তানোরে সরকারের হস্তক্ষেপ

রাজশাহীর তানোর হোক সরকারের হস্তক্ষেপের অনুসরণীয় উদাহরণ। সারা দেশে নির্বাচনের আগে যে ধরনের মামলা-হামলা, সন্ত্রাস ও সহিংসতা হয়েছে, তার বেশির ভাগ ক্ষেত্রে প্রধান বিরোধী দল বিএনপির নেতা-কর্মী বা সমর্থকেরা নানাভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন। নৌকার চেয়ে ধানের শীষ প্রতীকে বেশি ভোট পড়ার কারণে তানোরের কলমা গ্রামে ক্ষমতাসীন দলের নেতা-কর্মীদের তাণ্ডব সব সীমা অতিক্রম করে গিয়েছিল। তাঁরা ত্রাস সৃষ্টি করেছিলেন। গ্রামের ভেতর দিয়ে বাস চলাচল ও ডিশ লাইন বন্ধ, এমনকি গভীর নলকূপের নিয়ন্ত্রণ নিয়েছিলেন। বিএনপির নেতা-কর্মীরা গ্রাম ছেড়ে পালিয়ে যান। এটা স্বস্তির যে এ বিষয়ে প্রথম আলোয় প্রকাশিত একটি প্রতিবেদন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার দৃষ্টিগোচর হয়।

রাজশাহীর ডেপুটি কমিশনার ও তানোর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা উভয়ে এ তথ্য উল্লেখ করেছেন। জেলা প্রশাসক আওয়ামী লীগ ও বিএনপির কর্মীদের সমন্বয়ে বৈঠক করে পরিস্থিতি স্বাভাবিক করার ক্ষেত্রে ভূমিকা রেখেছেন। জেলা প্রশাসকের ভাষ্য অনুযায়ী, প্রধানমন্ত্রী তাঁকে তানোর–গোদাগাড়ী গিয়ে সেখানকার মানুষকে বলতে বলেছেন, তারা যেন কেউ আইন নিজের হাতে তুলে না নেয়। কেউ আইন হাতে তুলে নিলে তার বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে। এই দৃষ্টিভঙ্গি সুশাসন ও আইনের শাসনের পূর্বশর্ত।

প্রধানমন্ত্রীর এই বক্তব্যে যে মনোভাব ব্যক্ত হয়েছে, তা সব জেলার জন্যই অনুসরণীয়। কারণ, তানোর পরিস্থিতি যতটা গুরুতর আকার ধারণ করেছিল, ততটা অন্যত্র না হলেও পালিয়ে বেড়ানো বিএনপির নেতা-কর্মীর সংখ্যা এখনো উদ্বেগজনক। প্রতিটি এলাকায় মর্যাদার সঙ্গে নিরাপদ জীবন যাপন করা দলমত-নির্বিশেষে দেশের প্রত্যেক মানুষের মৌলিক মানবাধিকার। সুতরাং পালিয়ে যাওয়া এবং গায়েবি মামলায় ফেরার বিএনপির কর্মীদের ফিরিয়ে আনতে হবে। শুধু রাজশাহী নয়, সব জেলার প্রশাসন ও ডিসিদের উচিত গুরুত্বের সঙ্গে প্রধানমন্ত্রীর তানোর নির্দেশনাকে সাধারণ নীতি হিসেবে গ্রহণ করা। এখন দেশের অনেক এলাকাতেই প্রশাসনের উদ্যোগে শান্তি প্রতিষ্ঠায় আওয়ামী লীগ ও বিএনপির সক্রিয় অংশগ্রহণে জনসভা হওয়া দরকার। এটা সম্ভব হলে তা সমাজে শান্তিশৃঙ্খলা প্রতিষ্ঠায় বিশেষ ভূমিকা রাখবে।

নির্বাচনের আগে তানোরের বিএনপির কর্মীরা এবং পরে আওয়ামী লীগের কর্মীরা পরস্পরের বিরুদ্ধে হামলা চালিয়েছেন। দলের পরিচয় যা–ই হোক যারা অপরাধী, যারা আইন হাতে তুলে নেবে তারা দুর্বৃত্ত। দল-মত বিবেচনায় না নিয়ে তাদের বিচার নিশ্চিত করার দায়িত্ব প্রশাসনের। অবশ্য দেশের বর্তমান রাজনৈতিক-সামাজিক পরিস্থিতিতে মেরুকরণ যেখানে গিয়ে পৌঁছেছে, সেখানে জনপ্রশাসনের পক্ষে নিরপেক্ষভাবে কাজ করা এক বিরাট চ্যালেঞ্জ।

আমরা আশা করব যে তানোরে প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনা শতভাগ বাস্তবায়িত হবে এবং সামাজিকভাবে যে ক্ষত সেখানে তৈরি হয়েছিল, তা উপশম হবে।