ডিএনসিসি নির্বাচন

ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের (ডিএনসিসি) মেয়র পদে উপনির্বাচনে আইনি বাধা কাটলেও রাজনৈতিক বাধা রয়েছে। গত ৩০ ডিসেম্বরের সাধারণ নির্বাচন ইসিকে আরও বিশ্বাসযোগ্যতার সংকটে ফেলেছে। বিএনপি আভাস দিয়েছে তারা নির্বাচন করবে না। এ অবস্থায় একটি অধিকতর গ্রহণযোগ্য 

নির্বাচন করা ইসির জন্য বড় চ্যালেঞ্জ বলে মনে করি। সব সময় সরকারি দলের জন্য একটি অনুকূল পরিবেশ তৈরি করেই নির্বাচনের সব আয়োজন শেষ করা একটা রীতি হয়ে দাঁড়িয়েছে। এই প্রেক্ষাপটে স্থানীয় সরকার বিশেষজ্ঞরা বলছেন, আগে স্থানীয় সরকারের নির্বাচন ব্যবস্থায় প্রয়োজনীয় সংস্কার আনা জরুরি হয়ে পড়েছে।

২০১৭ সালের ৩০ নভেম্বর ডিএনসিসির নির্বাচিত মেয়র আনিসুল হকের মৃত্যুতে পদটি খালি হয়। গত বছরের ৯ জানুয়ারি ডিএনসিসির মেয়র পদে উপনির্বাচনের তফসিল ঘোষণা করে ইসি। কিন্তু আদালতে রিটের পরিপ্রেক্ষিতে নির্বাচন স্থগিত করা হয়। ওই সময় নির্বাচন না করার বিষয়ে ক্ষমতাসীন রাজনৈতিক দলের অনাগ্রহ আর লুকোছাপার বিষয় ছিল না। কারণ, তখন তারা জাতীয় নির্বাচন সামনে রেখে সিটি করপোরেশন নির্বাচন করার ঝুঁকি নিতে চায়নি। আইনি লড়াই চালানোর বিষয়ে তখন ইসিও শিথিল ভূমিকা পালন করে। সাধারণ নির্বাচনে ক্ষমতাসীনদের পাহাড় ডিঙানো জয়লাভের পরই উপজেলা নির্বাচনের ঘোষণা এল। সংবাদমাধ্যমের খবর অনুযায়ী উপজেলা নির্বাচনের ঘোষণাও একতরফা শুধু সরকারি দল ও তাদের মিত্রদের উজ্জীবিত করেছে। মনে হচ্ছে সরকারি দলের টিকিট পাওয়া মানেই নির্বাচনে জয় নিশ্চিত হওয়া।

নির্বাচন কমিশনের উচিত এই প্রশ্নের উত্তর খোঁজা যে যাঁরা কয়েক মাস আগেও ডিএনসিসি নির্বাচন দেওয়ার দাবি জানিয়ে আসছিলেন, তাঁরা কেন নির্বাচনী লড়াই থেকে নিজেদের দূরে সরিয়ে রাখার কথা বলছেন। নির্বাচন মানেই যেখানে অবাধ প্রতিদ্বন্দ্বিতা। প্রতিদ্বন্দ্বিতা ছাড়া ভোট পর্বের
আনুষ্ঠানিকতা আইনি স্বীকৃতি পেলেও তাতে জনরায়ের প্রতিফলন ঘটে না। নির্বাচন প্রক্রিয়াকে ক্রমাগতভাবে প্রশ্নের মুখে দাঁড় করানোর ফল কখনো ভালো হতে পারে না। 

নানা অভিযোগ সত্ত্বেও মানতে হবে যে ৩০ ডিসেম্বর ক্ষমতাসীন দল নিরঙ্কুশ ম্যান্ডেট নিয়ে এসেছে। এখন দেখার বিষয় তারা এই লব্ধ ক্ষমতা বা সুযোগকে কী কাজে ব্যবহার করে। আরেকটি উদ্বেগের বিষয়, বাংলাদেশ সংবিধান ও প্রচলিত আইনের আওতায় স্থানীয় সরকারের নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার জন্য ইসিকে সরকারের মুখাপেক্ষী থাকতে হয়। তাই সংস্কারের বিষয়ে স্থানীয় সরকার বিশেষজ্ঞরা দীর্ঘদিন উচ্চকিত। তাঁরা বলছেন প্রতিবেশী ভারত ও অবিভক্ত পাকিস্তান আমলেও একই তফসিলের আওতায় স্থানীয় সরকারের একাধিক স্তরের নির্বাচন হতো। এখন সাতটি আলাদা আইনের অধীনে বিভিন্ন স্তরের নির্বাচনগুলো ভিন্ন ভিন্ন তফসিল ও তারিখে অনুষ্ঠিত হয়। এর ফলে দুটি ক্ষতিকর প্রভাব আমরা প্রত্যক্ষ করি। স্থানীয় সরকারের বিভিন্ন অঙ্গের মধ্যে সমন্বয়হীনতা লক্ষ করা যায়। এতে ব্যবস্থাপনাগত সমস্যা ও জটিলতা লেগে থাকে। আর দ্বিতীয়ত ১৯৯১ সালে আমরা কেন্দ্রীয়ভাবে সংসদীয় গণতান্ত্রিক শাসনব্যবস্থায় উতরালেও পুরো স্থানীয় সরকারকাঠামো রাষ্ট্রপতি ধাঁচেরই রয়ে গেছে। এ কারণে একটি স্তরের নির্বাচিত ব্যক্তিরা অন্য একটি স্তর গঠনে ভূমিকা রাখতে পারেন না। এই ধারার অবসান হওয়া উচিত। ভারতের পশ্চিমবঙ্গের মানুষেরা যদি এক ব্যালটে ইউপি, উপজেলা ও জেলা পরিষদ গঠন করতে পারেন, তাহলে আমরা পারব না কেন?

নিয়ম রক্ষার নির্বাচন করা কাঙ্ক্ষিত নয়। নির্বাচনে অবশ্যই জনরায়ের প্রতিফলন ঘটতে হবে। সেটি এনডিসিসি, উপজেলা কিংবা অন্য যেকোনো নির্বাচনের জন্য সত্য।