আল্লাহ আমানতের খেয়ানতকারীদের ভালোবাসেন না।’ (সুরা আনফাল: ৫৮)। ‘আল্লাহ ফ্যাসাদকারীদের ভালোবাসেন না।’ (সুরা মায়িদা: ৬৪)।

রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, ‘তোমাদের কেহ ততক্ষণ পর্যন্ত পূর্ণাঙ্গ মোমিন হবে না, যতক্ষণ না আমি তার নিকট তার সন্তান অপেক্ষা, তার পিতা অপেক্ষা এবং সকল মানুষ অপেক্ষা বেশি প্রিয় (ভালোবাসার বস্তু) না হই।’ (বুখারি)। তিনি আরও বলেন, ‘যে যাকে ভালোবাসে, সে (পরকালে) তার সাথে থাকবে।’ (মুসলিম)। হাদিসে আরও রয়েছে, ‘যে আমার সুন্নতকে ভালোবাসে, সে অবশ্যই আমাকে ভালোবাসে; আর যে আমাকে ভালোবাসে সে জান্নাতে আমার সঙ্গেই থাকবে।’ (নাসায়ি)। নবীজি (সা.) বলেন, ‘সর্বোত্তম আমল হলো আল্লাহর জন্য ভালোবাসা।’ (আবুদাউদ)। ইসমে আজম বা মহানাম, শক্তির আধার শক্তিময়ের গুণ। এর মাঝে লুকায়িত আছে মহাশক্তি। অসাধ্য সাধন করা যায় ইসমে আজম আমল দ্বারা। কী এই ইসমে আজম? কোথায় আছে ইসমে আজম? এই বিষয়ে হাদিসে ও কিতাবে বিভিন্ন বর্ণনা রয়েছে। সাকল্যে ১০টি মত পাওয়া গেলেও এর সুরাহা হয়নি। ইসমে আজম সম্পর্কে হজরত সুফি খান বাহাদুর আহ্ছানউল্লাহ (র.) আমার জীবনধারা গ্রন্থে লিখেছেন, ‘মহব্বতের সহিত যেই নামই ডাকিবে, তাহাই ইসমে আজম।’ (কোরআন ও হাদিসে বর্ণিত নবী-রাসুল (আ.) গণের দোয়া ও মোনাজাত, পৃষ্ঠা: ২৫৫-২৫৯)।

হজরত শেখ সাদী (র.) বলেন, ‘বন্ধু আমার অপেক্ষা আমার বেশি নিকটে; আশ্চর্য যে আমি তার কাছ থেকে বহু দূরে, কী করব? কাকে বলব? যে বন্ধু; আমার কাজে ব্যস্ত, আর আমি নিষ্ক্রিয়।’ কোরআনে আল্লাহ তাআলা বলেন, ‘ওয়া নাহনু আকরাবু ইলাইহি মিন হাবলিল ওয়ারিদ। অর্থ: আমি তার ঘাড়ের রগেরও অধিক নিকট।’ (সুরা-৫০ কাফ, আয়াত: ১৬)। (আমি তার অধিক নিকটে কিন্তু তোমরা দেখতে পাও না।’ (সুরা-৫৬ ওয়াকিআহ, আয়াত: ৭৫)।

মুফতি মাওলানা শাঈখ মুহাম্মাদ উছমান গনী বাংলাদেশ জাতীয় ইমাম সমিতির যুগ্ম মহাসচিব ও আহ্ছানিয়া ইনস্টিটিউট অব সুফিজমের সহকারী অধ্যাপক

smusmangonee@gmail,com