ফেলনা বোতল ফেলনা নয়

ভারতসহ বিভিন্ন দেশে পুরোনো প্লাস্টিকের ফেলনা বোতল বিক্রি করে বাংলাদেশের লাভবান হওয়ার খবরটি আমাদের আশান্বিত করেছে।

গত শনিবার প্রথম আলোয় প্রকাশিত খবর অনুযায়ী, দেশজুড়ে কোমল পানীয়, পানি, ভোজ্যতেল ও অন্যান্য বিপণনে যে প্লাস্টিকের বোতল ব্যবহার করা হয়, সেগুলোই পরে বিদেশে রপ্তানি করা হয়। পরিচ্ছন্নতাকর্মী, পথশিশু ও ছিন্নমূল মানুষেরা রাস্তা ও পার্ক থেকে প্লাস্টিকের বোতল কুড়িয়ে ভাঙারির দোকানে বিক্রি করেন। পরে এসব দোকান থেকে সেগুলো কিনে নেন প্লাস্টিক প্রক্রিয়াকরণ কারখানার মালিকেরা। আবার ভাঙারি সংগ্রাহকেরা বাসাবাড়ি থেকে এসব প্লাস্টিকের বোতল কিনে তা কারখানার মালিকদের কাছে বিক্রি করেন।

এরপর কারখানার মালিকেরা এসব বোতল যন্ত্রে কুচি কুচি করেন। ওই কুচিই বিদেশে রপ্তানি করা হয়। এসব বোতলকুচি দিয়ে আমদানিকারক দেশের কারখানায় নানা পণ্য তৈরি করা হয়।

আগে চীন ছিল ফেলনা বোতলের বড় বাজার। কিন্তু অভ্যন্তরীণ কিছু সমস্যার কারণে এক বছর ধরে চীন বাংলাদেশ থেকে বোতলকুচি আমদানি করছে না। এখন এই বোতলকুচির বড় বাজার হিসেবে দাঁড়িয়েছে ভারত। এ ছাড়া তুরস্ক, তাইওয়ান, মালয়েশিয়া ও কোরিয়ায় রপ্তানি করা হয় বোতলকুচি। শুধু বেনাপোল স্থলবন্দর দিয়ে চলতি বছরের প্রথম ১০ মাসে ২৮ কোটি ২৬ লাখ টাকা মূল্যের প্লাস্টিকের বোতলকুচি রপ্তানি হয়। এখন মাসে গড়ে ৪ হাজার টন বোতলকুচি রপ্তানি করা হয়।

ফেলনা বোতল যে আসলে ফেলনা নয়, তা বাংলাদেশ প্রমাণ করেছে। এই বোতলকুচি রপ্তানিকে কেন্দ্র করে যশোর, খুলনা, চট্টগ্রামসহ দেশের বিভিন্ন এলাকায় প্লাস্টিক প্রক্রিয়াকরণ কারখানা গড়ে উঠেছে। এসব কারখানায় বহু মানুষের কর্মসংস্থান হয়েছে। পাশাপাশি পরিবেশও পরিচ্ছন্ন ও দূষণমুক্ত থাকছে। আমরা মনে করি, এ ধরনের শিল্পের বিকাশে সরকারের অনেক কিছু করার রয়েছে।

প্রথম আলোর খবর অনুযায়ী, সরকার আগে প্লাস্টিকের বোতলের কুচি রপ্তানিতে ১০ শতাংশ নগদ সহায়তা দিত। চলতি অর্থবছরে তা কমিয়ে ৫ শতাংশে নামিয়ে আনা হয়েছে। রপ্তানিকারকেরা এখন আগের ১০ শতাংশ ভর্তুকি বহাল রাখার দাবি করছেন। আমরা তাঁদের এই দাবির সঙ্গে একমত। রপ্তানিমুখী এই শিল্পকে এগিয়ে নিতে হলে সরকারের অবশ্যই ভর্তুকি দেওয়া উচিত। দরকার হলে ভর্তুকির পরিমাণ বাড়াতে হবে। এ ছাড়া চীনে আবার যাতে বোতলকুচি রপ্তানি করা যায়, সেই উদ্যোগ সরকারকে নিতে হবে।

ফেলনা প্লাস্টিকের বোতল থেকে তুলা উৎপাদন করে তা বিদেশে রপ্তানি করছেন আবুল কালাম মোহাম্মদ মুসা নামের মানিকগঞ্জের একজন উদ্যোক্তা। ফেলনা প্লাস্টিকের বোতলকে আর কী কী কাজে লাগানো যেতে পারে, সে ব্যাপারে সরকার গবেষণার উদ্যোগ নিতে পারে।