বড়দিনের মঙ্গলবার্তা

শিল্পীর তুলিতে যিশুখ্রিষ্টের জন্মমূহূর্ত।  ছবি: ইন্টারনেট থেকে সংগৃহীত
শিল্পীর তুলিতে যিশুখ্রিষ্টের জন্মমূহূর্ত। ছবি: ইন্টারনেট থেকে সংগৃহীত

আজ ২৫ ডিসেম্বর, প্রভু যিশুর জন্মদিন, আমাদের বড়দিন। এ বড়দিন হচ্ছে মিলনের বড়দিন: ঈশ্বর ও মানুষের মধ্যে মিলন এবং মানুষে-মানুষের মিলন; তাই বড়দিনে উপলব্ধি করি মিলনের আনন্দ! মিলনময় আনন্দের শুভেচ্ছা জানাই সদিচ্ছাপূর্ণ সব অনুগৃহীত ভক্তের প্রতি।

চারটি সপ্তাহ ধরে আমরা খ্রিষ্টবিশ্বাসীরা অনেক প্রত্যাশা, প্রতীক্ষা ও প্রস্তুতি নিয়ে প্রভু যিশুর আগমনের বার্তা শুনতে চেষ্টা করেছি। এই সময়ে আমার একটা প্রশ্ন ছিল, ‘প্রভু যিশু এ বছর কোথায় ও কীভাবে আগমন করবেন?’

বড়দিনের উত্সবকালে যখন গোটা দেশ জাতীয় নির্বাচনের অপেক্ষা করছে ও প্রস্তুতি নিচ্ছে, অনেক বাসনা ও প্রত্যাশা নিয়ে নির্বাচনের পথ চলছে, যখন বিভিন্ন ব্যক্তি ও দল, মুক্তি ও স্বাধীনতা, মানবমর্যাদা ও অধিকার এবং ন্যায়, উন্নয়ন ও শান্তি প্রতিষ্ঠার জন্য নানা নির্বাচনী ইশতেহার প্রদান করছেন, তখন মানবত্রাতা যিশুর কাছ থেকে আমরা এই বাণী শুনতে পাচ্ছি, ‘প্রভুর আত্মিক প্রেরণা আমার ওপর অধিষ্ঠিত, তিনি আমাকে করেছেন অভিষিক্ত। তিনি আমাকে প্রেরণ করেছেন দীন–দরিদ্রের কাছে মঙ্গলবার্তা প্রচার, বন্দীর কাছে মুক্তি আর অন্ধের কাছে নবদৃষ্টি লাভের কথা ঘোষণা করতে, পদদলিত মানুষকে মুক্ত করে দিতে এবং প্রভুর অনুগ্রহদানের বর্ষকাল ঘোষণা করতে।’ (লুক ৪: ১৮-১৯)।

আমরা বাইবেলে এও শুনছি: ‘আমি এক মহা আনন্দের সংবাদ তোমাদের জানাতে এসেছি; এই আনন্দ সমস্ত জাতির জন্য সঞ্চিত হয়ে আছে।’ (লুক ২:১০)। আরও শুনছি স্বর্গীয় দূতদের মুখে: ‘ইহলোকে নামুক শান্তি তাঁর অনুগৃহীত মানবের অন্তরে।’ (লুক ২: ১৪)।

মানুষের সব প্রত্যাশার মধ্যে যে কথাটা আরও গভীর সত্য সেটা হলো: মানবাধিকার, উন্নয়ন, ন্যায় বা শান্তি কেবল কথা বা বার্তা নয়, কেবল মানুষের প্রচেষ্টা ও পরিকল্পনাও নয়। সব কথা ও বার্তার পেছনে আছেন স্বয়ং ঈশ্বর, যিনি মানুষ হয়ে আমাদের জীবনে আগমন করতে চান।

আমাদের সব অযোগ্যতা ও রাশি রাশি পাপ-অপরাধ থাকা সত্ত্বেও, ঈশ্বর আমাদের ভালোবেসে, দীন–দরিদ্র মানুষকে নির্বাচন করে রেখেছেন, যেন তাদের মধ্যে তিনি জন্ম গ্রহণ করতে পারেন, তাদের সঙ্গে একাত্ম হতে পারেন এবং ‘মানুষের মাঝে ঈশ্বর’ হিসেবে তিনি বাস করতে পারেন।

যখনই মানুষ আপন জীবনে, ঈশ্বর, ভগবান বা খোদা বলে তাঁকে গ্রহণ করবে, তখনই তাঁরা মানুষের কাছে ‘ইশতেহার’, মানুষের জন্য ‘গণমঙ্গল’ অথবা ‘মঙ্গলবার্তা’ হয়ে আসবেন। তখনই হবে তাঁর আগমন, মানুষ লাভ করবে মর্যাদা ও অধিকার, আসবে জনকল্যাণ ও উন্নয়ন, প্রতিষ্ঠিত হবে ন্যায় ও শান্তি, ভালোবাসা ও মিলন, সফলতা ও অর্জন, স্বাধীনতা ও তার সংরক্ষণ।

বড়দিনের উৎসবে ও জাতীয় নির্বাচনক্ষণে দেশবাসীর মধ্যে পরম করুণাময় প্রভুর আগমন হোক—এই প্রতীক্ষায় আমরা থাকি অনেক প্রত্যাশা ও প্রার্থনা নিয়ে।

বড়দিনের এই আনন্দোত্সবে দেশবাসীকে, খ্রিষ্টান সম্প্রদায়ের পক্ষ থেকে আন্তরিক অভিনন্দন ও শুভেচ্ছা জানাই।

বড়দিন সবার মধ্যে ও জাতির জীবনে বয়ে আনুক অনাবিল আনন্দ, শান্তি এবং করুণাময় ঈশ্বরের অশেষ আশীর্বাদ। শুভ বড়দিন!

কার্ডিনাল প্যাট্রিক ডি রোজারিও সিএসসি

আর্চবিশপ, ঢাকা আর্চডাইওসিস