একীভূত স্বাস্থ্যসেবা সম্প্রসারণে সরকারি ও বেসরকারি সহযোগিতা

১৪ অক্টোবর ২০১৮, প্রথম আলোর আয়োজনে ও ডিজঅ্যাবলড রিহ্যাবিলিটেশন অ্যান্ড রিসার্চ অ্যাসোসিয়েশনের (ডিআরআরএ) সহযোগিতায় ‘একীভূত স্বাস্থ্যসেবা সম্প্রসারণে সরকারি ও বেসরকারি সহযোগিতা’ শীর্ষক গোলটেবিল বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। অনুষ্ঠানে উপস্থিত আলোচকদের বক্তব্য সংক্ষিপ্ত আকারে এই ক্রোড়পত্রে ছাপা হলো।

যাঁরা অংশ নিলেন
মোহাম্মদ নাসিম: মাননীয় সাংসদ, মন্ত্রী, স্বাস্থ্য ও পরিবারকল্যাণ মন্ত্রণালয়
আ ফ ম রুহুল হক: মাননীয় সাংসদ, সাবেক স্বাস্থ্য ও পরিবারকল্যাণমন্ত্রী
এ এইচ এম এনায়েত হোসেন: অতিরিক্ত মহাপরিচালক, পরিকল্পনা ও উন্নয়ন, স্বাস্থ্য অধিদপ্তর
আ এ মো. মহিউদ্দিন ওসমানী: যুগ্ম প্রধান, পরিকল্পনা বিভাগ, স্বাস্থ্য ও পরিবারকল্যাণ মন্ত্রণালয়
মাজহারুল মান্নান: কনসালট্যান্ট িনউরোলজিস্ট, আইপিএনএ, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়
শাহনেওয়াজ কোরাইশী: কান্ট্রি ডাইরেক্টর, সিবিএম, বাংলাদেশ কান্ট্রি অফিস।
ফরিদা ইয়াসমীন: নির্বাহী পরিচালক, ডিআরআরএ
নূর মোহাম্মদ: লাইন ডাইরেক্টর, এনসিডিসি, স্বাস্থ্য অধিদপ্তর
গোলাম মোস্তফা: প্রজেক্ট ম্যানেজার হ্যান্ডিক্যাপ ইন্টারন্যাশনাল
মারগুব আরেফ জাহাঙ্গীর: হেলথ অফিসার, ইউনিসেফ
মো. খুরশীদ আলম: সিভিল সার্জন, মানিকগঞ্জ মো. শফিকুল ইসলাম: নির্বাহী পরিচালক, সিআরপি
মোছা. মনোয়ারা খাতুন: নির্বাহী পরিচালক, নারীকণ্ঠ উন্নয়ন সংস্থা, সাতক্ষীরা
মো. নাসির উদ্দিন: সিএইচসিপি, আলহাজ মনির আহমেদ চৌধুরী কমিউনিটি ক্লিনিক, পটিয়া, চট্টগ্রাম

সঞ্চালক
আব্দুল কাইয়ুম: সহযোগী সম্পাদক, প্রথম আলো

আলোচনায় সুপারিশ
■ প্রতিবন্ধীদের চিকিৎসা, সহায়ক উপকরণ ও আর্থিক সুবিধা প্রদান করতে হবে
■ চিকিৎসক ও প্রতিবন্ধী পরিচর্যাকারীদের যথাযথ প্রশিক্ষণ দিতে হবে
■ সরকারি–বেসরকারি প্রতিষ্ঠানগুলোর কাজের সমন্বয় ঘটানো জরুরি
■ সপ্তাহে কিংবা মাসে অন্তত একবার প্রতিবন্ধীদের অভিজ্ঞ চিকিৎসকের মাধ্যমে সেবা প্রদানের ব্যবস্থা করা উচিত
■ শারীরিক বিষয়ের পাশাপাশি আর্থসামাজিক দিকটাও বিবেচনায় নিয়ে আসা
■ প্রতিবন্ধীদের প্রতি আমাদের মানসিকতার পরিবর্তন আনতে হবে
■ প্রতিবন্ধিতার ধরন অনুযায়ী পৃথক চিকিৎসার ব্যবস্থা করা দরকার
■ প্রতিবন্ধী শনাক্তকরণের পর তৃণমূল পর্যায়ে চিকিৎসাসেবা দিতে হবে
■ চিকিৎসক এবং রোগীর মধ্যে আস্থার সম্পর্ক নিশ্চিত করা জরুরি

আলোচনা
আব্দুল কাইয়ুম
দেশে প্রায় প্রতি দশজনে একজন প্রতিবন্ধী। প্রতিবন্ধীদের সঠিক পরিচর্যার মাধ্যমে মানবসম্পদে রূপান্তরিত করা সম্ভব। বর্তমানে এদের জন্য কী ধরনের স্বাস্থ্যসেবা প্রদান করা হচ্ছে, কোন ধরনের কর্মসূচি গ্রহণ করা উচিত, সেগুলো নিয়েই আজকের আলোচনা। এখন এ বিষয়ে আলোচনা করবেন ফরিদা ইয়াসমিন।

