ড. কামালের গাড়িবহরে হামলা

নির্বাচনের আর সপ্তাহ দুয়েক বাকি, কিন্তু বিরোধী নেতা ও প্রার্থীদের ওপর একের পর এক যে হামলার ঘটনা ঘটছে, তাকে খুব স্বাভাবিক নির্বাচনকালীন পরিস্থিতি বলা যাচ্ছে না। নির্বাচন–পূর্ব রাজনীতিতে প্রবীণ রাজনীতিবিদ ড. কামাল হোসেন প্রধান বিরোধী নেতা হিসেবে আবির্ভূত হয়েছেন। তাঁর গাড়িবহরেও যখন হামলার ঘটনা ঘটে, তখন নির্বাচনী পরিবেশ ও পরিস্থিতি নিয়ে উদ্বিগ্ন না হওয়ার কোনো কারণ নেই।

সাধারণভাবে দেখা যাচ্ছে, সরকারি দলের প্রার্থীরা প্রচারণায় নেমে পড়লেও বিরোধীরা সেভাবে মাঠে নেই। বিরোধীপক্ষের অভিযোগ, তাদের মাঠে নামতে দেওয়া হচ্ছে না। মামলা দায়ের, গ্রেপ্তার, হামলা চালানোসহ নানাভাবে তাদের হয়রানি করা হচ্ছে। সাম্প্রতিক সময়ে বিরোধী দলের নেতা ও প্রার্থীদের ওপর ধারাবাহিক হামলার ঘটনাগুলো বিরোধী দলের দাবির যথার্থতাকেই যেন তুলে ধরছে। দুর্ভাগ্যজনক বিষয় হচ্ছে, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী এ ক্ষেত্রে তাদের ভূমিকা পালনে ব্যর্থ হচ্ছে। তারা হামলা যেমন ঠেকাতে পারছে না, তেমনি হামলাকারীদের ধরছেও না।

দলীয় সরকারের অধীনে নব্বই–পরবর্তী বাংলাদেশে এই প্রথম একটি অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন হতে যাচ্ছে। ফলে সরকার কী ভূমিকা পালন করছে এবং নির্বাচন কমিশন তাদের দায়িত্ব স্বাধীন ও পক্ষপাতহীনভাবে পালন করছে কি না, তার ওপরই নির্ভর করবে একটি অবাধ ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচন অনুষ্ঠান। বিরোধী দলের নেতা ও প্রার্থীদের ওপর হামলার ঘটনায় খুব স্বাভাবিকভাবেই সরকারি দলের নেতা-কর্মীরা অভিযুক্ত হচ্ছেন। আবার দেখা যাচ্ছে, কমিশনও এ ব্যাপারে কোনো ভূমিকা পালন করতে পারছে না।

সব দলের অংশগ্রহণে দেশে একটি নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে কি না, এ নিয়ে যখন অনিশ্চয়তা চলছিল, তখন ড. কামাল হোসেনের নেতৃত্বে দেশের বিরোধী রাজনৈতিক দলগুলো জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট গঠন করেছে। তারা সরকারের সঙ্গে আলোচনায় বসতে চেয়েছে এবং তা হয়েছে। এরই ধারাবাহিকতায় সব দলের অংশগ্রহণে দেশে একটি নির্বাচন অনুষ্ঠানের পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে। এখন রাজনৈতিক দল ও জোটগুলোর প্রার্থীদের যখন অবাধে প্রচারণা চালানোর কথা, তখন বিরোধী প্রার্থী ও নেতাদের ওপর হামলাগুলো সুষ্ঠু নির্বাচন অনুষ্ঠানকে বাধাগ্রস্ত করবে। ড. কামাল হোসেন শুধু বিরোধী জোট জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের প্রধান নেতাই নন, দেশের অন্যতম সংবিধানপ্রণেতা, আইনজীবী এবং একজন প্রবীণ রাজনীতিবিদ। আমরা তঁার গাড়িবহরে হামলার তীব্র নিন্দা জানাই এবং  জড়িতদের বিচারের মুখোমুখি দেখতে চাই।

আমরা মনে করি, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী চাইলে হামলাকারীদের শনাক্ত করা কঠিন কিছু নয়। আইনশৃঙ্খলা বাহিনী এখন ইসির অধীন, তারা এ ক্ষেত্রে কোনো গড়িমসি বা গাফিলতি দেখালে তার দায় কমিশনকেই নিতে হবে। ইসি স্বাধীনভাবে ও সাহসের সঙ্গে তাদের দায়িত্ব কতটুকু পালন করে, সেটাই এখন দেখার বিষয়।