ভুয়া র‍্যাবের দৌরাত্ম্য

র‍্যাবের জ্যাকেট, ‘র‍্যাব’ লেখা বোর্ড, পিস্তল, হাতকড়া, ওয়াকিটকি সেট, দড়ি, চোখ বাঁধার কালো কাপড়, মাইক্রোবাস—এসব সরঞ্জাম ব্যবহার করে প্রকাশ্য দিনের আলোয় জনসমক্ষে নিরীহ সাধারণ মানুষকে রাস্তা থেকে তুলে নিয়ে যাওয়া যে নির্বিঘ্নেই সম্ভব, তা বারবার প্রমাণিত হচ্ছে। গত সোমবার রাজধানীতে সংবাদ সম্মেলন ডেকে র‍্যাব কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, সাতজন লোক ওই সরঞ্জামগুলো ব্যবহার করে র‍্যাবের সদস্য সেজে গত দেড় মাসে রাজধানী ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন এলাকায় লোকজনকে অপহরণ করে কিংবা নকল চেকপোস্ট বসিয়ে টাকা আদায় করেছে। তারা এ ধরনের অপরাধ সংঘটন করেছে ১৩ বার, লোকজনের কাছ থেকে লুটে নিয়েছে ৩০ লাখ ৭০ হাজার টাকা।

এ তথ্যের তাৎপর্য শুধু এটা নয় যে র‍্যাব সেজে লোকজনকে রাস্তা থেকে তুলে নিয়ে গিয়ে টাকাপয়সা লুটে নেওয়া সহজ ও নির্বিঘ্ন বলে মনে করা হচ্ছে। এর তাৎপর্য এটাও যে র‍্যাবসহ আমাদের আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীগুলো এ ধরনের সংঘবদ্ধ অপরাধ দমনে যথেষ্ট তৎপর নয়। কেননা, র‍্যাব-পুলিশ তৎপর থাকলে একই সংঘবদ্ধ চক্র, অর্থাৎ এই সাত ব্যক্তি মাত্র দেড় মাসের মধ্যে একই অপরাধ ১৩ বার করতে পারত না।

এটা অবশ্য ভালো খবর যে ওই সাত অপরাধীকে অবশেষে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। কিন্তু এতে স্বস্তি বোধ করা যাচ্ছে না। কারণ, পেশাদার অপরাধীদের মধ্যে র‍্যাব সেজে অপরাধ করার প্রবণতা অত্যন্ত প্রবল। কেননা, এটাকে তারা নিজেদের পক্ষে তুলনামূলকভাবে নিরাপদ ও নির্বিঘ্ন বলে মনে করছে এবং এ ধরনের অপরাধী চক্র দেশজুড়ে আরও কত আছে, তা জনসাধারণের জানা নেই। তারা যে পন্থায় অপরাধ সংঘটন করছে, র‍্যাবের বর্ণনা থেকেই তার চিত্রগুলো প্রচণ্ড ভীতিকর। যেমন আপনি ব্যাংক থেকে টাকা তুলে ব্যাংক ভবন থেকে বেরিয়ে এলেন, একটু পরেই র‍্যাবের পোশাক পরা লোকজন এসে আপনার পথ আটকাল বা আপনাকে ঘিরে ধরল। ‘তোর নামে ১০-১৫টা মামলা আছে’—এ রকম ভীতিকর মিথ্যা কথা বলে তারা আপনাকে তাদের মাইক্রোবাসে তুলে নিয়ে হাত ও চোখ বেঁধে প্রচণ্ড মারপিট করল, তারপর ব্যাংক থেকে তোলা আপনার সব টাকা ছিনিয়ে নিয়ে চলন্ত মাইক্রোবাস থেকে ফেলে দিয়ে কিংবা নামিয়ে দিয়ে চলে গেল।

এটা যে একটা অত্যন্ত ভীতিকর পরিস্থিতি, এতে কোনো সন্দেহ নেই। এই পরিস্থিতি কীভাবে সৃষ্টি হতে পারল, র‍্যাব কর্তৃপক্ষের তা ভেবে দেখা উচিত। পেশাদার অপরাধীরা আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর পোশাক পরে অপরাধ সংঘটনের সাহস অর্জন করতে পারে, যখন এসব বাহিনীর সদস্যদের মধ্যেই কেউ কেউ এ ধরনের অপরাধে যুক্ত হয়ে পড়েন। নারায়ণগঞ্জের সাত খুনের ঘটনাসহ এ রকম কিছু ঘটনা অতীতে ঘটেছে। এটা যেমন আইনশৃঙ্খলা রক্ষা ও অপরাধ দমনের ক্ষেত্রে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীগুলোর দায়িত্ব পালনের চ্যালেঞ্জ, তেমনি তাদের ভাবমূর্তিরও সংকট।