ফরিদা ইয়াসমীন
ফরিদা ইয়াসমীন

ফরিদা ইয়াসমীন
ডিআরআরএ ১৯৯৬ সালে সাতক্ষীরায় প্রতিবন্ধীদের নিয়ে কাজ করা শুরু করে। বর্তমানে এ কর্মসূচি দেশের ৩২টি জেলায় পরিচালিত হচ্ছে। ডিআরআরএ মূলত প্রতিবন্ধীদের স্বাস্থ্য, শিক্ষা ও কর্মসংস্থান নিয়ে কাজ করে। শিক্ষা ও কর্মসংস্থান বহুলাংশে স্বাস্থ্যের ওপর নির্ভরশীল।
প্রতিবন্ধী শিশুদের যথাযথ চিকিৎসার অভাবে তারা স্বাভাবিক জীবনযাপন ও মূলধারার শিক্ষা থেকে পিছিয়ে পড়ে। ২০১৩ সালের প্রতিবন্ধী অধিকার ও সুরক্ষা আইন প্রণয়ন করা হয়। ওই বছর নিউরো-ডেভেলপমেন্টাল ডিজঅ্যাবিলিটি সুরক্ষা ট্রাস্ট আইন করা হয়েছে। এ দুটি আইনের মধ্যে প্রতিবন্ধীদের স্বাস্থ্য সুরক্ষা ও অধিকারের বিষয়টি স্পষ্টভাবে উল্লেখ রয়েছে। কিন্তু প্রতিবন্ধী শিশুদের ওষুধ, সহায়ক উপকরণ, থেরাপি ইত্যাদি সেবা উপজেলা পর্যায়ে নেই এবং জেলা পর্যায়েও অপর্যাপ্ত।
ডিআরআরএ ৮টি উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স ও একটি সদর হাসপাতালের মাধ্যমে ৩ বছরে ৪৭ হাজার ১৬৫ জন প্রতিবন্ধী ও প্রতিবন্ধিতার ঝঁুকিতে থাকা ব্যক্তিকে শনাক্ত করে প্রাথমিক স্বাস্থ্যসেবা প্রদান করেছে। প্রাথমিকভাবে শনাক্ত প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের অধিকাংশের সহায়ক উপকরণ প্রয়োজন। সহায়ক উপকরণ বলতে বিশেষ ধরনের হুইলচেয়ার, স্পেশাল সিটিং চেয়ার ইত্যাদি উল্লেখযোগ্য। এগুলো গ্রাম পর্যায়ে পাওয়া যায়না। উপকরণ কিনতে শহরে আসতে হয়, এতে যাতায়াতের খরচ অনেক বেশি।
প্রতিবন্ধী সুরক্ষা আইন ২০১৩ অনুসারে প্রতিবন্ধিতা শনাক্তকরণ এবং স্বাস্থ্যসেবা প্রদান করার দায়িত্ব স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের। এ বিষয়ে চিকিৎসকদের প্রশিক্ষণের অভাব রয়েছে।
শতকরা ৪৯ ভাগ প্রতিবন্ধিতা কমিয়ে আনা সম্ভব যদি প্রারম্ভিক শনাক্তকরণ ও নিরাপদ মাতৃত্ব নিশ্চিত করা সম্ভব হয়। প্রতিবন্ধীদের জন্য স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের কয়েকটি কর্মসূচি গ্রহণ করা জরুরি।
প্রথমত, প্রতিবন্ধীদের জন্য স্বাস্থ্যসেবা উন্নত করার জন্য একটি কর্মকৌশল প্রণয়ন করা দরকার।
দ্বিতীয়ত, সবার জন্য সহায়ক উপকরণ জেলা পর্যায়ে প্রাপ্তি নিশ্চিতকরণ। বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের ওপর সহায়ক উপকরণের নির্ভরশীলতা কমিয়ে জেলা পর্যায়ে সহায়ক উপকরণ উৎপাদনে সরকারি পৃষ্ঠপোষকতায় এর প্রাপ্তি নিশ্চিত করা প্রয়োজন।

মো.খুরশীদ আলম
মো.খুরশীদ আলম

মো.খুরশীদ আলম
উপজেলা হেলথ কমপ্লেক্স এবং জেলা পর্যায়ে যে রোগীরা আসে, তাদের বড় একটা অংশ প্রতিবন্ধী। প্রতিবন্ধীদের বেশির ভাগই হচ্ছেন নারী ও শিশু। প্রতিবন্ধীদের পর্যাপ্ত সহায়ক উপকরণ ও যথাযথ চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে না। রোগীদের যথাসময়ে উপযুক্ত চিকিৎসা দিতে পারলে সুস্থ করা সম্ভব হতো। কিন্তু অনেক সীমাবদ্ধ সম্পদ ও কর্মী নিয়ে কাজ করি। তবে এ স্বল্প সম্পদ ও কর্মীদের যথাযথ ব্যবহার করতে পারলে অনেক বড় একটা পরিবর্তন আনা সম্ভব।
স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় ও স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের নির্দেশনা অনুযায়ী আমরা প্রতিটা উপজেলা হেলথ কমপ্লেক্সে ইতিমধ্যেই কিছু কর্মসূচি গ্রহণ করেছি। প্রথমত, সেবা প্রদানের ক্ষেত্রে প্রতিবন্ধী রোগীদের প্রাধান্য দেওয়া হয়। এ ছাড়া তাদের জন্য হুইলচেয়ারের ব্যবস্থা করা ও হাসপাতালে ভর্তি হতে ইচ্ছুক রোগীদের জন্য কিছু শয্যা সংরক্ষণ করা হয়েছে। প্রয়োজনীয় ওষুধ সংগ্রহের জন্য ভিন্ন একটি কাউন্টারের ব্যবস্থা রয়েছে।
প্রতিবন্ধীদের জন্য এসব ব্যবস্থা করলেও প্রতিবন্ধিতা রোধ করার জন্য কিছুই করতে পারিনি। তবে আমাদের সম্প্রসারিত টিকাদান কার্যক্রম সারা বিশ্বে প্রশংসিত হয়েছে। মাতৃ ও শিশুমৃত্যুর হার অনেকাংশ কমিয়ে ফেলা হয়েছে। মানুষের গড় আয়ু বৃদ্ধি পেয়েছে।
আমাদের সামনে অনেক চ্যালেঞ্জ রয়েছে। প্রতিবন্ধীদের সুরক্ষা কর্মসূচি স্বাস্থ্য বিভাগের কয়েকজন চিকিৎসক বা নার্স দিয়ে সফল বাস্তবায়ন সম্ভব না। এ জন্য সচেতনতামূলক কর্মসূচির মাধ্যমে জনগণের অংশগ্রহণ নিশ্চিত করতে হবে। সরকারের অন্যান্য বিভাগের সমন্বয়ে এই চ্যালেঞ্জ আমরা মোকাবিলা করতে পারব।

