মনোনয়নের জন্য অবরোধ

দলীয় মনোনয়ন নিয়ে নেতা-কর্মীদের মধ্যে ক্ষোভ থাকা অস্বাভাবিক নয়। কিন্তু সেই ক্ষোভের মাত্রা কখনো রাষ্ট্রীয় সম্পদ বিনষ্ট কিংবা রেলপথ অবরোধের পর্যায়ে যেতে পারে না। এরপরও সেই অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনাটি ঘটেছে গত বৃহস্পতিবার নাটোরের বাগাতিপাড়ার মালঞ্চি এলাকায়।

পত্রিকার খবর ও প্রত্যক্ষদর্শীদের ভাষ্য অনুযায়ী, নাটোর-১ (লালপুর-বাগাতিপাড়া) আসনে আওয়ামী লীগের প্রার্থী হিসেবে ২৫ নভেম্বর শহিদুল ইসলাম ওরফে বকুলকে দলীয় মনোনয়নের চিঠি দেওয়া হয়। এর দুই দিন পর ২৭ নভেম্বর একই আসনে সাবেক সেনা কর্মকর্তা অবসরপ্রাপ্ত কর্নেল রমজান আলী সরকারকে আওয়ামী লীগের দলীয় মনোনয়নের আরেকটি চিঠি দেওয়া হয়। ফলে মনোনয়ন নিয়ে আওয়ামী লীগের মধ্যে অভ্যন্তরীণ দ্বন্দ্ব প্রকট হয়ে ওঠে। বকুলকে চূড়ান্ত মনোনয়ন দেওয়া হচ্ছে না মর্মে খবর ছড়িয়ে পড়লে বৃহস্পতিবার সকালে তাঁর সমর্থকেরা মালঞ্চি রেলগেট এলাকায় জড়ো হন। দুপুর ১২টার দিকে তাঁরা লাইনের ওপর অবস্থান নিয়ে রেলপথ অবরোধ করেন এবং লাল কাপড় টাঙিয়ে নাটোর থেকে আবদুলপুরগামী মালবাহী ট্রেন থামিয়ে দেন। অবরোধের মুখে পাঁচ মিনিট ট্রেনটি থেমে থাকে।

এলাকাবাসীর স্বার্থে সেদিন আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীরা কোনো কর্মসূচি নেননি। তাঁরা একজন প্রার্থীর জনসমর্থন ও শক্তি দেখাতেই এই অবরোধের ডাক দেন। যাঁরা হরতাল-অবরোধ নিয়ে অহরহ রাজনৈতিক প্রতিপক্ষকে তুলাধোনা করেন, তঁারা নিজেদের স্বার্থ হাসিলের জন্য সেই পথই বেছে নিলেন। এটি শুধু অগ্রহণযোগ্য নয়, নিন্দনীয়ও।

এ ক্ষেত্রে পুলিশের ভূমিকাও ছিল প্রশ্নবিদ্ধ। এ রকম বেআইনি কাজ যারাই করুক না কেন, পুলিশের উচিত ছিল তাদের বিরুদ্ধে শক্ত ব্যবস্থা
নেওয়া। সেটি তারা নিতে পারেনি। এ অবরোধের হোতা ও উল্লিখিত আওয়ামী লীগ নেতার এক ভাইকে গ্রেপ্তার করতে গিয়েও সমর্থকদের প্রতিবাদের মুখে পিছু হটে পুলিশ। একই কাজ বিএনপির কোনো প্রার্থীর ভাই করলেও কি তারা একই ব্যবস্থা নিত?

নির্বাচনে মনোনয়ন নিয়ে দলীয় নেতা-কর্মীদের মধ্যে মতবিরোধ থাকতে পারে। তাঁরা এর প্রতিবাদও করতে পারেন; কিন্তু সেটি হতে হবে দলীয় ফোরামে। কারও দলীয় মনোনয়ন নিয়ে রাস্তায় বিক্ষোভ কিংবা রেলপথ অবরোধ করা চলতে পারে না। এটি ফৌজদারি অপরাধ। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী গায়েবি মামলার পেছনে না ছুটে সত্যিকার অপরাধীদের ধরার চেষ্টা করলে কেউ রেলপথ-রাজপথ অবরোধের সাহস পাবে না।

তফসিল ঘোষণার পর সবকিছু নির্বাচন কমিশনের এখতিয়ারে চলে গেছে বলে সরকার দাবি করে। কিন্তু সরকারি দলের নেতা-কর্মীদের আইন নিজের হাতে তুলে নেওয়ার অভ্যাসটি বদল হয়েছে বলে মনে হয় না। বৃহস্পতিবার মালঞ্চিতে রেলপথ অবরোধের সঙ্গে যাঁরা জড়িত ছিলেন, প্রত্যেকের বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হোক।