ইসির বিলম্বিত নিদ্রাভঙ্গ

গতকাল বিএনপি অফিসের সামনের সড়কে দলীয় মনোনয়নপ্রত্যাশী ও তাঁদের সমর্থকদের সঙ্গে পুলিশের সংঘর্ষ, পুলিশের গাড়িতে আগুন দেওয়া, কর্মীদের ওপর পুলিশের ফাঁকা গুলি ও কাঁদানে গ্যাসের শেল নিক্ষেপের ঘটনা অত্যন্ত দুঃখজনক ও নিন্দনীয়। আমরা সড়ক বন্ধ করে মনোনয়ন ফরম সংগ্রহ ও জমা দেওয়ার এই মহড়ার বিরোধী। আমরা এ ঘটনার সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ তদন্ত দাবি করছি।

প্রত্যক্ষদর্শীদের উদ্ধৃতি দিয়ে সংবাদমাধ্যমের খবরে বলা হয়, বেলা পৌনে একটার দিকে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাস একটি মিছিল নিয়ে ঢাকা-৮ আসনের জন্য মনোনয়ন ফরম কিনতে নয়াপল্টনে দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে আসেন। ওই সময় পুলিশ সেখান থেকে মিছিল সরিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করে। তবে কর্মী-সমর্থকেরা সরে না যাওয়ায় একপর্যায়ে পুলিশের গাড়ি মিছিলের ওপর উঠে গেলে কয়েকজন আহত হন। এরপর দুই পক্ষের মধ্যে সংঘর্ষ হয়। পুলিশ প্যালেট বুলেট ও কাঁদানে গ্যাসের শেল ছোড়ে।

আওয়ামী লীগ ও বিএনপি নেতারা এ ঘটনার জন্য একে অপরকে দায়ী করেছেন। দুই পক্ষের এই পারস্পরিক দোষারোপ সত্য উদ্‌ঘাটন কিংবা জনজীবনে শান্তি ফিরিয়ে আনতে সহায়ক হবে না। নির্বাচন কমিশনের উচিত হবে অবিলম্বে সংশ্লিষ্ট সবাইকে আচরণবিধি মানতে বাধ্য করা।

নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার পর বিভিন্ন দলের নেতা-কর্মীরা মিছিল, সমাবেশ ও শোডাউন করে মনোনয়ন ফরম সংগ্রহ ও জমা দেওয়ার মহড়া দিতে থাকেন। ধানমন্ডিতে আওয়ামী লীগ সভানেত্রীর অফিসের সামনে কয়েক দিন ধরে মনোনয়ন ফরম সংগ্রহ ও জমা দেওয়ার নামে শোডাউন ও মিছিলের মহড়া চললেও নির্বাচন কমিশন ছিল নির্বিকার। এরপর দুদিন বিএনপির নেতারা দলীয় অফিসের সামনেও রাস্তা বন্ধ করে একই ধরনের মিছিল-শোডাউন করেন। শহরের ব্যস্ততম সড়কগুলোতে এভাবে মিছিল-সমাবেশ করায় জনজীবন প্রায় স্থবির হলেও এর প্রতিকারে প্রথমে ইসির পক্ষ থেকে কোনো ব্যবস্থাই নেওয়া হয়নি। মঙ্গলবার হঠাৎ করেই রিটার্নিং কর্মকর্তা ও সহকারী রিটার্নিং কর্মকর্তাদের কাছে লেখা চিঠিতে তঁারা জানিয়ে দেন, এভাবে মনোনয়ন ফরম সংগ্রহ ও জমা দেওয়া রাজনৈতিক দল ও প্রার্থীর আচরণবিধির সুস্পষ্ট লঙ্ঘন। এটি অনেকটা কুম্ভকর্ণের ঘুম ভাঙার মতো। রামায়ণে বর্ণিত কুম্ভকর্ণের ঘুমের জন্য কারও ক্ষতি না হলেও ইসির দিবানিদ্রা ও নিষ্ক্রিয়তার জন্যই বড় ধরনের সংঘর্ষের ঘটনা ঘটল।

এ ব্যাপারে রাজনৈতিক দলের নেতারাও বিচক্ষণতার পরিচয় দিয়েছেন বলা যাবে না। তাঁদের উচিত ছিল এ রকম মহড়াকে নিরুৎসাহিত করা। আওয়ামী লীগ থেকে অনলাইনে মনোনয়ন ফরম জমা দেওয়ার বিকল্প ব্যবস্থা রাখলেও খুব কম মনোনয়নপ্রত্যাশীই সেই সুযোগ নিয়েছেন। দেশের ৩০০ আসনে নির্বাচন হচ্ছে। ঢাকায় এসে সব দলের সব মনোনয়নপ্রত্যাশীর জনপ্রিয়তার মহড়া দেখানো কোনোভাবেই সুস্থ রাজনৈতিক সংস্কৃতির পরিচায়ক নয়। যিনি সত্যিকার জনপ্রতিনিধি, তাঁর কর্তব্য হবে নিজের নির্বাচনী এলাকার ভোটারদের কাছে থাকা এবং তাঁদের অভাব-অভিযোগের কথা শোনা।

নির্বাচন কমিশনকে মনে রাখতে হবে, এক জটিল পরিস্থিতিতে দলীয় সরকারের অধীনে তারা একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন করতে যাচ্ছে। প্রতিদ্বন্দ্বী দল ও প্রার্থীদের আস্থা অর্জনে তাদের সর্বশক্তি নিয়োগ করতে হবে। প্রধান নির্বাচন কমিশনার কে এম নুরুল হুদা গতকাল বুধবার রিটার্নিং কর্মকর্তাদের সঙ্গে মতবিনিময়কালে সবার প্রতি সমান সুযোগ তৈরি করার যে আহ্বান জানিয়েছেন, দেশবাসী তার বাস্তবায়নই দেখতে চাইবে। যেহেতু দলীয় সরকারের অধীনে এবং সংসদ বহাল রেখে নির্বাচনটি হচ্ছে, সেহেতু তফসিলের পর মন্ত্রী ও সাংসদদের কার্যবিধি ঠিক করাও ইসির কর্তব্য বলে মনে করি।