কারাগারে কম্বল সংকট

চট্টগ্রাম কেন্দ্রীয় কারাগারে বন্দীর ‘ভিড়’ অস্বাভাবিকতাকেও যেন ছাড়িয়ে যাচ্ছে। এই কারাগারে ধারণক্ষমতা আছে ১ হাজার ৮৫৩ জনের। আর গত সোমবার পর্যন্ত সেখানে বন্দী ছিলেন ৯ হাজার ৭৩৩ জন। তার মানে তাঁদের সংখ্যা ধারণক্ষমতার পাঁচ গুণের বেশি। রাখার জায়গা না থাকায় অনেককে কারাগারের বিভিন্ন ওয়ার্ডের বারান্দায় রাখা হয়েছে।

নির্বাচনের ঠিক আগে বন্দীদের এই অস্বাভাবিক আধিক্যে জনসাধারণের মনে প্রশ্ন আসতেই পারে, ভোটের কথা মাথায় রেখেই তাঁদের আটক করা হচ্ছে কি না। মামলা থাকলে আসামি আটক হবে এবং আদালত তাঁদের জেলে পাঠালে প্রশাসনও সে হুকুম তামিল করবে—সেটাই স্বাভাবিক। কিন্তু এই বন্দীদের যেভাবে কারাগারে রাখা হচ্ছে, সেটি মানবাধিকারের সুস্পষ্ট লঙ্ঘন। প্রয়োজনীয় কম্বল না পেয়ে শীতে কষ্টে আছেন বন্দীরা। ঠান্ডা লেগে অনেকে নানা রোগে আক্রান্ত হচ্ছেন। আটক বন্দীদের স্বজন ও সম্প্রতি মুক্তি পাওয়া বন্দীরা সংবাদমাধ্যমকে এই তথ্য জানাচ্ছেন।

নিয়ম অনুযায়ী কারাগারে নতুন আসা একজন বন্দী তিনটি করে কম্বল পান। একটি বালিশ, একটি বিছানা এবং আরেকটি চাদর হিসেবে ব্যবহার করে থাকেন। কিন্তু সেখানে এমন বন্দীও আছেন যাঁকে একটি কম্বলও দেওয়া হয়নি। এই তীব্র শীতের মধ্যে মেঝেতে একজন মানুষকে ঘুমাতে দেওয়া কতটা অমানবিক, তা উপলব্ধি করা দরকার। কয়েকজন জেল থেকে বেরিয়ে বলেছেন, কম্বল না পাওয়ায় ঠান্ডা লেগে তাঁরা সর্দি-কাশিতে ভুগছেন।

কারা সূত্র জানিয়েছে, স্বাধীনতা–পরবর্তী সময়ে এবারই প্রথমবারের মতো সাড়ে ৯ হাজারের বেশি বন্দী এই কারাগারে আছেন। গড়ে পাঁচ হাজার বন্দী থাকায় কারাগারে কম্বলের মজুতও রয়েছে পাঁচ হাজারের। কিন্তু বন্দীর সংখ্যা বাড়তে থাকায় বিপাকে পড়ে কারা কর্তৃপক্ষ। আটক বন্দীদের বেশির ভাগই মাদক মামলার আসামি। মাদক মামলায় জামিনের হার কমে যাওয়ায় এই সংখ্যা বেড়েছে। কারা কর্তৃপক্ষ আশ্বাস দিয়েছে, ‘কয়েক দিনের মধ্যে’ কম্বলের সংকট কেটে যাবে। কিন্তু এতগুলো মানুষ কম্বল ছাড়া ‘কয়েক দিন’ কীভাবে শীতের রাত পার করবেন, সেটা গুরুত্বের সঙ্গে বিবেচনায় নেওয়া দরকার।

শুধু চট্টগ্রামেই নয়, প্রকৃতপক্ষে সারা দেশেই জেলখানাগুলোতে এখন বন্দীর সংখ্যা অনেক বেড়ে গেছে। নির্বাচনকে ঘিরে পুরোনো মামলা সক্রিয় হচ্ছে, নতুন নতুন মামলাও করা হচ্ছে। এসব মামলায় আটক করে তাঁদের কারাগারে পাঠানো হচ্ছে। চট্টগ্রাম কারাগারের অবস্থা দেখে দেশের অন্য কারাগারগুলোর অবস্থাও কিছুটা আন্দাজ করা যায়। এ বিষয়ে সরকারকে মানবাধিকারের প্রতি শ্রদ্ধাশীল মনোভাব দেখাতে হবে। ধারণক্ষমতার বাইরে বন্দী রাখলে তাঁদের নিম্নতম অধিকার যেন নিশ্চিত করা হয়, সে বিষয়ে কারা প্রশাসনের সচেষ্ট হওয়া দরকার।