প্রশাসনে বদলি

তফসিল ঘোষণার পর নির্বাচন কমিশন (ইসি) থেকে যে দুটি নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে, নির্বাচন সুষ্ঠু ও অবাধ করার ক্ষেত্রে তা খুবই গুরুত্বপূর্ণ বলে মনে করি। এর একটিতে বলা হয়েছে, নির্বাচনের কাজে নিয়োজিত ব্যক্তিদের অব্যাহতি না দেওয়া পর্যন্ত তাঁদের অন্যত্র বদলি বা ছুটি দেওয়া যাবে না। এই নির্দেশনা যাতে পালিত হয়, সে জন্য সব মন্ত্রণালয়-বিভাগ, সরকারি স্বায়ত্তশাসিত ও বেসরকারি অফিস-প্রতিষ্ঠান ও সংস্থাকে পরিপত্রের মাধ্যমে নির্দেশ দেওয়ার কথাও বলেছে ইসি। নির্বাচন কমিশন থেকে জনপ্রশাসনসচিব বরাবর পাঠানো চিঠিতে আরও বলা হয়, সংবিধান ও গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশের সংশ্লিষ্ট বিধান অনুযায়ী, নির্বাচনের কাজে সহায়তা দেওয়া সব নির্বাহী বিভাগের কর্তব্য। মন্ত্রিপরিষদ বিভাগকে দেওয়া আলাদা চিঠিতে ইসি বলেছে, নির্বাচনের দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তা-কর্মচারীদের সততা, নিষ্ঠা ও নিরপেক্ষতার সঙ্গে দায়িত্ব পালনের জন্য সবার সহযোগিতা প্রয়োজন।

তবে নির্বাচন কমিশনকে বুঝতে হবে পরিপত্র জারি বা নির্দেশনা দিলেই তাদের দায়িত্ব ও কর্তব্য শেষ হয়ে যায় না। সেই নির্দেশনা যাতে যথাযথভাবে পালিত হয়, সে বিষয়েও তাদের শক্ত ভূমিকা নিতে হবে। ইসিকে মনে রাখা প্রয়োজন এক জটিল পরিস্থিতিতে এই নির্বাচন হতে যাচ্ছে। দলীয় সরকারের অধীনে সুষ্ঠু নির্বাচনের নজির তেমন নেই। বিরোধী দল নির্দলীয় প্রশাসন তথা নির্বাচনকালীন সরকারের অধীনে নির্বাচন করার দাবি জানিয়েছিল। কিন্তু ক্ষমতাসীন দল সেই দাবি আমলে নেওয়ার প্রয়োজন বোধ করেনি।

বিরোধী দলের সঙ্গে সংলাপে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা নির্বাচনে লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড থাকবে বলে আশ্বাস দিয়েছিলেন। সেটি বাস্তবায়ন করার দায়িত্ব এখন কমিশনকে নিতে হবে। তফসিল ঘোষণার পর জনপ্রশাসন ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা ইসির এখতিয়ারে চলে গেছেন। কে কোথায় দায়িত্ব পালন করবেন, সেটি ঠিক করার দায়িত্ব ইসিরই। প্রধান বিরোধী দল বিএনপির অংশগ্রহণের মধ্য দিয়ে নির্বাচনটি অংশগ্রহণমূলক হবে সন্দেহ নেই। কিন্তু নির্বাচন শুধু অংশগ্রহণমূলক হলে হবে না, হতে হবে সুষ্ঠু ও পক্ষপাতমুক্ত। ভোটাররা যাতে নির্বিঘ্নে তাঁদের ভোটাধিকার প্রয়োগ করতে পারেন, সে জন্য একটি অভয় পরিবেশও তৈরি করতে হবে। কেবল বদলির তদারকি নয়, সিটি করপোরেশন নির্বাচনে প্রশাসন ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা যে পক্ষপাতমূলক আচরণ করেছেন, তার পুনরাবৃত্তি যাতে না ঘটে সে ব্যাপারেও ইসিকে সর্বোচ্চ সজাগ থাকতে হবে। অপরাধী গ্রেপ্তার ও অবৈধ অস্ত্র উদ্ধারেও তাদের শতভাগ নিরপেক্ষ থাকতে হবে।

 প্রতিবার নির্বাচনকে কেন্দ্র করে কালোটাকা ও পেশিশক্তির দৌরাত্ম্য দেখা যায়। এবারও বিভিন্ন পক্ষ সেই একই পথ ধরার চেষ্টা করবে। কিন্তু নির্বাচন কমিশন সেসব অনাচার কীভাবে মোকাবিলা করে, সেটাই দেখার বিষয়। তবে আমরা মনে করি, প্রতিদ্বন্দ্বী রাজনৈতিক দল ও প্রার্থীদের পক্ষ থেকে আসা অভিযোগ, আপত্তি ও দাবিগুলো আমলে নিয়ে কমিশন সুবিবেচনাপ্রসূত সিদ্ধান্ত নিতে পারলে কঠিন হলেও একটি সুষ্ঠু ও অবাধ নির্বাচন করা একেবারে অসম্ভব হবে না।

অন্যদিকে নির্বাচন কমিশন মার্কেট, রাস্তাঘাট, যানবাহন ও সরকারি-বেসরকারি স্থাপনাসহ বিভিন্ন জায়গায় যাঁদের নামে পোস্টার, লিফলেট, ব্যানার, ফেস্টুনসহ প্রচারসামগ্রী রয়েছে, তা নিজ খরচে অপসারণের নির্দেশ দিয়েছে। এই নির্দেশ মূলত ক্ষমতাসীন দলের লোকজনকেই বাস্তবায়ন করতে হবে। কেননা এসব পোস্টার–ব্যানারের প্রায় পুরোটাই আওয়ামী লীগের মনোনয়নপ্রত্যাশী ও তাঁদের অনুসারীদের। তাঁদের উৎকট আত্মপ্রচারে নগরবাসী বিরক্ত হলেও নিরুপায়। এ ব্যাপারে সিটি করপোরেশনের যে দায়িত্ব ছিল, তা পালন করতে তারা পুরোপুরি ব্যর্থ হয়েছে। এখন নির্বাচন কমিশনের দায়িত্ব হচ্ছে এসব অপসারণে সংশ্লিষ্টদের বাধ্য করে নির্বাচনী প্রচার-প্রচারণায় সবার জন্য সমান সুযোগ তৈরি করা।