ফের চলন্ত বাসে নারী খুন

নারী নিগ্রহ, ধর্ষণ কিংবা ধর্ষণের পর হত্যা এ দেশে নতুন কিছু নয়। এগুলো বলা যায় প্রাত্যহিক ঘটনা হয়ে উঠেছে। কিন্তু প্রাত্যহিকতার মধ্যেও কিছু ঘটনা আছে যেগুলো নৃশংসতা ও বিকারগ্রস্ততার মাপকাঠিতে বিশিষ্টতা দাবি করে ফেলে। গত শুক্রবার রাতে সাভারের আশুলিয়ায় চলন্ত বাসে এক নারীকে হত্যার ঘটনা সেই বিশিষ্টতার দাবিদার।

সংবাদপত্রের খবর বলছে, জরিনা খাতুন (৪৫) এবং তাঁর ৭০ বছর বয়সী বাবা আকবর হোসেন টাঙ্গাইল যাওয়ার জন্য আশুলিয়া থেকে বাসে উঠেছিলেন। বাসে তাঁরা ছাড়া আরও চার–পাঁচজন যাত্রী ছিলেন। কিছু দূর যাওয়ার পর বাসটি আবার আশুলিয়ার দিকে ফিরে আসা শুরু করে। এরপরই আচমকা যাত্রীবেশী দুর্বৃত্তরা তাঁদের মারধর করে এবং আকবরকে জোর করে বাস থেকে নামিয়ে দিয়ে জরিনাকে নিয়ে চলে যায়। আকবর পুলিশকে জানানোর পর পুলিশ আধা কিলোমিটার দূরে গিয়ে জরিনার লাশ রাস্তার পাশ থেকে উদ্ধার করে।

গত বছরের আগস্টে টাঙ্গাইলের মধুপুরে চলন্ত বাসে ধর্ষণের পর গলা টিপে ও ঘাড় মটকে এক তরুণীকে হত্যা করে দুর্বৃত্তরা। তারও আগে ধামরাইয়ে চলন্ত বাসে গণধর্ষণের শিকার হন আরও এক তরুণী। সর্বশেষ জরিনা হত্যার উদ্দেশ্য পরিষ্কার নয়। জরিনা ও তাঁর বাবার কাছ থেকে কিছু ছিনতাইও করা হয়নি। জরিনাকে হত্যার আগে ধর্ষণ করা হয়েছে কি না, তা-ও নিশ্চিত হওয়া যায়নি।

মহাসড়কে যাত্রীবাহী যেসব যান চলাচল করে, তার ভেতরে নিরাপত্তা বিধান করা রাষ্ট্রের দায়িত্ব এবং এসব যানের কর্মীদের ওপর আস্থা ও ভরসা রাখা যাবে—এটিই সাধারণ বিষয়। কিন্তু প্রশাসনের গাফিলতি ও কিছু অপেশাদার পরিবহনকর্মীর পৈশাচিক আচরণের জন্য সামাজিক সম্পর্কে নিহিত আস্থা ও ভরসার জায়গা নষ্ট হচ্ছে। মানুষের প্রতি মানুষের সাধারণ আস্থা ও বিশ্বাস চূর্ণ হয়ে যাচ্ছে। এটি ঘোর আশঙ্কার কথা।

গণপরিবহনের মতো প্রাত্যহিক প্রয়োজনীয় একটি খাত যদি এভাবে আতঙ্কজাগানিয়া হয়ে ওঠে তাহলে সাধারণ মানুষের পক্ষে চূড়ান্ত অসহায়ত্ব বোধ করা ছাড়া আর কী করার থাকে! খোদ পুলিশের পক্ষ থেকেই বলা হচ্ছে আশুলিয়া সেতু থেকে বেড়িবাঁধ পর্যন্ত এলাকা অপরাধপ্রবণ। এ জন্য রাতে ওই এলাকায় পুলিশের বিশেষ টহলের ব্যবস্থা থাকে। যেহেতু এলাকাটি অপরাধপ্রবণ, সেহেতু শুধু বাড়তি টহল দিয়ে একটি এলাকার অপরাধপ্রবণতা কমানো সম্ভব হবে না। এর জন্য প্রয়োজনে শুদ্ধি অভিযান চালানো দরকার। সরকারি তৎপরতার বিষয়ে জনগণের আস্থা ফেরানো দরকার।

দুঃখের বিষয়, এ দেশে প্রতিনিয়ত বহু নারীকে জরিনার মতো ভাগ্য বরণ করতে হয়। কোথাও কোথাও প্রতিবাদ ওঠে। কিন্তু শেষতক প্রতিবাদীরা জানেন, তাঁরা যখন প্রতিবাদ শেষ করে বিষয়ান্তরে চলে যাবেন, তখন সামনে পড়ে থাকবে অনতিক্রম্য অন্যায়-অধ্যুষিত এক সমাজ, যার অসুস্থচিত্ততার নিরাময়ের পথ কারও জানা নেই।