সংখ্যালঘুদের নিরাপত্তা

যুদ্ধাপরাধের দায়ে জামায়াত নেতা আবদুল কাদের মোল্লার ফাঁসি কার্যকর হলো, আর তার প্রতিক্রিয়ায় ভাঙচুর, লুটপাট, অগ্নিসংযোগের শিকার হলেন সংখ্যালঘু হিন্দু সম্প্রদায়ের মানুষেরা! কাদের মোল্লার ফাঁসি কার্যকর হওয়ার সঙ্গে সাতক্ষীরা জেলার হিন্দু সম্প্রদায়ের লোকজনের কী সম্পর্ক? কেন ফাঁসি কার্যকর হওয়ার পর থেকে সাতক্ষীরা সদর, দেবহাটা, আশাশুনি, কালীগঞ্জ ও তালা উপজেলায় তাঁদের ঘরবাড়ি ও ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানগুলোতে ভাঙচুর, লুটপাট ও অগ্নিসংযোগ শুরু হয়েছে? গত বৃহস্পতি থেকে রোববার পর্যন্ত ওই অঞ্চলে এমন আক্রমণের শিকার হয়েছে হিন্দুদের ৩৬টি বাড়ি ও ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান। কেন? কী অপরাধ তাঁদের?

সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের ওপর এমন বর্বর আক্রমণ শুধু সাতক্ষীরা জেলাতেই সীমাবদ্ধ নয়, লালমনিরহাট ও জয়পুরহাট জেলাতেও তাঁরা আক্রান্ত হয়েছেন। যেকোনো ছুতোনাতায় সংখ্যালঘুদের বাসস্থান, ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান ও উপাসনালয়ে আক্রমণ চালানোর ঘটনা দিনের পর দিন ঘটেই চলেছে, এর যেন প্রতিকার নেই। সাতক্ষীরায় ঘটনার শিকার সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের মানুষ ও প্রত্যক্ষদর্শীদের অভিযোগ, জামায়াত-শিবিরের লোকজন এসব আক্রমণ চালিয়েছে। জামায়াত-শিবির তা অস্বীকার করে দোষারোপ করেছে ক্ষমতাসীন দলের ওপর। এমন প্রবণতা সারা দেশেই কমবেশি লক্ষ করা যায়; রাজনৈতিক দলগুলো পরস্পরকে দোষারোপ করেই দায়মুক্ত থাকতে চায়। কিন্তু আক্রান্তদের অভিযোগই সর্বাধিক গুরুত্বের সঙ্গে বিবেচনায় নেওয়া উচিত। সাতক্ষীরা জেলাজুড়ে জামায়াত-শিবিরের সহিংস তৎপরতা এতটাই দৃশ্যমান যে, তারা উদোর পিণ্ডি বুধোর ঘাড়ে চাপানোর চেষ্টা করে কোনো ফল পাবে না। প্রতিটি সহিংস অপরাধের জন্য তাদের আইনের আওতায় আনতে হবে।

সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের নিরাপত্তার ব্যাপারে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী কর্তৃপক্ষেরও যথেষ্ট মনোযোগ লক্ষ করা যায় না। বিভিন্ন ঘটনার জের ধরে সংখ্যালঘুদের ওপর আক্রমণের সুযোগ নেওয়ার অপপ্রয়াস থাকে। কাদের মোল্লার ফাঁসি কার্যকর হওয়ার ঘটনায়ও এমন আশঙ্কা আগে থেকেই ছিল। আগাম সতর্কতা থেকে কিছু পদক্ষেপ নেওয়া হলে হামলাকারীরা এত নির্বিঘ্নে তাদের অপকর্ম চালাতে পারত না।

যেকোনো অস্থিতিশীলতার প্রথম শিকার হওয়া থেকে সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের লোকজনকে রক্ষা করার দায়িত্ব শুধু রাষ্ট্র ও সরকারের নয়, রাজনৈতিক দলগুলোরও বটে।