পাঁচ কিশোরের অন্যায় শাস্তি

ঠাকুরগাঁওয়ে এক স্কুলছাত্রীকে উত্ত্যক্ত করার প্রতিবাদ করেছিল পাঁচ কিশোর স্কুলছাত্র। এ জন্য তাদের প্রশংসা প্রাপ্য, কিন্তু উল্টো তাদেরই শাস্তি দেওয়া হয়েছে। শাস্তিটাও বেশ অপমানজনক: সালিস ডেকে লোকজনের সামনে তাদের মাথা ন্যাড়া করে দেওয়া হয়েছে। এই অন্যায় আচরণের মানসিক আঘাত কিশোর মনের ওপর অত্যন্ত নেতিবাচক হতে পারে।

ব্যারিস্টার জমির উদ্দিন সরকার উচ্চবিদ্যালয়ের এক ছাত্রীকে প্রায়ই উত্ত্যক্ত করত মোহাম্মদ লিটন নামের এক বখাটে ছেলে, যে ওই বিদ্যালয়ের ছাত্র নয়। গত শনিবার ছাত্রীটি বিদ্যালয়ে যাওয়ার পথে বখাটে ছেলেটি তাকে উত্ত্যক্ত করতে গেলে ভেলারহাট উচ্চবিদ্যালয় নামের অন্য এক বিদ্যালয়ের পাঁচ ছাত্র প্রতিবাদ করে, বখাটে চলে যায়। কিন্তু পরদিন ব্যারিস্টার জমির উদ্দিন সরকার উচ্চবিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক আবদুল জব্বার সালিস ডেকে প্রতিবাদকারী পাঁচ কিশোরের মাথা ন্যাড়া করে দেন আর উত্ত্যক্তকারী মোহাম্মদ লিটনকে ছেড়ে দেন এই বলে যে ছেলেটি অসুস্থ। অসুস্থ ছেলে রাস্তায় মেয়েদের উত্ত্যক্ত করে—এটাও লক্ষ করার বিষয়। সে শাস্তি না পেয়ে আরও উৎসাহিত হবে, এতে সন্দেহ নেই। কিন্তু প্রতিবাদকারী পাঁচ কিশোর যে ভীষণ হতাশ ও ক্ষুব্ধ হয়েছে, এ কথা বলাই বাহুল্য।

প্রকৃতপক্ষে দুটি বিদ্যালয়ের কৃর্তপক্ষের রেষারেষির শিকার হয়েছে ওই পাঁচ কিশোর। এটা খুবই অন্যায়। বয়স্ক লোকদের মধ্যকার বৈরী সম্পর্কের জেরে শিশু–কিশোরদের এ রকম অমানবিক আচরণের শিকার হতে হলে বুঝতে হবে বিদ্যালয় দুটির দিকে সরকারি প্রশাসনের নজর দেওয়া প্রয়োজন। প্রথমত, মেয়েদের উত্ত্যক্ত করা যে দণ্ডনীয় ফৌজদারি অপরাধ—এই সত্যটা সবাইকে কঠোরভাবে স্মরণ করিয়ে দিতে হবে। দ্বিতীয়ত বিদ্যালয় দুটোর কর্তৃপক্ষের মধ্যে বিরোধ বা রেষারেষি মিটিয়ে ফেলতে হবে। ব্যারিস্টার জমির উদ্দিন সরকার উচ্চবিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক আবদুল জব্বার রাজনৈতিকভাবে প্রভাবশালী ব্যক্তি হিসেবে পরিচিত। কিন্তু তাঁকে মনে রাখতে হবে যে তিনি একটি মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক, তাঁর আচরণ এমন হওয়া উচিত নয়, যা শিক্ষকতা পেশার পক্ষে অশোভন।

অন্যায় শাস্তির শিকার পাঁচ স্কুলছাত্রের একজনের বাবা প্রধান শিক্ষক আবদুল জব্বারসহ কয়েকজনকে আসামি করে একটি মামলা দায়ের করেছেন, এবং পুলিশ আবদুল জব্বারকে গ্রেপ্তার করেছে। আইন তার নিজের গতিতে চলুক, বিচার সুষ্ঠু হোক। কিন্তু এই মামলাটি তো পরবর্তী ঘটনার জেরে দায়ের করা হয়েছে। স্কুলছাত্রীকে উত্ত্যক্ত করার অভিযোগে বখাটে লিটন দাসের বিরুদ্ধে আইনানুগ পদক্ষেপ নেওয়া উচিত ছিল। কিন্তু মেয়েটির পরিবার সামাজিক মর্যাদাহানির আশঙ্কায় মামলা করেনি, এমনকি তারা ঘটনাটি প্রকাশও করতে চায় না। অপরাধের শিকার হয়েও আইনি প্রতিকার না চাওয়ার এ ধরনের সামাজিক–পারিবারিক কারণ আমাদের দেশে একটি গভীর সমস্যা। এর সমাধানের জন্য সামাজিক তৎপরতা বাড়ানো প্রয়োজন। আর বখাটেদের উপদ্রব থেকে মেয়েদের রক্ষা করতে ওই পাঁচ কিশোরের মতো প্রতিবাদী সক্রিয়তাকে উৎসাহিত করতে হবে।