আ এ মো. মহিউদ্দিন ওসমানী
আ এ মো. মহিউদ্দিন ওসমানী

আ এ মো. মহিউদ্দিন ওসমানী
অবহেলিত প্রতিবন্ধীদের যথাযথ সেবা দেওয়ার জন্য ডিআরআরএ বিভিন্ন উপজেলা ও জেলা পর্যায়ে কাজ করছে। কাজের ক্ষেত্রে আরেকটু জোর দিলে সেবার পরিমাণ বাড়বে। হাসপাতালের ওয়ার্ডের ভেতরে প্রতিবন্ধীদের জন্য একটি নির্দিষ্ট জায়গার ব্যবস্থা করে দিতে হবে। চলাচলের জন্য ভালো জায়গার ব্যবস্থা করা দরকার।
প্রতিবন্ধীদের জন্য বিভিন্ন সেবা প্রতিষ্ঠানে আলাদা লাইন, যানবাহনে সংরক্ষিত আসন ও বাড়তি সুবিধা নিশ্চিত করতে হবে। মানিকগঞ্জ, সাতক্ষীরা ও চট্টগ্রামে পাইলট প্রকল্পের অধীনে যেভাবে কাজগুলো হয়েছে, সেগুলো জাতীয় পর্যায়ে বাস্তবায়ন করা যেতে পারে।
সেক্টর প্রোগ্রাম তৈরির সময় ইতিমধ্যেই এ বিষয়ে কিছু কাজ শুরু করেছি। নিউরোলজিক্যাল সমস্যার জন্য সূচনা ফাউন্ডেশনসহ আরও অনেক প্রতিষ্ঠান সরকারের সহায়তার মাধ্যমে সেবা প্রদান করছে।
প্রতিবন্ধীদের জন্য উন্নয়নমূলক সব কাজকে একত্র করার জন্য একটি পরিকল্পনা প্রয়োজন। দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলেও যেন প্রতিবন্ধীরা উপযুক্ত সুবিধা পায়, তা নিশ্চিত করতে হবে। বর্তমানে হাসপাতালগুলোতে প্রতিবন্ধীদের জন্য হুইলচেয়ার সময়মতো পাওয়া যায় না। এ জন্য হাসপাতালে পর্যাপ্ত হুইলচেয়ারের বরাদ্দ রাখতে হবে। প্রতিবন্ধীদের চিহ্নিত করে সে অনুযায়ী চিকিৎসা দিতে হবে।

