নিরাপদ খাবার প্রকল্প

বৃহস্পতিবার প্রথম আলোর রাজধানী পাতায় প্রকাশিত এক সচিত্র প্রতিবেদনের শিরোনাম ছিল ‘সফল হয়নি নিরাপদ খাবার প্রকল্প’। নিয়মিত সংবাদপত্র পড়েন, এমন যেকোনো নাগরিক এই সংবাদ শিরোনাম দেখে প্রশ্ন তুলতে পারেন: বাংলাদেশে কোন প্রকল্পটা সফলভাবে বাস্তবায়িত হয়? খুবই যৌক্তিক প্রশ্ন, কেননা, এই দেশে শত শতকোটি টাকার অনেক জনমুখী ও দরকারি প্রকল্প গ্রহণ করা হয়, কিন্তু সাফল্যের সঙ্গে বাস্তবায়িত হয়েছে, জনগণ তার সুফল পাচ্ছে, এমন অভিজ্ঞতা বিরল। অনেক প্রকল্প নেওয়া হয় যেন–বা শুধুই অর্থ খরচ করার জন্য।

জাতিসংঘের খাদ্য ও কৃষি সংস্থার অর্থায়নে ‘ইমপ্রুভিং ফুড সেফটি ইন বাংলাদেশ’ নামের একটি প্রকল্পের আওতায় ঢাকা মহানগরের রাস্তাঘাটে ভ্রাম্যমাণ খাবার বিক্রেতাদের জন্য ২০১৬ সালে ৩৮৩টি খাবার গাড়ি দেওয়া হয়েছিল। প্রতিটি গাড়িতে ছিল রান্নার জন্য একটি চুলা, জীবাণুমুক্ত খাবার তৈরি করার জন্য নিরাপদ পানি নিশ্চিত করতে বিশেষ প্রযুক্তির ফিল্টার ইত্যাদি। অর্থাৎ ঢাকার রাস্তাঘাটে যাঁরা নানা ধরনের খাবার কিনে খান, তাঁদের জীবাণুঘটিত রোগবালাইয়ের ঝুঁকি এড়ানোসহ সার্বিকভাবে স্বাস্থ্যসম্মত পথের খাবার (স্ট্রিট ফুড) কেনাবেচার একটা ব্যবস্থা স্বল্প পরিসরে শুরু হওয়ার কথা ছিল।

কিন্তু দুঃখের বিষয়, ২ কোটি ৮৬ লাখ টাকা খরচ করে বিতরণ করা ওই খাবার গাড়িগুলোর কিছু অব্যবহৃত অবস্থায় পড়ে আছে ঢাকার বিভিন্ন ফুটপাতে, আর কিছু গাড়িতে খাবার তৈরি ও পরিবেশন করা হচ্ছে আগের মতোই অস্বাস্থ্যকর পরিবেশে। অর্থাৎ প্রকল্পটির লক্ষ্য পূরণ হয়নি, প্রায় তিন কোটি টাকা পানিতে গেছে।

এখন স্বাভাবিক প্রশ্ন হচ্ছে প্রকল্পটি কেন সফল হলো না। এই ব্যর্থতার দায় কার? জবাবদিহি করবে কে? খাবার গাড়িগুলো বিতরণ করেছিল ঢাকার দুই সিটি করপোরেশন, প্রকল্পটি বাস্তবায়নের দায়িত্ব ছিল তাদেরই। খাবার গাড়িগুলো বিতরণের জন্য দোকানি নির্বাচন করেছিলেন ওয়ার্ড কাউন্সিলররা। দোকানিরা নিজের পকেট থেকে মাথাপিছু ১ হাজার ৪০০ টাকা খরচ করে ট্রেড লাইসেন্স নিয়েছিলেন। দুই সিটি করপোরেশনের স্বাস্থ্য কর্মকর্তারা প্রথম আলোকে বলেছেন, পুলিশের অসহযোগিতার কারণে এই ভ্রাম্যমাণ দোকানিরা ব্যবসা করতে পারেননি। আর পুলিশের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, ফুটপাতে বা রাস্তায় দোকান বসালে নিরাপত্তার জন্য তারা সেগুলো তুলে দেয়।

শাহবাগ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা আবুল হাসান প্রথম আলোকে বলেন, ‘ভ্রাম্যমাণ গাড়ি নামানোর সময় সিটি করপোরেশন আমাদের কিছু জানায়নি।’ কিন্তু উভয় সিটি করপোরেশনে স্বাস্থ্য কর্মকর্তাদের দাবি, এই প্রকল্প শুরুর সময় পুলিশসহ বিভিন্ন মহলের সঙ্গে তাঁরা একাধিকবার বৈঠক করেছেন। কিন্তু রাস্তায় গাড়ি নামানোর পরপরই পুলিশ এর বিরুদ্ধে অবস্থান নেয়। উভয় পক্ষের বক্তব্য থেকে একটা সমন্বয়হীনতার আভাস পাওয়া যাচ্ছে, যা দুঃখজনক। এই প্রকল্প সফলভাবে বাস্তবায়নের জন্য ঢাকা মহানগর পুলিশের উচিত ছিল দুই সিটি করপোরেশনকে সর্বাত্মকভাবে সহযোগিতা করা।