শিল্পবর্জ্য ব্যবস্থাপনা

সাদামাটাভাবে বলা যায়, মানুষ যখন কোনো বস্তুকে বর্জন করতে চায়, সেটাই বর্জ্য। প্রাচীনকাল থেকে মনুষ্যজাতির কর্মকাণ্ডের অংশ হিসেবে বর্জ্য পদার্থ এসেছে। কিন্তু আগের দিনের বর্জ্য ছিল ভঙ্গুর (বায়ো ডিগ্রেডেবল)। সে কারণে সেগুলো প্রকৃতির স্বাভাবিক নিয়মে পুনরাবর্তিত হতো। কিন্তু শিল্পবিপ্লব-পরবর্তী যুগে প্রাকৃতিক সম্পদের অনিয়ন্ত্রিত ব্যবহার এবং জীবনযাপনকে আরও সহজ, ভোগ্য ও আধুনিক করার জন্য প্রকৃতিতে বেড়েছে বিপর্যয় সৃষ্টিকারী অভঙ্গুর (নন-বায়ো ডিগ্রেডেবল) বর্জ্য। প্রতিনিয়ত বেড়ে চলা এই বর্জ্য মোকাবিলাই এখন পরিবেশ রক্ষার অন্যতম চ্যালেঞ্জ। বিশেষ করে কারখানার বর্জ্য বিপন্ন করে চলেছে বাস্তুতন্ত্রের স্বাভাবিক ক্রিয়াকলাপকে। জীবমণ্ডলের স্থিতাবস্থায় বিঘ্ন ঘটছে। বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে এই কথা খুবই প্রাসঙ্গিক। বিশেষ করে আমাদের পোশাক, প্লাস্টিক ও বিভিন্ন রাসায়নিক কারখানার বর্জ্য ব্যবস্থাপনা এতটাই অপেশাদারি কায়দায় চলছে যে তার প্রতিক্রিয়ার কথা ভাবলে শিউরে উঠতে হয়। ডায়িং কারখানাগুলোর রাসায়নিক দ্রব্য মেশানো পানি প্রতিনিয়ত নদী বা খালে ফেলা হচ্ছে। পানির তীব্র দূষণে সেখানে মাছ ও অন্যান্য জলজ প্রাণীর বেঁচে থাকা অসম্ভব হয়ে পড়েছে। এমন সময়ে একটি সুসংবাদ শোনাল ফ্লোওয়াটার সলিউশন লিমিটেড নামের একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠান। রাজধানীতে তাদের আয়োজন করা একটি সেমিনার থেকে জানা গেল, চট্টগ্রামের মিরসরাই অর্থনৈতিক অঞ্চলে কারখানার বর্জ্য ও পানীয় ব্যবস্থাপনায় বিনিয়োগ করতে আগ্রহী হয়েছে নেদারল্যান্ডসের উদ্যোক্তা উন্নয়ন ব্যাংক এফএমও। এই প্রক্রিয়ায় দেশীয় প্রতিষ্ঠান হিসেবে কাজ করছে ফ্লোওয়াটার সলিউশন। সেখানে এই আশাবাদও ব্যক্ত করা হয়েছে যে পর্যায়ক্রমে সব অর্থনৈতিক অঞ্চলে এভাবে আন্তর্জাতিক বিনিয়োগ হতে পারে।

বাংলাদেশ অর্থনৈতিক অঞ্চল কর্তৃপক্ষের (বেজা) ভাষ্যমতে, আগামী ১৫ বছরে দেশে ১০০টি অর্থনৈতিক অঞ্চল গড়ে তোলা হবে। এটি হলে বর্জ্য ব্যবস্থাপনাকে আন্তর্জাতিক মানে উন্নীত না করার কোনো বিকল্প থাকবে না। এ কারণে সব অঞ্চলে বর্জ্য ব্যবস্থাপনায় স্থানীয় অংশীদারের পাশাপাশি আন্তর্জাতিক অংশীদারও চায় বেজা। বিশেষজ্ঞরা অর্থনৈতিক অঞ্চলগুলোর ওপর বিভিন্ন ধরনের গবেষণা করে দেখেছেন, বাংলাদেশের শিল্পায়নের ধরন অনুযায়ী আধুনিক বর্জ্য ব্যবস্থাপনা জরুরি। আরেকটি বিষয় হলো শুধু প্রযুক্তিনির্ভর বর্জ্য ব্যবস্থাপনা তৈরি করলেই হবে না, এটা সতর্কতার সঙ্গে তদারকও করতে হবে।

বিশ্বব্যাংকের হিসাব অনুযায়ী, ২০৩০ সালের মধ্যে বাংলাদেশে শিল্পবর্জ্য নির্গমন বাড়বে ১০৯ শতাংশ। নানা ধরনের কেমিক্যাল একদিকে যেমন জলাশয় বিষাক্ত করবে, অন্যদিকে মানুষের খাদ্যশৃঙ্খলাকে বিনষ্ট করবে। তাই ধ্বংসাত্মক পরিস্থিতি মোকাবিলায় এখনই বাংলাদেশকে প্রস্তুতি নিতে হবে। এ জন্য উন্নত দেশের বর্জ্য ব্যবস্থাপনাকে অনুসরণ করতে হবে এখন থেকেই। শিল্প খাতের উন্নয়নের পাশাপাশি বাংলাদেশের অর্থনৈতিক অঞ্চলগুলোর পানীয় বর্জ্য ব্যবস্থাপনা, বিশেষ করে পোশাক খাতের বর্জ্য নির্গমন ব্যবস্থাপনায় জোর দিতে হবে।