আসন্ন শীতের কৌতুক

আনিসুল হক
আনিসুল হক

এক বাঙালি ভদ্রলোক একখণ্ড সাদা সেলাইবিহীন কাপড় পরিধান করে থাকেন।

একদিন তিনি রাস্তা দিয়ে ওই একখণ্ড সাদা কাপড় পরে যাচ্ছিলেন। এক যুবকের সাইকেলের হ্যান্ডেলে লেগে তাঁর সেই কাপড় ছিঁড়ে যায়। তিনি তখন সাইকেলের হ্যান্ডেল খপ করে ধরে ফেলেন। বলেন, ‘কই যান, আমার পরনের কাপড় ছিঁড়ে গেছে। এটার দাম দিয়ে যান।’

যুবক বলে, ‘আপনার কাপড়ের দাম কত?’

‘৫০০ টাকা।’

‘আচ্ছা নিন আপনার ৫০০ টাকা।’ যুবক মানিব্যাগ বের করে টাকা দেয়। ভদ্রলোক সেই ৫০০ টাকার নোট নিয়ে নেন। তারপর তিনি নিজের পথে চলতে আরম্ভ করলে যুবক তার গতিরোধ করে বলে, ‘কোথায় যাচ্ছেন? আমার কাপড় দিয়ে যান।’

‘আমার কাপড়?’

‘হ্যাঁ। আমার কাপড়। আপনি বলেছেন এটার দাম ৫০০ টাকা। আমি দিয়েছি আপনাকে ৫০০। কাজেই এই কাপড় আমার। আপনি এটা খুলুন।’

‘এটা খুলে আমি কি জন্মদিনের পোশাকে পথ হাঁটব?’

‘সেটা আপনার ব্যাপার। আমি দাম দিয়েছি। আপনি নিয়েছেন। এখন এই কাপড় আমার। আপনি এটা আমাকে দিতে বাধ্য।’
‘আচ্ছা আচ্ছা। নাও বাপু, তোমার ৫০০ টাকা। যাও।’
তখন যুবক বলে, ‘আমাকে পাঁচ হাজার টাকা দিতে হবে।’
‘কেন?’
‘আমার কাপড়। আমি পাঁচ হাজারের নিচে বেচব না। আপনি কিনলে কেনেন, না কিনলে চলে যান। কাপড়টা খুলে রেখে যান।’
ততক্ষণে ভিড় জমে গেছে। জনতা বলে, ‘সাইকেলওয়ালার কথা ঠিক। আপনি দেন পাঁচ হাজার টাকা।’
অগত্যা ভদ্রলোক পাঁচ হাজার টাকা দিতে বাধ্য হলেন।
এটাকে বলে নেগোসিয়েশন। দর-কষাকষি। এটাতে কেউ জেতে, কেউ হারে। তবে এই ভদ্রলোক এই পাঁচ হাজার টাকার শোক কি আর ভুলতে পারবেন? তাঁর সবচেয়ে বেশি করে যে কথাটা মনে হবে তা হলো, ‘কেন আমি সাইকেলওয়ালাকে আটকাতে গিয়েছিলাম। একটুখানি কাপড় ছিঁড়েছিল, সেটা তো আমি মেনে নিয়েইছি, এখনো সেই ছেঁড়া কাপড়ই পরে আছি, তাহলে মাঝখান থেকে আমার পাঁচ হাজার টাকা নাই হয়ে গেল কীভাবে?’

২.
বাবা বিবাহযোগ্য ছেলেকে বললেন, ‘বেটা, তুমি কিন্তু আমার পছন্দমতো মেয়েকে বিয়ে করবে।’
ছেলে বলল, ‘কক্ষনো না।’
বাবা বললেন, ‘করো। কারণ, মেয়েটা আর কেউ নয়, সে হলো বিল গেটসের মেয়ে।’
ছেলে বলল, ‘তাহলে আমি রাজি হতে পারি।’
বাবা গেলেন বিল গেটসের কাছে, ‘আপনার মেয়ের সঙ্গে আমার ছেলের বিয়ে।’
বিল গেটস বললেন, ‘হতেই পারে না।’
‘হতে পারে, কারণ সে বিশ্বব্যাংকের সিইও।’
‘আচ্ছা, তাহলে ঠিক আছে’—বললেন বিল গেটস।
বাবা গেলেন বিশ্বব্যাংকের প্রেসিডেন্টের কাছে, ‘আমার ছেলেকে আপনার ব্যাংকের সিইও বানাবেন।’
‘প্রশ্নই আসে না।’
‘আসে। কারণ, সে বিল গেটসের জামাতা।’
‘ওকে। তাহলে হতে পারে।’
এই ব্যাপারটাকে বলা হয় ব্যবসা।