নূর মোহাম্মদ
নূর মোহাম্মদ

নূর মোহাম্মদ
আমাদের নন-কমিউনিক্যাবল ডিজিজ (অসংক্রামক রোগ) প্রোগ্রামের ছয়টা বিষয়ের মধ্যে প্রতিবন্ধিতার বিষয়টা খুব গুরুত্বপূর্ণ। সে আলোকে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের কার্যক্রম চলছে। অধিদপ্তরের প্রথম কাজ হচ্ছে প্রতিবন্ধীকে শনাক্ত করা। শহরের হাসপাতালে চিকিৎসকেরা প্রতিবন্ধীদের চিহ্নিত করতে পারলেও গ্রাম পর্যায়ে সেটা সম্ভব হচ্ছে না। ইতিমধ্যে ওয়ার্ড পর্যায়ে প্রতিবন্ধীদের চিহ্নিত করার কাজ শুরু হয়েছে।
ডিআরআরএ ও স্বাস্থ্য অধিদপ্তর প্রতিবন্ধীদের শনাক্ত করার উদ্যোগ নিয়েছে। প্রাথমিকভাবে প্রতিবন্ধীদের শনাক্ত করার পর সেখানে যথাযথ চিকিৎসা প্রদান করা সম্ভব না হলে উপজেলা ও জেলা পর্যায়ে পাঠাতে হবে। কেননা, ওয়ার্ড পর্যায়ে নানা ধরনের প্রতিবন্ধী দেখা যাবে।
প্রতিবন্ধীদের ধরন অনুযায়ী আলাদা করে চিকিৎসা প্রদান করতে হবে। চিকিৎসক ও নার্সদের এ বিষয়ে যথাযথ প্রশিক্ষণ থাকা জরুরি। এ ক্ষেত্রে আলাদা ইউনিট কিংবা ওয়ার্ড থাকা বাঞ্ছনীয়। চিকিৎসকেরা প্রশিক্ষণের সময় পুরোপুরি প্রশিক্ষণ না নিয়ে চলে যান। তবে নার্সরা বেশ সচেতন।
প্রতিবন্ধীদের সঙ্গে বন্ধুত্বপূর্ণ আচরণ করা জরুরি। প্যাথলজি টেস্টগুলো বিনা মূল্যে না করতে পারলেও স্বল্পমূল্যে করে দেওয়ার ব্যবস্থা করতে হবে। ইতিমধ্যে ইশারা ভাষার প্রশিক্ষণ চলছে। এ জন্য ৫০টি উপজেলায় প্রশিক্ষণ হয়েছে।
প্রতিবন্ধীদের নিয়ে বিভিন্ন ধরনের গবেষণা চালিয়ে যাচ্ছি। ২০১৩ সালে প্রতিবন্ধী অধিকার সুরক্ষা আইন প্রণীত হয়েছে। এখন আমাদের পরিকল্পনার মাধ্যমে কাজ করতে হবে। মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর মেয়ে সায়মা ওয়াজেদ ও স্বাস্থ্যমন্ত্রীর গৃহীত পদক্ষেপের মাধ্যমে এ সমস্যা কমিয়ে আনা সম্ভব হবে।

মো. শফিকুল ইসলাম
মো. শফিকুল ইসলাম

মো. শফিকুল ইসলাম
সম্পদের সর্বোত্তম ব্যবহারের মাধ্যমে প্রতিবন্ধী মানুষের সেবা কিংবা পুনর্বাসনের উদ্যোগ নেওয়া প্রয়োজন। এ জন্য চিকিৎসক, ফিজিওথেরাপিস্ট, স্পিচ অ্যান্ড ল্যাংগুয়েজ থেরাপিস্ট ও সাইকো সোশ্যাল কাউন্সিলরের সমন্বয়ে চিকিৎসা দিতে পারলে কাজটা অনেক সহজ হবে। সেবাদানকারীদের একটি আইনি কাঠামোর মধ্যে এনে স্বাস্থ্যসেবায় অধিভুক্ত করা দরকার। এতে প্রতিবন্ধীরা উপযুক্ত সেবা পাবে। অনেকে প্রতিবন্ধীদের নিয়ে কাজ করছে। কিন্তু কাজের মধ্যে সমন্বয় নেই। প্রতিষ্ঠানগুলোর অভিজ্ঞতাকে কাজে লাগিয়ে একটি প্রক্রিয়ার মাধ্যমে কর্মসূচি গ্রহণ করা প্রয়োজন।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে বছরে মাত্র ৪০ জন পেশাগত থেরাপিস্ট গ্র্যাজুয়েশন ডিগ্রি অর্জন করছেন। প্রয়োজনের তুলনায় এটা খুবই কম। আবার তাঁদের অর্ধেক বিদেশে চলে যাচ্ছেন। প্রতিবন্ধী মানুষের জন্য সমন্বিত স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিত করার জন্য আইনি কাঠামোর মাধ্যমে একীভূত স্বাস্থ্যসেবা প্রদানের উদ্যোগ নেওয়া জরুরি।
সরকারি পর্যায়ে পদ সৃষ্টি ও শিক্ষার প্রসার করা প্রয়োজন। এসব করতে না পারলে প্রতিবন্ধীদের চাহিদা অনুযায়ী সেবা দিতে ব্যর্থ হব।
বিভিন্ন সরকারি-বেসরকারি হাসপাতাল থেকে প্রাথমিক চিকিৎসার পর কিছু রোগী আমাদের কাছে পরবর্তী পর্যায়ের চিকিৎসা নিতে আসে। তাদের সেবা দিতে গিয়ে আমাদের পুনর্বাসন কার্যক্রম পিছিয়ে পড়ছে। মতবিনিময় সভা ও যথাযথ প্রশিক্ষণের মাধ্যমে এ সমস্যার সমাধান সম্ভব।

