ইইউর অনুমোদনের পর কী ঘটবে?

অবশেষে যুক্তরাজ্যের সঙ্গে বিচ্ছেদ চুক্তি অনুমোদন করেছে ইউরোপীয় ইউনিয়ন (ইইউ)। গত রোববার ব্রাসেলসে ইউরোপীয় কাউন্সিলের এক বিশেষ 

বৈঠকে ইইউর ২৭টি দেশের নেতারা এই চুক্তি অনুমোদন করেন।

যদিও ইইউ বিচ্ছেদ চুক্তিকে সমর্থন করেছে কিন্তু এরপরও এ চুক্তি সহজে বাস্তবায়ন হবে, এমনটা মনে হচ্ছে না। এই চুক্তি এখন যুক্তরাজ্যের পার্লামেন্টের সদস্যদের দ্বারা অনুমোদিত হতে হবে। কিন্তু দেখেশুনে মনে হচ্ছে, তাদের এমন করার কোনো ইচ্ছা নেই।

এই বিচ্ছেদ চুক্তি ইউরোপের সব রাজনীতিবিদ খোলামনে মেনে নেননি। বিরোধী লেবার পার্টি বলেছে, তারা এর বিরুদ্ধে ভোট দেবে। তবে তাদের এই ঘোষণায় বিস্ময়ের কিছু নেই। কারণ, তারা আগেই আভাস দিয়েছিল যে রক্ষণশীল সরকারের যেকোনো চুক্তির বিষয়ে লেবার পার্টির সাংসদেরা বিরোধিতা করবেন। বিস্ময়কর ঘটনা হচ্ছে, খোদ প্রধানমন্ত্রী থেরেসা মের দলের প্রায় ৮০ জন সাংসদ বলেছেন, তাঁরা এই বিচ্ছেদ চুক্তির বিপক্ষে ভোট দেবেন। তাঁদের মতে, এই চুক্তি যুক্তরাজ্যের স্বার্থবিরোধী। এ ছাড়া সবচেয়ে ভয়ংকর বিষয় হচ্ছে, যে দলের ওপর ভর করে থেরেসা মের সরকার টিকে আছে, সেই ডেমোক্রেটিক ইউনিয়নিস্ট পার্টি (ডিউপি) এই চুক্তি প্রত্যাখ্যান করেছে। যতক্ষণ পর্যন্ত এই বিরোধীদের একটি উল্লেখযোগ্য অংশ তাদের মন পরিবর্তন না করবে, ততক্ষণ পর্যন্ত এই চুক্তি অনুমোদনের কোনো আশা নেই। যদি এই বিচ্ছেদ চুক্তি পার্লামেন্টের অনুমোদন পেতে ব্যর্থ হয় তাহলে কী ঘটবে?  ইউরোপীয় ইউনিয়ন ইতিমধ্যেই বলে দিয়েছে যে তারা এ বিষয়ে আর কোনো ধরনের আলোচনা করবে না। তার মানে কি এটা চুক্তিবিহীন ব্রেক্সিট হবে?

থেরেসা মে হয়তো চুক্তিবিহীন ব্রেক্সিটের হুমকি দিয়ে চুক্তির পক্ষে সাংসদদের অনুমোদন আদায়ের চেষ্টা করতে পারেন। কিন্তু এ ক্ষেত্রে নিজ দলের সাংসদদের দ্বারা তাঁর ক্ষমতাচ্যুত হওয়ার ঝুঁকি রয়েছে। সম্প্রতি কনজারভেটিভ পার্টির ব্রেক্সিটপন্থী সাংসদদের সংগঠন ‘ইউরোপিয়ান রিসার্চ গ্রুপ’-এর চেয়ারম্যান জ্যাকব রিচ প্রধানমন্ত্রী মের প্রতি অনাস্থা ভোট চেয়ে সংশ্লিষ্ট কমিটির কাছে চিঠি দিয়েছিলেন। কিন্তু তাঁর সেই উদ্যোগ ব্যর্থ হয়েছে। কারণ, তাঁর দলের সাংসদদের অনেকেই এটা করতে রাজি হননি। মের দলের অনেক সাংসদ এই বিচ্ছেদ চুক্তি পছন্দ করেননি। কিন্তু তার অর্থ এই নয় যে তাঁরা অন্য কোনো প্রধানমন্ত্রী চান।

