মুক্তিযোদ্ধাদের ফ্ল্যাট বরাদ্দ

সরকার যুদ্ধাহত মুক্তিযোদ্ধাদের জন্য নির্মিত মুক্তিযোদ্ধা টাওয়ারের ৮৪টি ফ্ল্যাটের বরাদ্দ নিয়ে জটিলতা নিরসন করতে পূর্ণাঙ্গ তদন্ত করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। তা সমস্যার সমাধান করবে কি না, সেটি নির্ভর করবে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের সদিচ্ছা, সততা ও সক্ষমতার ওপর। প্রকাশিত খবর থেকে জানা যায়, রাজধানীর মোহাম্মদপুরের গজনবী রোডের মুক্তিযোদ্ধা টাওয়ারে ৮৪টি ফ্ল্যাট ও ৭৪টি দোকান রয়েছে। গত পাঁচ বছরে ৩৩ জনকে এবং গত সেপ্টেম্বরে ২০ জনকে মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রণালয় থেকে ফ্ল্যাট বরাদ্দ দেওয়া হয়। ফ্ল্যাট ও দোকান যুদ্ধাহত মুক্তিযোদ্ধাদের পাওয়ার কথা থাকলেও এমন অনেক ব্যক্তি ফ্ল্যাট ও দোকান বরাদ্দ পেয়েছেন, যাঁদের মধ্যে যুদ্ধাহত নন এমন মুক্তিযোদ্ধাও আছেন। এমনকি মুক্তিযোদ্ধা নন, তাঁরাও নানা কায়দা–কৌশল করে ফ্ল্যাট বাগিয়ে নিয়েছেন। শুধু ফ্ল্যাট বরাদ্দেই অনিয়ম-দুর্নীতি হয়নি, বরাদ্দ না পেয়েও অনেকে ফ্ল্যাট দখল করে আছেন। মুক্তিযোদ্ধা কল্যাণ ট্রাস্ট বারবার চিঠি দিয়েও তাঁদের উচ্ছেদ করতে পারছে না। ভবনটির ১২টি ফ্ল্যাট জোরপূর্বক দখলে রেখেছেন বরাদ্দপ্রাপ্ত ১২ জন, তাঁরা বাসা ছোট—এই অজুহাতে দুটি করে ফ্ল্যাট দখলে রেখেছেন।

যুদ্ধাহত মুক্তিযোদ্ধাদের জন্য নির্মিত ভবন নিয়ে এ ধরনের অন্যায়-দুর্নীতি হতে পারে, তা ভাবতেও কষ্ট হয়। মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হক বলেছেন, যুদ্ধাহত মুক্তিযোদ্ধাদের জন্য তৈরি করা এই ভবনে মুক্তিযোদ্ধা নন—এমন অনেক লোক ঢুকে গেছেন। একটি কমিটি করে এসব তদন্ত করা হবে। কিন্তু তদন্ত করলেই তাঁর দায়িত্ব শেষ হয়ে যায় না। যুদ্ধাহত মুক্তিযোদ্ধাদের জন্য নির্মিত ভবনের ফ্ল্যাট ও দোকান কীভাবে অমুক্তিযোদ্ধা ও যুদ্ধাহত নন এমন ব্যক্তিরা পেলেন, সেই প্রশ্নের জবাবও মন্ত্রী মহোদয়কে দিতে হবে।

ওই ভবনের বাসিন্দাদের কেউ কেউ অভিযোগ করেছেন, পর্যাপ্ত নিরাপত্তাব্যবস্থা না থাকায় ভবনের কয়েকটি তলায় ক্লাবঘরের নামে জুয়া খেলা চলে। এটি যে মুক্তিযোদ্ধাদের জন্য কত বড় অপমান, সেটি বোঝার মতো জ্ঞান নিশ্চয়ই সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের আছে। এখানকার বাসিন্দাদের কেউ কেউ এমন আবদারও তুলেছেন যে সরকার তাঁদের অন্যত্র জমি দিলে তাঁরা ফ্ল্যাট ছেড়ে দেবেন। সরকারি প্লট বা ফ্ল্যাট বরাদ্দ হয় নির্দিষ্ট আইন ও নীতিমালার ভিত্তিতে। তাঁরা সরকারের কাছে সে জন্য আবেদন করতে পারেন। তাই বলে এ কথা বলতে পারেন না যে সরকার তাঁদের অন্যত্র জমি বরাদ্দ দিলে দখল করা ফ্ল্যাট ছেড়ে দেবেন। যাঁরা বেআইনিভাবে ফ্ল্যাট দখল করে আছেন, তাঁদের অবিলম্বে সেখান থেকে চলে যেতে হবে।

রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠানে কোথাও কোনো অনিয়ম বা দুর্নীতি হলে কর্তৃপক্ষ প্রথমে সেটি অস্বীকার করে। এরপর হাতেনাতে ধরা পড়ে গেলে তদন্তের নামে কালক্ষেপণ করা হয়। যুদ্ধাহত মুক্তিযোদ্ধাদের টাওয়ারে বরাদ্দের বিষয়ে সেটি করা হবে না বলে আশা করি। যুদ্ধাহত মুক্তিযোদ্ধাদের বাইরে কেউ এই ভবনের কোনো  ফ্ল্যাট ও দোকান বরাদ্দ পাবেন না—এই নিশ্চয়তা মন্ত্রীকেই দিতে হবে।