মোছা. মনোয়ারা খাতুন
মোছা. মনোয়ারা খাতুন

মোছা. মনোয়ারা খাতুন
ডিআরআরএর মাধ্যমে সাতক্ষীরায় নারীকন্ঠ উন্নয়ন সংস্থা প্রতিষ্ঠা হয়েছে। ডিআরআরএ ও সিবিএমের মাধ্যমে সরকারি কর্মকর্তার সঙ্গে অনেক অলোচনা করেছি। সিবিএমের সহযোগিতায় আমাদের কাজ সহজ হয়েছে।
স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে প্রতিবন্ধীদের জন্য আলাদা শয্যার ব্যবস্থা করা হয়েছে। একই সঙ্গে আলাদা ওয়াশরুম ও সিঁড়িরও ব্যবস্থা রয়েছে। ডিআরআরএর সহযোগিতায় এলাকার স্কুলগুলো এখন অনেক উন্নত হয়েছে।
প্রতিবন্ধীদের জন্য পরিবহনে আলাদা আসন নিশ্চিত করা দরকার। অনেক সময় প্রতিবন্ধী দাঁড়িয়ে থাকলেও অনেকে আসন ছাড়েন না।
সরকার প্রতিবন্ধীদের জন্য অনেক কাজ করলেও আমাদের সাতক্ষীরায় তা খুব কমই দেখতে পাচ্ছি। তবে ডিআরআরএ সহযোগিতা করেছে। আর সিবিএমের সহযোগিতায় প্রতিবন্ধী সংস্থা করা সম্ভব হয়েছে।
সাতক্ষীরায় বিভিন্ন ধরনের প্রায় ৪৭ হাজার প্রতিবন্ধী রয়েছে। তারা ডিআরআরএ থেকে সব ধরনের সুযোগ-সুবিধা পাচ্ছে। ডিআরআরএর জন্য আমাদের এলাকার প্রতিবন্ধীরা খুব খুশি। এ প্রতিবন্ধকতা কোনো কিছুই না, মনের ভেতরে শক্তি থাকলে সবকিছুই করা সম্ভব।

গোলাম মোস্তফা
গোলাম মোস্তফা

গোলাম মোস্তফা
প্রতিবন্ধীদের সুস্বাস্থ্যের জন্য সমন্বিত স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিত করা দরকার। সাধারণ স্বাস্থ্যসেবার পাশাপাশি পুনর্বাসনের সেবাও প্রদান করতে হবে। ২০১৭-২২ সাল পর্যন্ত স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের তত্ত্বাবধানে এনসিডিসি (নন–কমিউনিকেবল ডিজিজ কন্ট্রোল) পরিকল্পনা করা হয়েছে। ওই পরিকল্পনায় প্রতিবন্ধীদের বিষয়টিও অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে।
হ্যান্ডিক্যাপ ইন্টারন্যাশনাল মাঠ পর্যায়ে বিভিন্ন উপজেলা ও জেলা পর্যায়ের সিভিল সার্জনদের নিয়ে কাজ শুরু করেছে। তাদের নিয়ে মতবিনিময় সভার আয়োজন করছি।
স্বাস্থ্যসেবায় ফিজিওথেরাপিস্ট, অকুপেশনাল থেরাপিস্ট, স্পিচ অ্যান্ড ল্যাঙ্গুয়েজ থেরাপিস্টসহ অন্যরা কী ধরনের ভূমিকা পালন করবেন, তা নিয়ে আলোচনা হওয়া দরকার। তাঁরা স্বাস্থ্যের কে কোন বিষয়ে সেবা প্রদান করেন, তা সাধারণ মানুষ জানলে রোগীর জন্য সেবা গ্রহণ সহজ হবে।
সমাজে প্রতিবন্ধীদের শারীরিক বিষয়টাই শুধু দেখা হয়। তার যে সামাজিক বিষয়ও রয়েছে, সেটা আমরা ভুলে যাই। তাই শারীরিক বিষয়ের সঙ্গে সামাজিক
বিষয় নিয়ে কাজ করা হলে আরও ভালো হবে বলে আমি মনে করি।

শাহনেওয়াজ কোরাইশী
শাহনেওয়াজ কোরাইশী

শাহনেওয়াজ কোরাইশী
প্রকৃতপক্ষে প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের জন্য স্বাস্থ্যসেবাকেন্দ্রগুলোয় প্রবেশের সুবিধা অন্যদের মতো না। কিন্তু স্বাস্থ্যসেবা পাওয়া একজন প্রতিবন্ধী ব্যক্তির জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এটা তাদের জীবনধারার পরিবর্তন ঘটাতে পারে। শারীরিকভাবে অক্ষম একজন শিশু ছোটবেলা থেকেই স্বাস্থ্যসেবা না পেলে শিক্ষা ও অন্য কোনো বিশেষ দক্ষতা অর্জন করতে পারবে না। এ জন্য তাদের সমাজ থেকে আলাদা হয়ে যাবে।
সিবিএম বাংলাদেশসহ বিভিন্ন দেশে কাজ করে। বাংলাদেশের স্বাস্থ্যসেবার অবস্থা সম্পর্কে আরও ভালোভাবে বোঝার জন্য সিবিএম এবং ডিআরআরএ একটি বিস্তারিত গবেষণা করেছে। এ গবেষণার ওপর ভিত্তি করে সরকারের সঙ্গে প্রত্যক্ষ সহযোগিতায় কাজ করছি। বর্তমানে নিকটস্থ সরকারি হাসপাতালে প্রতিবন্ধীদের জন্য স্বল্পমূলে্য প্রয়োজনীয় স্বাস্থ্যসেবা পাওয়া যাচ্ছে। এতে সাধারণ মানুষ নিয়মিত সেবা গ্রহণ করতে পারছে।
প্রতিটি প্রতিবন্ধী শিশু বা ব্যক্তির প্রয়োজনীয় স্বাস্থ্যসেবা পাওয়ার অধিকার আছে। সিবিএম সেবা নিশ্চিত করার ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে। এ সেবায় প্রতিবন্ধীদের জীবনযাপন সহজ হবে এবং তারা ভালোভাবে জীবনধারণ করতে পারবে।

