ট্রেনে নারী যাত্রী উত্ত্যক্ত

ফরিদপুর-রাজবাড়ী পথে বৈকালিক ট্রেনে বখাটেদের দৌরাত্ম্য ও নারী যাত্রীদের উত্ত্যক্ত করার খবরটি আমাদের উদ্বিগ্ন করে তুলেছে। বুধবার প্রথম আলোর খবরে প্রকাশ, ১ নভেম্বর থেকে এই পথে বৈকালিক ট্রেন চলাচল শুরু হয়েছে। রাজবাড়ী থেকে বিকেলে ট্রেনটি ছেড়ে আসার পর আমীরাবাদ স্টেশন থেকে প্রতিদিন একদল তরুণ ট্রেনে উঠছেন। এরপর তাঁরা নানাভাবে নারী যাত্রীদের উত্ত্যক্ত করছেন।

বখাটে যুবকেরা সিটে নারীদের গা ঘেঁষে বসে ও পাশের বখাটে সঙ্গীর সঙ্গে অশ্লীল ভাষায় বিভিন্ন ইঙ্গিতপূর্ণ কথা বলে। একজন যাত্রী নারীদের এভাবে উত্ত্যক্ত করার প্রতিবাদ করলে তাঁকে পাগল বলে উপহাস করা হয়। ট্রেনে কোনো চেকার বা রেল পুলিশ না থাকায় নারীরা এ ব্যাপারে কাউকে কোনো কিছু জানাতে পারেননি। এ ছাড়া রেলক্রসিং থেকে ট্রেনের চালককে লক্ষ্য করে পাথর ছোড়ার ঘটনাও ঘটেছে, যা খুবই বিপজ্জনক।

ট্রেনে নারী যাত্রীদের এ ধরনের হয়রানির শিকার হওয়াটা অগ্রহণযোগ্য। দেশে শিক্ষা ও কর্মক্ষেত্রে নারীর পদচারণ বেড়েছে। তাদের প্রতিদিন স্কুল-কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয় কিংবা কর্মস্থলে যেতে হয়। এ ছাড়া সংসারের নানা ধরনের প্রয়োজনে নারীদের ঘরের বাইরে বের হতে হয়। তাদের অনেকের যাতায়াতের জন্য গণপরিবহনই ভরসা। অথচ গণপরিবহনে যাতায়াত করতে গিয়ে তারা প্রতিনিয়ত হেনস্তা ও যৌন হয়রানির শিকার হচ্ছে। পুরুষ যাত্রীরা তো আছেনই, পাশাপাশি চালক ও সহকারীরাও এ ধরনের অপকর্মে অংশ নিচ্ছেন। দেখা যাচ্ছে কোনো তরুণী গণপরিবহনে একা হলেই তিনি যৌন হয়রানি বা ধর্ষণের শিকার হচ্ছেন।

এ রকম চলতে থাকলে এ দেশের নারীরা গণপরিবহনে কীভাবে যাতায়াত করবে? গণপরিবহনে নারীরা যাতে নিরাপদে ও নির্বিঘ্নে যাতায়াত করতে পারে, সে জন্য কিছু পদক্ষেপ নেওয়া জরুরি হয়ে পড়েছে। দেখা যায়, গণপরিবহনে কোনো নারী যৌন হয়রানির শিকার হলেও তিনি কোথায় অভিযোগ করবেন, তা ঠিক বুঝে উঠতে পারেন না৷ অভিযোগ জানানোর বিষয়টি সহজ করতে হবে৷ এ জন্য ভ্রাম্যমাণ আদালত চালু করা যেতে পারে। রুট অনুযায়ী ভ্রাম্যমাণ আদালতের ফোন নম্বর গণপরিবহনের প্রকাশ্য স্থানে লিখে রাখা যেতে পারে৷

তবে এ ব্যাপারে সরকারের তরফে করণীয় ঠিক করা জরুরি। গণপরিবহনে নারীর নিরাপত্তা নিশ্চিতে সব পক্ষের সঙ্গে পরামর্শ করে কার্যকর পদক্ষেপ নিতে হবে। চলন্ত ট্রেনে পাথর ছোড়ার বিষয়টিও এক বড় সমস্যা। গত এক বছরে ১৫০টি পাথর নিক্ষেপের ঘটনায় ট্রেনের যাত্রী ও রেল কর্মচারীসহ দুই শতাধিক মানুষ আহত হয়েছে, মারা গেছে দুজন। বাংলাদেশ রেলওয়ে আইনে চলন্ত ট্রেনে পাথর নিক্ষেপের জন্য সামান্য অর্থ জরিমানার বিধান রাখা হয়েছে। এ আইন আরও কঠোর করতে হবে। পাশাপাশি জনসচেতনতা সৃষ্টির উদ্যোগ নিতে হবে।