৩.
একজন নতুন সেলসম্যানকে নিয়োগ দেওয়া হয়েছে এক বিশাল ডিপার্টমেন্ট স্টোরে। এই স্টোরে সবকিছু পাওয়া যায়। দিনের শেষে তাকে জিজ্ঞেস করা হলো, ‘তুমি কয়জন খদ্দের ধরতে পেরেছ?’
‘মাত্র একজন।’
‘মাত্র একজন খদ্দের ধরলে তো চলবে না। কত বিক্রি করেছ?’
‘তিন কোটি টাকা?’
‘কী বলো? কেমন করে?’
‘খদ্দের ভদ্রলোক আমার কাছে প্রথমে কিনলেন একটা বড়শি। তখন তাঁকে আমি একটা ছিপ গছিয়ে দিলাম। তারপর বললাম, মাছ ধরতে যাবেন, একটা ভালো বোট কিনুন। তিনি বোট কিনলেন। তারপর আমি তাঁকে বললাম, বোট যে নদীতে নিয়ে যাবেন, সে জন্য তো ভালো গাড়ি লাগবে। তখন তিনি একটা গাড়িও কিনলেন।’
‘বলো কী? একটা বড়শি কিনতে এসে লোকটা এত কিছু কিনল!’
‘না, তিনি বড়শি কিনতে আসেননি।’
‘কী কিনতে এসেছিলেন?’
তিনি এসেছিলেন স্ত্রীর জন্য মাথাব্যথার ট্যাবলেট কিনতে। আমি তাঁকে বোঝালাম, স্ত্রীর মাথাব্যথা করলে আপনি মাছ ধরতে বাইরে থাকুন। সেটাই স্ত্রীর মাথাব্যথার সবচেয়ে ভালো চিকিৎসা।
এটাকে বলা হয় সেলসম্যানশিপ।

৪.
একবার অলিম্পিকে দুজন প্রতিযোগী দৌড়াল। একজন আমেরিকান, একজন রাশিয়ান। আমেরিকান দৌড়বিদ সোনা জিতল।
রাশিয়ার কাগজ প্রাভদায় খবর ছাপা হলো। এবার অলিম্পিক দৌড়ে রাশিয়া খুব ভালো করেছে, তারা দ্বিতীয় হয়েছে। আমেরিকান দৌড়বিদ খুব খারাপ করেছে। তারা শেষের জনের সামনে ছিল।
এটাকে বলা হয় রাষ্ট্রীয় প্রচারমাধ্যম।

৫.
রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ব্রেজনেভ ফলের দোকানে গেলেন। সেখানে একটা মাত্র তরমুজ ছিল। ব্রেজনেভ বললেন, ‘তোমার তরমুজের দাম কত?’
‘কোন তরমুজটা?’
তোমার দোকানে তো মাত্র একটা তরমুজ। আবার কোন তরমুজটা বলছ কেন?’
‘জি, এটার দাম ২০০ টাকা।’
ব্রেজনেভ টাকা দিলেন। দোকানি বলল, ‘কোন ব্রেজনেভকে দেব?’
‘তুমি কতজন ব্রেজনেভ দেখছ?’
‘একজনকেই দেখছি। কিন্তু আপনিই তো শিখিয়েছেন, আমাদের বেছে নিতে হবে।’
এটাকে বলা হয় নির্বাচন।

আনিসুল হক: প্রথম আলোর সহযোগী সম্পাদক ও সাহিত্যিক