মারগুব আরেফ জাহাঙ্গীর
মারগুব আরেফ জাহাঙ্গীর

মারগুব আরেফ জাহাঙ্গীর
বাংলাদেশের প্রায় ১০ শতাংশ মানুষ প্রতিবন্ধী। ১১টি ক্যাটাগরিতে প্রতিবন্ধকতা ভাগ করা হয়েছে। যদি জেনেরিকভাবে এই প্রতিবন্ধকতা দূর করতে চাই, তাহলে তিনটা লক্ষ্যে চিন্তা করতে পারি। প্রতিবন্ধীদের সমাজের মূলস্রোতে শামিল করা, মানবাধিকার সমুন্নত রাখা ও তাদের সমান অধিকার প্রদান করা জরুরি।
ইউনিসেফ থেকে ১৬টি জেলায় একটি করে এনজিও কাজ করছে। সেখানে সেবাদানকারী, প্রতিবন্ধীসহ সবার জন্য গ্রহণযোগ্য তথ্য প্রদান এবং সেবাদানকারী ও সেবাগ্রহীতা প্রতিবন্ধীদের মধ্যে সুন্দর যোগাযোগের সম্পর্ক স্থাপন করা হচ্ছে।
ডিজঅ্যাবলড ফ্রেন্ডলি হেলথ সার্ভিস সম্পর্কে সবাইকে জানতে হবে। দেশব্যাপী এ স্বাস্থ্যসেবা দিতে ইউনিসেফ প্রস্তুত। প্রতিবন্ধীদের নিয়ে পর্যাপ্ত গবেষণা হওয়া দরকার। ইউনিসেফ তাদের যথাযথ সহায়তা করছে এবং ভবিষ্যতেও পাশে থাকবে।

মাজহারুল মান্নান
মাজহারুল মান্নান

মাজহারুল মান্নান
প্রতিবন্ধীদের নিয়ে কর্মসূচি গ্রহণের ক্ষেত্রে বাংলাদেশ বিশ্বের অন্যতম। সায়মা ওয়াজেদের প্রচেষ্টায় এদের নিয়ে আমাদের কার্যক্রম পার্শ্ববর্তী দেশের জন্য উদাহরণ হিসেবে কাজ করে।
প্রতিবন্ধীদের নিয়ে দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা গ্রহণ করতে হবে। সীমিত সম্পদের যথাযথ ব্যবহারের মাধ্যমে সর্বোচ্চ সেবার ব্যবস্থা করা দরকার।
প্রতিবন্ধীদের নিয়ে গৃহীত বিভিন্ন কর্মসূচিতে ইউনিসেফ, ইউনেসকো, ডব্লিউএইচও এবং দেশীয় উন্নয়ন সহযোগী প্রতিষ্ঠানগুলো গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে। সচেতনতা সৃষ্টির ক্ষেত্রে গণমাধ্যমের গুরুত্বপূর্ণ ভূমিক রয়েছে।
যঁারা স্বাস্থ্য বিভাগে রয়েছেন, তাঁদের পর্যাপ্ত প্রশিক্ষণ প্রদান করতে হবে। কমিউনিটি ক্লিনিক, ইউনিয়ন হেলথ কমপ্লেক্স ও উপজেলায় যেসব সেবাকর্মী আছেন, তঁাদের দায়িত্বশীলতার সঙ্গে সেবা প্রদান করা উচিত।
সব রোগীকে ঢাকায় পাঠানোর দরকার নেই। আমাদের সম্পদ সীমিত। রোগীদের পারিবারিক আর্থিক বিষয়টিও বিবেচনা করতে হবে। ইতিমধ্যেই প্রতিটি উপজেলায় চিকিৎসকদের এ নিয়ে প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়েছে। এমবিবিএসের মতো করে নার্সিং কোর্সেও এ শিক্ষাকে যুক্ত করা হবে। প্রতিবন্ধীদের সঙ্গে সব সময় মানবিক আচরণ করা জরুরি।
অভিভাবক বা প্রতিবন্ধীদের যাঁরা যত্ন করেন, তাঁদের বিশেষ প্রশিক্ষণ প্রদান করতে হবে, যেন শতভাগ সেবা দেওয়া যায়। এভাবে কাজ করলে দেশ প্রতিবন্ধীদের বিষয়ে আগামী ১০ বছরে দৃষ্টান্তমূলক অবস্থানে পৌঁছাবে।

