পাটখড়ি পোড়াতে প্রণোদনা কেন

বায়ু ও পরিবেশদূষণের জন্য দায়ী শিল্প–কারখানাগুলোকে রেড ইন্ডাস্ট্রিজ হিসেবে আখ্যা দেওয়া হয়ে থাকে। এ রকমই রেড ইন্ডাস্ট্রিজ হচ্ছে দেশে সাম্প্রতিক সময়ে গড়ে ওঠা পাটখড়ি পোড়ানোর কারখানা। বায়ুদূষণের ক্ষেত্রে ব্যাপক ভূমিকা রাখা সত্ত্বেও পাটখড়ি পুড়িয়ে তা কয়লা হিসেবে রপ্তানিতে সরকার ২০ শতাংশ ভর্তুকি দিচ্ছে। এটা শুধু বিস্ময়করই নয়, উদ্বেগজনকও বটে।

গত মঙ্গলবার প্রথম আলোর খবরে প্রকাশ, দেশের গ্রামাঞ্চলে বায়ুদূষণের নতুন উৎস হয়ে উঠছে চারকোল (পাটখড়ি পোড়ানো) কারখানা। পরিবেশ অধিদপ্তরের ছাড়পত্র ছাড়াই দেশের বিভিন্ন স্থানে এসব কারখানা গড়ে উঠেছে। এই কারখানাগুলোতে বিশেষ কায়দায় পাটখড়ি পোড়ানো হয়। তারপর তা থেকে উৎপন্ন কয়লা বিদেশে রপ্তানি করা হয়। পাটখড়ির এই কয়লা থেকে কার্বন পেপার, প্রিন্টার, ফটোকপিয়ার ও ব্যাটারির কালিসহ নানা পণ্য তৈরি করে আমদানিকারক দেশগুলো। পাটখড়ির কয়লা রপ্তানি করে বাংলাদেশ বৈদেশিক মুদ্রা আয় করে সত্য, তবে তা পরিবেশের ক্ষতি করে।

পরিবেশ অধিদপ্তর থেকে এ ধরনের কারখানার জন্য ৯০ ফুট উচ্চতার চিমনি থাকা, পরিবেশ সংরক্ষণ আইন ও নীতিমালা অনুসরণ করে ছাড়পত্র নেওয়া বাধ্যতামূলক করলেও কারখানার মালিকেরা তা করছেন না। এ ধরনের কারখানা গড়ে তোলার আগে পরিবেশগত প্রভাব সমীক্ষা করাতে হয়। চারকোল কারখানাগুলো তা করেনি। অবস্থানগত ছাড়পত্র নিয়েছে ৪টি কারখানা। বাকি ৩৬টি কারখানা পরিবেশ ছাড়পত্র ছাড়াই চলছে। এর বাইরেও বিভিন্ন গ্রাম ও ইউনিয়নে আরও কারখানা গড়ে উঠেছে, যাদের কোনো ধরনের অনুমোদন নেই।

আমাদের দেশে সাধারণ মানুষ চারকোল বলতে ধানের তুষ দিয়ে তৈরি জ্বালানিকে বুঝে থাকে। ওই চারকোল রান্নার কাজে ব্যবহৃত হয় এবং বাজারে তা কিনতে পাওয়া যায়। পাটখড়ি পুড়িয়ে কয়লা তৈরির কারখানাও চারকোল নামে পরিচিত। কিন্তু এখানে পাটখড়িতে মূল্য সংযোজনের পরিবর্তে বিয়োজন ঘটে।  পাটখড়ি থেকে তৈরি মূল্য সংযোজনী পণ্যের মধ্যে জুটেক্স বোর্ড অন্যতম। দেশে এই কারখানাও আছে এবং তা–ও রপ্তানি পণ্য।

বৈদেশিক মুদ্রা আয় করছে বলে পাটখড়ি পোড়ানোর কারখানা নিঃসন্দেহে লাভজনক। কিন্তু এসব কারখানার বায়ুদূষণ প্রতিরোধে কোনো পদক্ষেপ না নিয়ে এ শিল্পের পণ্য রপ্তানিতে প্রণোদনা দেওয়াটা গ্রহণযোগ্য নয়।

গত ফেব্রুয়ারি মাসে প্রকাশিত যুক্তরাষ্ট্রের পরিবেশ সংরক্ষণবিষয়ক সংস্থা ইপিএর এক প্রতিবেদন অনুযায়ী, বাতাস মারাত্মকভাবে দূষিত, এমন দেশগুলোর মধ্যে বাংলাদেশের অবস্থান দ্বিতীয়। প্রভাবশালী চিকিৎসা সাময়িকী দ্য ল্যানসেট-এর একটি গবেষণা প্রতিবেদন অনুযায়ী, বায়ুদূষণের কারণে মৃত্যুহার বিশ্বে সবচেয়ে বেশি বাংলাদেশে।

আমাদের বৈদেশিক মুদ্রা দরকার, কিন্তু তা নিশ্চয়ই পরিবেশ বা মানুষের জীবনের বিনিময়ে নয়। এমন বাস্তবতায় সরকারের উচিত বায়ুদূষণকারী এ ধরনের কারখানার বিরুদ্ধে শক্ত অবস্থান নেওয়া।