ট্রাম্পকে তাড়ানোর সবচেয়ে ভালো উপায় কী?

ডোনাল্ড ট্রাম্প। ছবি: রয়টার্স
ডোনাল্ড ট্রাম্প। ছবি: রয়টার্স

গত সপ্তাহে আমার এক স্মার্ট বন্ধু আমাকে এক মজার প্রশ্ন করে: প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের রাজনৈতিক বিরোধীরা কি মনে করে যে অভিশংসন করে বা অভিযুক্ত করার মাধ্যমে তাঁকে ক্ষমতা থেকে সরানো যাবে, নাকি ২০২০ সালের নির্বাচনের মাধ্যমেই তাঁকে হটানো যাবে?

এই প্রশ্নটি কয়েক মাস ধরে স্বার্থবিরোধী মার্কিনদের উত্তেজিত করে রেখেছে। অনেকেই এ নিয়ে নানা ধরনের বিতর্কে মেতে উঠেছেন। তবে আমি নির্বাচনের মাধ্যমে ট্রাম্পকে হটানোর পক্ষপাতী। কারণ, এটার ঐতিহাসিক কর্তৃত্ব এবং বৈধতা আছে।

ট্রাম্পকে অভিশংসন করা যাবে না—এমনটা আমি বলছি না। সে আশঙ্কাকে একেবারে উড়িয়ে দেওয়া যায় না। এটা সত্য যে অভিশংসন একটি রাজনৈতিক প্রক্রিয়া এবং এটা করার জন্য যথেষ্টসংখ্যক রিপাবলিকানের সমর্থন লাগবে। আর এ জন্য ডেমোক্র্যাটদের ট্রাম্পের ভয়ংকর অপরাধগুলোর একটি তালিকা তৈরি করতে হবে।

কিন্তু আমাদের অনেকের কাছে ইতিমধ্যেই ট্রাম্পের নানা কর্মকাণ্ড ভয়ংকর রূপে ধরা দিয়েছে। মার্কিন প্রতিনিধি পরিষদের ডেমোক্রেটিক পার্টির সদস্য ব্রাড শেরমান ইতিমধ্যে তাঁর এক নিবন্ধে লিখেছেন, ট্রাম্প অবশ্যই অভিশংসনের যোগ্য। তিনি লিখেছেন, মার্কিন বিশেষ কৌঁসুলি রবার্ট ম্যুলার ইতিমধ্যেই আমাদের কাছে এই সাক্ষ্যপ্রমাণ উপস্থাপন করেছেন যে ২০১৬ সালে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের সময় রাশিয়া হস্তক্ষেপ করেছিল এবং ট্রাম্প তাদের সহযোগিতা করেছিলেন। রাশিয়া ট্রাম্পের পক্ষে ভোট দেওয়ার জন্য মার্কিন ভোটারদের প্রভাবিত করেছিল।

এ থেকে আমরা অনুমান করতে পারি যে প্রতিনিধি পরিষদের ডেমোক্র্যাট সদস্যরা বসে থাকবেন না। ট্রাম্পকে যাতে অভিশংসন করা যায়,
সে জন্য তাঁর বিরুদ্ধে তথ্যপ্রমাণ জোগাড়ে তাঁরা সচেষ্ট হবেন। সম্প্রতি নিউইয়র্ক অঙ্গরাজ্য সরকার ট্রাম্প, তাঁর ছেলে ডোনাল্ড ট্রাম্প জুনিয়র ও এরিক, তাঁর মেয়ে ইভাঙ্কা ট্রাম্প এবং তাঁর পারিবারিক ফাউন্ডেশনের বিরুদ্ধে অবৈধ কর্মকাণ্ডের অভিযোগে মামলা করেছে। এগুলো এখন বিরোধীদের অস্ত্র। হয়তো এ বছরই তারা নিজেদের মতো করে এসব অভিযোগের তদন্ত করে ট্রাম্পের এমন সব অপরাধ খুঁজে বের করবে, যা সত্যিই ভয়ংকর।

ধরে নিচ্ছি, সিনেটে ডেমোক্র্যাটদের সবাই ট্রাম্পকে অভিশংসনের পক্ষে ভোট দেবেন। প্রশ্ন হচ্ছে, সিনেটের রিপাবলিকান সদস্যদের সবাই কি অভিশংসনের পক্ষে ভোট দেবেন? মনে হচ্ছে এমন সম্ভাবনা খুবই কম।