এ এইচ এম এনায়েত হোসেন
এ এইচ এম এনায়েত হোসেন

এ এইচ এম এনায়েত হোসেন
প্রতিবন্ধিতা নিয়ে বর্তমান সরকার নিজের সেরাটা দিয়ে কাজ করে যাচ্ছে। সবার জন্য পুনর্বাসনের সেবা দেওয়ার ক্ষেত্রে আমাদের সীমাবদ্ধতা রয়েছে। প্রতিবন্ধীদের ক্ষেত্রে ছয়টা সুপারিশের মধ্যে পাঁচটিই স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমে বাস্তবায়ন করা হচ্ছে। একটা মাল্টিসেক্টরাল অ্যাকশন প্ল্যান তৈরি করার উদ্যোগ গৃহীত হয়েছে। সেখানে আন্তমন্ত্রণালয়ের মধ্যে সমন্বয়ের মাধ্যমে কাজ করা হবে।
প্রতিবন্ধী সহায়ক স্থাপনা গড়ে তুলতে হবে। বাক্‌-প্রতিবন্ধীদের সহায়তার জন্য একজন প্যারামেডিক ও একজন চিকিৎসককে সাংকেতিক ভাষা শেখানো হচ্ছে।
ইশারা ভাষাকে (সাইন ল্যাঙ্গুয়েজ) আরও জনপ্রিয় করার জন্য ডিআরআরএর সঙ্গে কাজ করছি।
সামাজিক কুসংস্কারের কারণে প্রতিবন্ধী সম্পর্কিত কার্যক্রম ব্যাহত হচ্ছে। তাই সচেতনতা সৃষ্টি করা প্রয়োজন। এ জন্য সমাজের সচেতন ব্যক্তিদের এগিয়ে আসা উচিত।
প্রতিবন্ধী ব্যক্তির অধিকার ও সুরক্ষা আইন ২০১৩ অনুসারে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় কাজ করছে। এরই ধারাবাহিকতায় আমরা প্রতিবন্ধিতার সংজ্ঞা নিরূপণের কাজ করছি। একীভূত স্বাস্থ্যসেবার কর্মসূচি শুরু হয়েছে। এটা অন্যান্য জায়গায় সম্প্রসারণের চেষ্টা করছি। তাছাড়া হাসপাতাল ও কমিউনিটি ক্লিনিকগুলোকে বিশেষায়িত করার কাজ চলছে।
আমরা ধারাব‌িাহকভাবে সরকারী ডাক্তারদের জন্য প্রতিবন্ধিতা ও রেফারাল ব্যবস্থার উপর প্রশিক্ষণ প্রদান করছি। বিভিন্ন খাতে প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের শনাক্তকরণ, রেফারাল ও পুনর্বাসনের জন্য বাজেট বরাদ্দের বিষয়ে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় উদ্যোগ নিচ্ছে।

মো. নাসির উদ্দিন
মো. নাসির উদ্দিন

মো. নাসির উদ্দিন
আমরা প্রান্তিক এলাকায় সাধারণ মানুষকে নিয়ে কাজ করি। চার বছর ধরে কমিউনিটি ক্লিনিকে প্রতিবন্ধীদের নিয়ে কাজ করছি। ২২টা ইউনিয়ন থেকে মোট ৫৫ জন দুটি ধাপে ডিআরআরএ থেকে প্রশিক্ষণ গ্রহণ করে।
উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে বিভিন্ন ধরনের প্রতিবন্ধী তাদের সমস্যা নিয়ে আসে। সাধ্যমতো সেবা প্রদান করার চেষ্টা করি। প্রয়োজনে জেলা পর্যায়ে পাঠিয়ে দিই। আর পরবর্তীকালে তদারকি করি।
প্রতিবন্ধীদের শনাক্ত করার পর একটি তালিকা তৈরি করি। মাস শেষে অনলাইনে তালিকায় প্রতিবন্ধীদের সংখ্যা প্রকাশ করি। সেবার মাধ্যমে কাউকে সুস্থ করে তুলতে পারাই আমাদের সার্থকতা।
অর্থনৈতিকভাবে অসচ্ছল প্রতিবন্ধীদের সপ্তাহে কিংবা মাসে একবার করে হলেও অভিজ্ঞ চিকিৎসকের মাধ্যমে ইউনিয়ন পর্যায়ে সেবা প্রদানের ব্যবস্থা করা হয়।

আ ফ ম রুহুল হক
আ ফ ম রুহুল হক

আ ফ ম রুহুল হক
প্রতিবন্ধী সম্পর্কিত কার্যক্রমে বিভিন্ন ধরনের সংকট রয়েছে। সরকারের একার পক্ষে এত বড় সমস্যা সমাধান করা সম্ভব না। এর জন্য বিভিন্ন বেসরকারি সংস্থার সহযোগিতা প্রয়োজন। ডিআরআরএ এই বিষয়ে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে। প্রতিবন্ধী মানুষের সহায়তার জন্য এ রকম আরও অনেক সংস্থার এগিয়ে আসা প্রয়োজন।
ডিআরআরএর মাধ্যমে সাতক্ষীরায় ৪৭ হাজার প্রতিবন্ধী শনাক্ত করা হয়েছে। তাদের সবাইকে একসঙ্গে সেবা প্রদান করা সরকারের একার পক্ষে সম্ভব নয়। সমাজের সর্বস্তরের মানুষের অংশগ্রহণ থাকতে হবে। তাহলেই এত বড় সমস্যা মোকাবিলা করা সম্ভব।
স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের পাশাপাশি প্রতিবন্ধিতা নিয়ে কাজ করে এমন অন্য মন্ত্রণালয়গুলোর একসঙ্গে কাজ করা প্রয়োজন। সরকারি-বেসরকারি সব সংস্থার অংশগ্রহণই পারে প্রতিবন্ধকতাজনিত সমস্যা দূর করতে।
বেসরকারি সংস্থাগুলো তৃণমূল পর্যায়ে প্রতিবন্ধীদের শনাক্ত করবে। আর পরবর্তীকালে সরকারি হাসপাতালগুলোতে তাদের চিকিৎসাসেবা প্রদান করা হবে। এভাবে কাজ করলে সুফল আসবে।
দেশের মোট জনসংখ্যার প্রায় ১০ শতাংশ প্রতিবন্ধী। তাদের মধ্যে বিভিন্ন ধরনের প্রতিবন্ধী রয়েছে। আমাদের স্বাস্থ্যসেবায় পরিবর্তন আনা দরকার। একজন রোগীকে শুধু ওষুধ দিয়ে বিদায় করে দিলেই হবে না। পরবর্তীকালে খোঁজখবর নিয়ে প্রয়োজনীয় চিকিৎসা প্রদান করতে হবে।
স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের পক্ষে একা এ সমস্যার সমাধান করা সম্ভব নয়। সবাইকে একীভূত করেই ক্রমান্বয়ে এ নিয়ে কাজ করতে হবে। তবেই সফলতা আসবে। ইউনিয়ন, উপজেলা কিংবা জেলা পর্যায়ে চিকিৎসক কিংবা কর্মীরা অনেক ক্ষেত্রে তাঁদের সর্বোচ্চ সেবা প্রদান করেন না। তৃণমূল থেকে সর্বোচ্চ পর্যায়ে নার্স কিংবা কর্মীদের নিয়োগ দেওয়ার আগে পর্যাপ্ত প্রশিক্ষণ নিশ্চিত করতে হবে। নিয়োগ পাওয়ার পর নামেমাত্র প্রশিক্ষণ দেওয়া চলবে না।
সাধ্যের মধ্যে যতটুকু পারব, সেবা দেওয়ার চেষ্টা করব। প্রতিবন্ধিতার পাশাপাশি অন্যান্য ক্ষেত্রেও সরকারি-বেসরকারি সংস্থার সমন্বিত প্রচেষ্টার মাধ্যমে সফলতা আনা সম্ভব। মনোবল না হারিয়ে আমাদের সক্ষমতাকে কাজে লাগাতে হবে।

