নির্বাচনে বিএনপি ও ঐক্যফ্রন্ট

গতকাল রোববার ঢাকায় জাতীয় প্রেসক্লাবে এক সংবাদ সম্মেলনে জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের পক্ষে ড. কামাল হোসেন ঘোষণা করেছেন, তাঁরা আগামী ২৩ ডিসেম্বর অনুষ্ঠেয় একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে অংশ নেবেন। আমরা আশা করি, এই ঘোষণার মধ্য দিয়ে নির্বাচন নিয়ে বিদ্যমান অনিশ্চয়তা ও সংশয়ের অবসান ঘটবে। সব দলের অংশগ্রহণে একটি অবাধ, সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচনের পথ সুগম হবে। আমরা জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের এই সিদ্ধান্তকে স্বাগত জানাই। 

নির্বাচন সর্বোচ্চ মাত্রায় অংশগ্রহণমূলক হবে, এটাই গণতান্ত্রিক রাজনৈতিক ব্যবস্থার স্বাভাবিক প্রত্যাশা। কিন্তু বাংলাদেশে এই ক্ষেত্রে অতীতের অভিজ্ঞতা খুব প্রীতিকর নয়। এবার জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের পক্ষ থেকে কামাল হোসেন বলেছেন, আন্দোলনের অংশ হিসেবে তাঁরা এই ভোটযুদ্ধে অবতীর্ণ হচ্ছেন। একই সঙ্গে তিনি নির্বাচনের তফসিল এক মাস পিছিয়ে দেওয়ারও দাবি জানিয়েছেন।

বাংলাদেশের জনগণ বরাবরই উৎসবমুখর পরিবেশে ভোট দিয়ে তাঁদের প্রতিনিধি নির্বাচন করতে চান; কেননা নির্বাচনের দিনে একজন পূর্ণবয়স্ক
নাগরিক তাঁর রাজনৈতিক ক্ষমতা ও অধিকার অনুভব করতে পারেন। কিন্তু নির্বাচন কমিশনের দায়িত্ব পালনে ব্যর্থতা এবং রাজনৈতিক দলগুলোর ক্ষমতা ধরে রাখা বা যেকোনো মূল্যে ক্ষমতা ফিরে পাওয়ার জন্য জবরদস্তিমূলক আচরণের কারণে ভোটাররা অতীতে কখনো কখনো নির্বাচনে ভোটাধিকার প্রয়োগ করতে পারেননি।

২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারি অনুষ্ঠিত দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচন তেমনই একটি দৃষ্টান্ত। সেই নির্বাচনে ১৫৩টি আসনে ক্ষমতাসীন দলের প্রার্থীরা বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হয়েছেন। সে সময় আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে বলা হয়েছিল, বিএনপি নির্বাচনে আসেনি বলেই একতরফা নির্বাচন হয়েছে। তবে তাদের এই কথাও স্মরণ থাকা উচিত যে নিবন্ধিত ৩৯টি রাজনৈতিক দলের মধ্যে ২৭টিই ওই নির্বাচন বর্জন করেছিল, যা আমাদের নির্বাচনী ইতিহাসে এক ব্যতিক্রমী ঘটনা। কোনো নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতার সুযোগ বা পরিস্থিতি না থাকলে তা প্রহসনে পরিণত হতে বাধ্য।

বিএনপি ও তার সহযোগীদের নির্বাচনে অংশ নেওয়ার ঘোষণার মধ্য দিয়ে বলা যায়, বাংলাদেশ এখন নির্বাচনী ট্রেনে যাত্রা শুরু করেছে। এখন সেই যাত্রা সঠিক গন্তব্যে পৌঁছাতে পারবে কি না, তা নির্ভর করছে নির্বাচন কমিশন ও সরকারের ওপর। বিরোধী দলের সঙ্গে সংলাপে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা নির্বাচন অবাধ ও সুষ্ঠু হবে এবং সব প্রার্থী ও দলের জন্য লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড থাকবে বলে ঘোষণা দিয়েছেন। প্রধান নির্বাচন কমিশনার কে এম নুরুল হুদাও বলেছেন, নির্বাচনে সবার জন্য সমান সুযোগ নিশ্চিত করা হবে। নির্বাচনী আচরণবিধি যাতে সবাই মেনে চলে, সে বিষয়েও প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেওয়া হবে।

কিন্তু আমরা বেশ কিছুদিন ধরে লক্ষ করছি, ক্ষমতাসীন দল অবাধে নির্বাচনী প্রচারের লক্ষ্যে সভা-সমাবেশ করলেও বিরোধী দল কোনো কর্মসূচি নিলে তাকে নানাভাবে বাধাগ্রস্ত করা হয়েছে। ঢাকা ও রাজশাহীতে জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের সমাবেশের সময়ে এর দৃষ্টান্ত আমরা দেখেছি। এ সময়ে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী যে ভূমিকা রেখেছে তা পক্ষপাতদুষ্ট। নির্বাচনের সময় আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর এ ধরনের আচরণ অগ্রহণযোগ্য। তফসিল ঘোষণার পর এ বিষয়গুলো নজরদারির মধ্যে রাখা নির্বাচন কমিশনের দায়িত্ব।

জাতীয় ঐক্যফ্রন্টসহ অনেক দলই নির্বাচনে অংশ নেওয়ার ঘোষণা দিয়েও তফসিল কিছুদিনের জন্য পিছিয়ে দেওয়ার দাবি জানিয়েছে। আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদকও বলেছেন, নির্বাচন কমিশন তফসিল পেছালে তঁাদের আপত্তি থাকবে না। জোটের বিষয়েও তিনি সময়সীমা বাড়ানোর কথা বলেছেন। সে ক্ষেত্রে নির্বাচন কমিশনের উচিত হবে বিষয়টি পুনর্বিবেচনা করা এবং বিরোধী দলের যৌক্তিক দাবি মেনে নেওয়া।