বন্দরে পানির সংকট

ঢাকা ওয়াসার পানির সংকটের কারণে নারায়ণগঞ্জের বন্দর উপজেলার বাসিন্দারা এক মাস ধরে যে দুর্ভোগ পোহাচ্ছে, তা কোনোভাবেই মেনে নেওয়া যায় না। বুধবার প্রথম আলোর খবরে প্রকাশ, নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশনের ২৪ নম্বর ওয়ার্ডের বক্তারকান্দি, আমিরাবাদ, কাইতাখালী, দেউলি, 

চৌড়াপাড়া এবং ২৫ নম্বর ওয়ার্ডের উত্তর লক্ষ্মণখোলা, দক্ষিণ লক্ষ্মণখোলা, চৌড়াপাড়া এবং মুছাপুর ইউনিয়নের দাশেরগাঁও ও পাতাকাটা এলাকায় তীব্র পানির সংকট চলছে।

এসব এলাকায় ১০-১২ হাজার মানুষের বাস। পানিসংকটের কারণে তাদের রান্নাবান্না, গোসলসহ দৈনন্দিন কাজকর্ম ব্যাহত হচ্ছে। ওয়াসা বিকল্প হিসেবে গাড়ি দিয়ে এলাকায় পানি সরবরাহ করলেও তা চাহিদার তুলনায় খুবই সামান্য। এসব এলাকার মানুষকে দীর্ঘক্ষণ লাইনে দাঁড়িয়ে থেকে পানি সংগ্রহ করতে হচ্ছে। কিন্তু বিস্ময়কর ব্যাপার হলো এই জনদুর্ভোগ নিরসনে ওয়াসার পক্ষ থেকে দৃশ্যমান কোনো উদ্যোগ নেই। এলাকাবাসী এ দুর্ভোগ নিরসনের জন্য ওয়াসার কাছে আবেদন করলেও তাতে তারা কোনো কর্ণপাত করছে না।

ঢাকা ওয়াসা জানিয়েছে, তাদের পাম্প কাজ না করায় এ সংকট দেখা দিয়েছে এবং নতুন পাম্প বসাতে সময় লাগবে। যেখানে ১০-১২ হাজার
মানুষকে দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে, সেখানে ওয়াসার এ ধরনের বক্তব্য গ্রহণযোগ্য নয়। কেননা, নগরবাসীর কাছে নিরবচ্ছিন্নভাবে বিশুদ্ধ পানি সরবরাহ করার দায়িত্ব তাদেরই।

গত জুলাই মাসেও লক্ষ্মণখোলা পাম্প বিকল হয়ে যায়। এতে এলাকায় তীব্র পানির সংকট দেখা দেয়। পানির দাবিতে মানববন্ধন, বিক্ষোভ মিছিল, পাম্প হাউস ঘেরাও এবং মহাসড়ক অবরোধ করে এলাকাবাসী। এরপর পাম্পটি মেরামত করে ওয়াসা। প্রশ্ন হচ্ছে বিক্ষোভ মিছিল ও মহাসড়ক অবরোধ করা ছাড়া কি ওয়াসা নিরবচ্ছিন্ন পানি সরবরাহের কোনো পদক্ষেপ নেবে না? কোথাও পানির সমস্যা দেখা দিলে কেন তারা নিজে থেকে উদ্যোগ নেয় না?

নারায়ণগঞ্জে ঢাকা ওয়াসার বর্তমান গ্রাহকসংখ্যা ২৬ হাজারের বেশি। কিন্তু ওয়াসার যেভাবে গ্রাহকদের সেবা দেওয়ার কথা, সেভাবে তারা দিতে পারছে না বলে অভিযোগ রয়েছে। প্রায়ই তাদের পাম্পগুলো বিকল হয়ে সরবরাহ বন্ধ হয়ে যায়। বেশির ভাগ সময়ই পানের অযোগ্য পানি সরবরাহ করে। বহু পুরোনো পাইপে পানি সরবরাহ করায় বিভিন্ন স্থানে ফেটে ঢুকে যাচ্ছে নোংরা ও সুয়ারেজের পানি, যা দুর্গন্ধ ও ময়লাযুক্ত।

আমরা চাই নারায়ণগঞ্জবাসীর পানির সংকট অবসানে ঢাকা ওয়াসা দ্রুত কার্যকর পদক্ষেপ নেবে। এ ক্ষেত্রে কোনো ধরনের গাফিলতি বা উদাসীনতার সুযোগ নেই। ঢাকা ওয়াসাকে মনে রাখতে হবে গ্রাহকদের তারা বিনা মূল্যে পানি দিচ্ছে না। পানির জন্য গ্রাহকেরা প্রতি মাসে বিল পরিশোধ করেন। কাজেই শুধু নারায়ণগঞ্জের নয়, সব গ্রাহককে নিরবচ্ছিন্নভাবে বিশুদ্ধ পানি সরবরাহের ব্যাপারে ঢাকা ওয়াসাকে সব সময় সচেষ্ট থাকতে হবে।