মোহাম্মদ নাসিম
মোহাম্মদ নাসিম

মোহাম্মদ নাসিম
প্রতিবন্ধী সমস্যা সমাধান একা করা সম্ভব না। দেশের বড় সমস্যা সমাধানে প্রয়োজন স্থিতিশীল সরকার। আর আমাদের দেশে সেটা আছে। সরকার প্রতিবন্ধিতার মতো জনগুরুত্বপূর্ণ কাজগুলো হাতে নিয়েছে।
প্রতিবন্ধীদের নিয়ে কাজ করা একটা মানবিক দায়িত্বও। একজন মানুষ জন্মগতভাবে প্রতিবন্ধী হতেই পারে। এ জন্য তার দোষ নেই। প্রতিবন্ধীদের প্রতি আমাদের আন্তরিক হতে হবে। এটা তাদের অধিকার। এতে তারা খুশি হয়। কাছে আসতে চায়। আপনার একটু সহানুভূতিতে তারা কিছুটা প্রশান্তি পেলে ক্ষতি কী?
আমাদের সরকার প্রতিবন্ধীদের প্রতি অনেক আন্তরিক। আমরা কার্যকরভাবে তাদের অধিকার প্রতিষ্ঠা করতে চাই। এ সরকারের আমলে ২০১৩ সালে প্রতিবন্ধী ব্যক্তির অধিকার আইন ও সুরক্ষা আইন নামে দুটি আইন হয়েছে। এখন এদের নিয়ে জোরালোভাবে কর্মসূচি গৃহীত হচ্ছে।
সরকার এককভাবে কাজ করতে পারে না। একটি কর্মসূচি সরকারিভাবে সম্পন্ন হলে অন্যটি অবশ্যই বেসরকারি সংস্থার মাধ্যমে হয়। ডিআরআরএর মতো সংস্থার কার্যক্রম প্রশংসনীয়।
প্রতিবন্ধীদের নিয়ে আইন প্রণয়নের পাশাপাশি তা বাস্তবায়নের জন্যও কাজ করে যাচ্ছি। তাদের নিয়ে পাঁচটি মন্ত্রণালয় কাজ করছে। সচেতনতা বাড়াতে গণমাধ্যমকে এ বিষয়ে এগিয়ে আসতে হবে। মানসিকতার পরিবর্তন ঘটাতে হবে।
দরিদ্র প্রতিবন্ধীদের প্রতি আন্তরিক হওয়ার পাশাপাশি তাদের আর্থিকভাবে সাহায্য করা উচিত। এ জন্য সরকারের পাশাপাশি সমাজের ধনী ব্যক্তিদেরও এগিয়ে আসতে হবে।
প্রতিবন্ধীদের অধিকার, চাকরি, পুনর্বাসনের ব্যবস্থা এবং মর্যাদা দেওয়ার ব্যবস্থা করে দিতে হবে। প্রতিবন্ধীদের তাদের অধিকার সম্পর্কে সচেতন হতে হবে। তাহলে সমাজ তাকে গ্রহণ করবে, পরিবার তাকে সাহায্য ও সহযোগিতা করবে।
সরকার প্রতিবন্ধী মানুষের জন্য কাজ করছে। ভবিষ্যতে আরও বেশি করবে।

আব্দুল কাইয়ুম
প্রতিবন্ধী মানুষেরা আমাদের সমাজেরই অংশ। তাদের বাদ দিয়ে সমাজের উন্নয়ন চিন্তা করা যায় না। তাদের প্রতি আন্তরিক হওয়া উচিত। প্রয়োজন সুষ্ঠু পরিচর্যা। আজকের আলোচনায় অংশগ্রহণের জন্য প্রথম আলোর পক্ষ থেকে ধন্যবাদ ও কৃতজ্ঞতা।