দাউদকান্দির উপস্বাস্থ্যকেন্দ্র

দেশের স্বাস্থ্য খাতে কোন মাত্রায় অব্যবস্থাপনা বিরাজ করছে, তা বোঝা যায় কুমিল্লার দাউদকান্দি উপজেলার মারুকা ইউনিয়নের স্বপাড়া উপস্বাস্থ্যকেন্দ্র ছয় মাস ধরে বন্ধ থাকার ঘটনায়। ভবন ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে পড়ায় ছয় মাস আগে উপস্বাস্থ্যকেন্দ্রটি বন্ধ করে দেওয়া হয়। কিন্তু পরিতাপের বিষয় হচ্ছে, ভবনটি সংস্কার করার ব্যাপারে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের কোনো উদ্যোগ নেই।

প্রথম আলোয় প্রকাশিত খবর অনুযায়ী, স্বপাড়া উপস্বাস্থ্যকেন্দ্রটি ১৯৬১ সালে প্রতিষ্ঠিত হয়। এই কেন্দ্রে বিদ্যুৎ-সংযোগ নেই, শৌচাগার নেই, এমনকি কোনো সীমানাপ্রাচীরও নেই। সর্বশেষ সংস্কার হয় দুই বছর আগে। তখন কিছু জায়গায় আস্তর দেওয়া হয় ও রং করা হয়। কিন্তু এরপর থেকেই ভবনের পাঁচটি কক্ষের ছাদ থেকে নিয়মিত পলেস্তারা খসে পড়া শুরু হয়। ধীরে ধীরে ভবনটি ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে ওঠে। এতে রোগী ও চিকিৎসকদের মধ্যে আতঙ্ক দেখা দেয়। এ পরিস্থিতিতে গত ১ মে উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা কেন্দ্রটির ভেতরে চিকিৎসা কার্যক্রম বন্ধ করে দেন। কেন্দ্রের বাইরে সেবা চালু রাখার কথা বলা হলেও কার্যত তা চলছে না। এতে মারুকা ইউনিয়নের ১৭টি গ্রামের প্রায় ১৭ হাজার মানুষকে দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে। তাদের এখন ১০ কিলোমিটার দূরে গিয়ে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চিকিৎসা নিতে হচ্ছে। এতে তাদের অর্থ ও সময় দুটোরই অপচয় হচ্ছে।

এ ব্যাপারে উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তার বক্তব্য হচ্ছে, তিনি নতুন ভবন চেয়ে কুমিল্লার স্বাস্থ্য প্রকৌশলী বরাবর লিখিত আবেদন করেছেন এবং সিভিল সার্জনকে অনুলিপি দিয়েছেন। সিভিল সার্জন জানিয়েছেন, নতুন ভবন নির্মাণের প্রস্তাব জেলা স্বাস্থ্য প্রকৌশল কার্যালয়ের মাধ্যমে ঢাকার স্বাস্থ্য প্রকৌশল বিভাগে পাঠানো হয়েছে। কিন্তু এতে যে স্বাস্থ্যকেন্দ্রটির নতুন ভবন নির্মাণের কাজ খুব দ্রুত শুরু হবে, তা বলা যাচ্ছে না। কেননা, জেলা স্বাস্থ্য সহকারী প্রকৌশলী জানিয়েছেন, পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনার তালিকা সর্বশেষ ২০১৭ সালের জুনে ঢাকায় পাঠানো হয়েছে। তখন স্বপাড়া উপস্বাস্থ্যকেন্দ্রের বিষয়ে কোনো আবেদন সংযুক্ত করা হয়নি। ২০১৯ সালের জুনে তালিকা সংশোধনীর সময় স্বাস্থ্যমন্ত্রীর সুপারিশক্রমে তা সংযুক্ত করা হবে। তার মানে, ২০১৯ সালের জুন মাসের আগে উপস্বাস্থ্যকেন্দ্রটির নতুন ভবন পাওয়ার আশা করা বৃথা। তাহলে কি তত দিন মারুকা ইউনিয়নের ১৭টি গ্রামের বাসিন্দা দুর্ভোগের মধ্যেই থাকবে? তাদের স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিত করার বিষয়টি কী হবে?

আমরা এ ব্যাপারে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়, স্বাস্থ্য অধিদপ্তরসহ সংশ্লিষ্ট সব কর্তৃপক্ষকে হস্তক্ষেপের আশা করছি। আমরা চাই, সরকার বিশেষ ব্যবস্থায় জরুরি ভিত্তিতে এই উপস্বাস্থ্যকেন্দ্রের নতুন ভবন নির্মাণের কাজ শুরু করুক। দূর হোক মারুকা ইউনিয়নবাসীর দুর্ভোগ।