হাওরে ফসল রক্ষা বাঁধ

সুনামগঞ্জে হাওরগুলোর ফসল রক্ষা বাঁধ নির্মাণ ও মেরামতির কাজ সঠিক সময়ে সঠিকভাবে সম্পন্ন না করার ফলে অকাল বৃষ্টিপাত ও পাহাড়ি ঢলের কারণে ২০১৭ সালের মার্চ–এপ্রিলে ব্যাপক ফসলহানি ঘটেছিল। ফলে যে অর্থনৈতিক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছিল, তা কাটিয়ে ওঠা অনেক সময়সাপেক্ষ ছিল। সংবাদমাধ্যমে ব্যাপক লেখালেখি এবং দেশজুড়ে প্রবল বিরূপ প্রতিক্রিয়ার ফলে সরকারের পক্ষ থেকে হাওরের বাঁধ নির্মাণের বিষয়টির প্রতি কড়া নজরদারি ও জবাবদিহির ওপর গুরুত্ব আরোপ করা হয়েছিল। সংশ্লিষ্টদের মধ্যে কারও কারও বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছিল; এমনকি পানি উন্নয়ন বোর্ডের এক কর্মকর্তা এবং কয়েকজন ঠিকাদারকে কারাগারে পর্যন্ত পাঠানো হয়েছিল। কিছু মামলা করা হয়েছিল, যেগুলো এখনো নিষ্পন্ন হয়নি।

এত কিছুর পরও মাঝখানে এক বছর যেতে না–যেতেই বাঁধ নির্মাণের ব্যবস্থাটি আগের সেই ঢিলেঢালা, জবাবদিহিহীন অবস্থায় ফিরে গেছে। ১৫ ডিসেম্বরের মধ্যে সব বাঁধ নির্মাণের কাজ শুরু করার বাধ্যবাধকতা রয়েছে। কিন্তু এক মাস পরেও দেখা যাচ্ছে, বাঁধ নির্মাণের ৫৫৩টি প্রকল্পের মধ্যে এ পর্যন্ত কাজ শুরু হয়েছে মাত্র ১০৫টির। অর্থাৎ এক–পঞ্চমাংশের বেশি প্রকল্পের কাজ এখনো শুরু হয়নি। শুধু তা–ই নয়, জেলার তিনটি উপজেলায় ৯১টি প্রকল্প বাস্তবায়ন কমিটি (পিআইসি) এখনো গঠন করা হয়নি। স্মরণ করা প্রয়োজন, বেসরকারি ঠিকাদারদের দিয়ে ফসল রক্ষা বাঁধ নির্মাণের কাজ করার কারণে ব্যাপক অনিয়ম–দুর্নীতি হতো বলে ২০১৭ সালের ব্যাপক ফসলহানির পরিপ্রেক্ষিতে ঠিকাদারি প্রথা বাতিল করে স্থানীয় লোকজনের প্রতিনিধিত্বসহ প্রকল্প বাস্তবায়ন কমিটিগুলোর দ্বারা পুরো কাজ সম্পন্ন করার নিয়ম করা হয়। হাওরের কৃষক, ইউনিয়ন পরিষদের প্রতিনিধি এবং সুবিধাভোগীদের নিয়ে গঠিত ৭ সদস্যের প্রতিটি কমিটির দায়িত্ব ছিল ১৫ ডিসেম্বরের মধ্যে কাজ শুরু করা। অথচ ৯১টি কমিটি এখনো গঠন করাই হয়নি। বাঁধগুলোর নির্মাণকাজ বাস্তবায়ন ও তদারকির জন্য গঠিত কমিটির সভাপতি জেলা প্রশাসক আর সদস্যসচিব সুনামগঞ্জ পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী। এ দুজন দায়িত্বশীল কর্মকর্তার কর্তব্য ছিল নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে পিআইসিগুলো গঠন এবং সব প্রকল্পের কাজের সূচনা নিশ্চিত করা। প্রশ্ন হচ্ছে, তাঁরা কেন তা নিশ্চিত করতে ব্যর্থ হলেন।

সুনামগঞ্জের জেলা প্রশাসক প্রথম আলোকে বলেছেন, ‘এবার নানা কারণে কাজ শুরু হতে কিছুটা বিলম্ব হয়েছে। তবে এখন যে গতিতে কাজ শুরু হয়েছে, তাতে আমরা নির্ধারিত সময়ের মধ্যেই কাজ শেষ করতে পারব।’ কিন্তু কাজ শুরু করতে বিলম্ব হয়েছে ‘কিছুটা’ নয়, অনেক বেশি বিলম্ব হয়েছে এবং শুরু করার তারিখ পেরিয়ে যাওয়ার এক মাস পরও শুরু হয়েছে মাত্র এক–পঞ্চমাংশ প্রকল্পের কাজ। বিলম্বের অজুহাত হিসেবে ‘নানা কারণ’ গ্রহণযোগ্য নয়।

অবিলম্বে সব প্রকল্পের কাজ শুরু করা হোক। ২৮ ফেব্রুয়ারি নির্ধারিত সময়ের মধ্যে সব প্রকল্পের কাজ সুসম্পন্ন করা এবং কাজের গুণগত মান শতভাগ নিশ্চিত করা একান্ত জরুরি।