কিন্তু অনেকের মত হচ্ছে, রিপাবলিকানরা ভোট দিক আর না দিক, ডেমোক্র্যাটদের সাংবিধানিক দায়িত্ব হচ্ছে এর চর্চা অব্যাহত রাখা। অভিশংসন হচ্ছে অযোগ্য কাউকে প্রেসিডেন্ট পদ থেকে সরানোর একমাত্র উপায়।

ডেমোক্র্যাটরা যদি এমন একজন প্রেসিডেন্টকে অভিশংসন করতে না পারেন, যিনি কিনা অবৈধ উপায়ে ক্ষমতায় এসেছেন—তাহলে কাকে তাঁরা অভিশংসন করবেন? আর তাঁরা কীভাবেই–বা তাহলে এ রকম একজন ব্যক্তির কবল থেকে দেশকে উদ্ধার করবেন?

প্রশ্নগুলো নিঃসন্দেহে ভালো। কিন্তু তাঁদের কাছে এর সুনির্দিষ্ট উত্তর আছে। যদিও ডেমোক্র্যাটদের অভিশংসন করার অধিকার আছে, কিন্তু সংবিধানে তো আরেকটা উপায়ের কথা পরিষ্কারভাবে বলা আছে, আর সেটা হচ্ছে নির্বাচন। এ পদ্ধতিতে আমেরিকানরা যে দল বা প্রেসিডেন্টকে পছন্দ করে না, তাদের পরিত্যাগ করে। যুক্তরাষ্ট্রের ইতিহাসে মোট ৪৪ বার প্রেসিডেন্টের ক্ষমতার হাতবদল হয়েছে।

মার্কিন প্রেসিডেন্টদের মধ্যে নয়জন পুনরায় দ্বিতীয় মেয়াদের জন্য নির্বাচিত হতে ব্যর্থ হয়েছেন। গত অর্ধশতকে তিনজনের ক্ষেত্রে এমনটা ঘটেছে এবং সবাই শান্তিপূর্ণভাবে ক্ষমতা হস্তান্তর করেছেন। যুক্তরাষ্ট্রের ইতিহাসে দুজন প্রেসিডেন্টকে অভিশংসন করার প্রক্রিয়া শুরু হয়েছিল। তাঁরা হলেন বিল ক্লিনটন ও অ্যান্ড্রু জনসন। এ দুজন প্রতিনিধি পরিষদে অভিশংসিত হন। কিন্তু সিনেটে তাঁরা দুজনই অব্যাহতি পান। রিচার্ড নিক্সন অভিশংসনের মুখে পড়েছিলেন। কিন্তু অভিশংসিত হওয়ার আগেই তিনি পদত্যাগ করেন।

অতীতের ঘটনাগুলো এই আভাস দেয় যে ট্রাম্পকে নির্বাচনের মাধ্যমে ক্ষমতাচ্যুত করাটাই অনেক বেশি গ্রহণযোগ্য হবে। যদি ট্রাম্পকে ভোট জালিয়াতি বা অন্যান্য অপরাধের দায়ে অভিযুক্ত করা হয়, তাঁর দলের লোকজন হয়তো এ নিয়ে ব্যাপক শোরগোল করবেন। কিন্তু ভোটাররা যদি নির্বাচনের মাধ্যমে ট্রাম্পকে প্রত্যাখ্যান করেন, তাহলে তাঁদের আর শোরগোল করার উপায় থাকবে না। তখন নির্বাচনের ফল সবাই মেনে নেবেন বা নিতে বাধ্য হবেন।

ডেমোক্র্যাটরা যদি অভিশংসনের মাধ্যমে ট্রাম্পকে ক্ষমতাচ্যুত করার চেষ্টা করতে যান, এমন হতে পারে যে রিপাবলিকানদের ভোট তাতে কম পড়তে পারে। আর এর ফলে ট্রাম্প আবারও শক্তিশালী হয়ে উঠতে পারেন। তাই ডেমোক্র্যাটদের এখন ব্যাপক হিসাব–নিকাশ করে পদক্ষেপ ফেলতে হবে।

নিউইয়র্ক টাইমস থেকে নেওয়া, অনুবাদ: রোকেয়া রহমান

মাইকেল টমাস্কি মার্কিন কলামিস্ট