লেবার পার্টি আশা করছে যে বিচ্ছেদ চুক্তির বিপক্ষে ভোট পড়লে সরকার একটি সাধারণ নির্বাচনের ডাক দেবে। আর তখন লেবার পার্টি যদি নির্বাচনে জয়লাভ করে, তাহলে তারা চুক্তির শর্তগুলো নিয়ে পুনরায় আলোচনা করার উদ্যোগ নেবে। দলটি চাইছে নরওয়ের আদলে ব্রেক্সিট চুক্তি, যা কিনা অনেক নমনীয়।

তবে এটা স্পষ্ট নয় যে বিচ্ছেদ চুক্তির বিপক্ষে ভোট পড়লে কীভাবে সাধারণ নির্বাচন হবে আর তাতে লেবার পার্টিই বা কীভাবে জিতবে। যদি লেবার পার্টি কনজারভেটিভ পার্টিকে সঙ্গে নিতে পারে, তাহলে লেবার পার্টির সরকার গঠনের সম্ভাবনা রয়েছে। কিন্তু টোরি সাংসদেরা হয়তো বিচ্ছেদ চুক্তির বিপক্ষে যেতে পারে, কিন্তু তাই বলে তাঁরা তাঁদের নিজ দলের সরকারের পতন চান না।

থেরেসা মে সরকারের সবচেয়ে বড় হুমকি হচ্ছে ডিইউপি। বিচ্ছেদ চুক্তির বিরুদ্ধে ভোট দেওয়ার কথা ঘোষণা করার পর দলটি পার্লামেন্টে সরকারের উত্থাপিত বাজেট আইনের কিছু অংশের পক্ষে ভোট দিতে অস্বীকার করেছে এবং তাদের অসন্তোষ প্রকাশ করেছে। থেরেসা মের প্রতি ডিইউপির বার্তা স্পষ্ট, ‘সেটাই করো, যা আমরা বলছি, তা না হলে আমরা তোমার সরকার চালানোকে অসম্ভব করে তুলব।’

বিচ্ছেদ চুক্তির বিষয়ে ডিইউপির বিরোধিতার কারণে থেরেসা মেকে হয়তো বিকল্প উপায় খুঁজে বের করতে বাধ্য করবে। কিন্তু এটা স্পষ্ট যে মের ব্রেক্সিট চুক্তি এখন যে অবস্থায় আছে, তাতে পার্লামেন্টের অনুমোদন পাওয়া যাবে না। তাহলে কী হবে? অনেকের মতে, কেবল ব্রিটিশ জনগণই এ ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নিতে পারে। এ জন্য দ্বিতীয় গণভোটের জোর দাবি উঠছে। মে চাইছেন না এ ধরনের দাবি উঠুক। কারণ, তিনি চান তাঁর বিচ্ছেদ চুক্তিটি অনুমোদিত হোক। লেবার পার্টিও চাইছে না দ্বিতীয় গণভোটের দাবি উঠুক, কারণ তারা চায় সাধারণ নির্বাচন হোক। কিন্তু এর কোনোটিই যদি না ঘটে, তাহলে দ্বিতীয় গণভোটই একমাত্র উপায়। আর তা না হলে ‘নো-ডিল ব্রেক্সিট’ বা কোনো চুক্তি ছাড়াই ব্রিটেনের ইইউ ত্যাগ করার একটা সম্ভাবনা তৈরি হবে। আগামী বছরের মার্চ মাসে ইইউ ছেড়ে যাওয়ার কথা রয়েছে ব্রিটেনের। ব্রিটেন কোনো সিদ্ধান্তে পৌঁছানোর আগেই যদি ওই তারিখ এসে যায়, তাহলে ব্রিটেনকে ইইউ ত্যাগ করতেই হবে।

ফোর্বস ম্যাগাজিন থেকে অনূদিত।

ফ্রান্সিস কপোলা ফোর্বস ম্যাগাজিনের জ্যেষ্ঠ প্রদায়ক