ধর্ষণের মামলায় যাবজ্জীবন

মানিকগঞ্জ জেলা নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালের ধর্ষণের দায়ে এক যুবকের যাবজ্জীবন কারাদণ্ড এবং ৫০ হাজার টাকার দণ্ড দেওয়ার খবরটি আমাদের মনে কিছুটা হলেও স্বস্তি এনে দিয়েছে। কারণ, আমাদের দেশে ধর্ষকের শাস্তি বলতে গেলে হয় না।

তবে মামলাটির বিচারকাজ চলেছে অনেক দীর্ঘ সময় ধরে, যা কোনোভাবেই কাম্য নয়। প্রথম আলোর খবর অনুযায়ী, ২০০৭ সালের ৯ মার্চ রাতে মানিকগঞ্জের শিবালয় উপজেলায় এক কলেজছাত্রীকে ধর্ষণ করেন সাইদুর রহমান নামের এক যুবক। এ ঘটনায় ধর্ষণের শিকার ওই ছাত্রী নিজে বাদী হয়ে থানায় মামলা করেন। ওই বছরের ৭ জুন মামলার তদন্ত কর্মকর্তা সাইদুরের বিরুদ্ধে ট্রাইব্যুনালে অভিযোগপত্র দেন। আর রায় ঘোষণা হলো গত সোমবার। ১১ বছরের বেশি সময় লাগল মামলার রায় দিতে! অথচ আইনের বিধান অনুযায়ী, এসব মামলার বিচার ছয় মাসের মধ্যে শেষ করার কথা। মনে প্রশ্ন জাগে, কী কারণে বিচারপ্রক্রিয়া এভাবে দীর্ঘায়িত হয়?

 বাংলাদেশে প্রতিবছর বহু নারী ও শিশু ধর্ষণের শিকার হয়। ধর্ষণের ঘটনায় মামলাও হয় প্রচুর। কিন্তু সে তুলনায় ধর্ষকদের শাস্তি দেওয়ার হার খুবই কম।

সরকার ২০০১ সালে নারী ও শিশু নির্যাতন প্রতিরোধে মাল্টিসেক্টরাল প্রোগ্রামের আওতায় ঢাকা, রাজশাহী, চট্টগ্রাম, সিলেট, বরিশাল, খুলনা, রংপুর ও ফরিদপুর জেলায় ওয়ান-স্টপ ক্রাইসিস সেন্টার চালু করে। ২০১৭ সাল পর্যন্ত এই সেন্টারগুলো থেকে ৪ হাজার ৫৪১টি ধর্ষণের মামলা দায়ের হয়। এর মধ্যে ১ হাজার ২২৯টি মামলার নিষ্পত্তি হয়েছে। নিষ্পত্তি হওয়া মামলার মধ্যে মাত্র ৬০টিতে দোষী ব্যক্তিরা শাস্তি পেয়েছে। অন্যদিকে ৩ হাজার ৩১২টি মামলার নিষ্পত্তি হয়নি। এটা খুবই হতাশাজনক চিত্র।

নারী ও শিশুদের অধিকার নিয়ে কাজ করা সংস্থাগুলো বলছে, পুলিশ থেকে শুরু করে সরকারের সংশ্লিষ্ট বিভাগগুলো ঠিকমতো কাজ করছে না বলে ধর্ষণের মামলার বিচারপ্রক্রিয়া দীর্ঘায়িত হয় এবং অপরাধীদের শাস্তি হয় না। ধর্ষণের আলামত সংগ্রহ থেকে শুরু করে মামলার তদন্তপ্রক্রিয়ায় পুলিশের অদক্ষতা, আন্তরিকতাহীনতা, দুর্নীতিপ্রবণতা, ধর্ষকের রাজনৈতিক পরিচয়, প্রভাবশালীদের হস্তক্ষেপ, নারীর প্রতি নেতিবাচক দৃষ্টিভঙ্গি ইত্যাদি কারণে অধিকাংশ ধর্ষণ মামলায় আদালতে অপরাধ প্রমাণিত হয় না বলে ধর্ষক ছাড়া পেয়ে যায়।

কিন্তু এ রকম তো চলতে পারে না। ধর্ষণ একটি জঘন্য অপরাধ। এ অপরাধ করে পার পাওয়ার কোনো সুযোগ থাকা উচিত নয়। বিচারহীনতার সংস্কৃতি থেকে আমাদের বের হয়ে আসতে হবে। সরকারকে এখন এদিকে নজর দিতে হবে। ধর্ষণের বিচারপ্রক্রিয়ার দুর্বলতা ও বাধাগুলো দূর করার উদ্যোগ নিতে হবে। দ্রুত ধর্ষণ মামলা নিষ্পত্তি করতে বেশি বেশি ট্রাইব্যুনাল ও বিচারক নিয়োগ দিতে হবে। প্রতিটি ধর্ষণের ঘটনায় ধর্ষকেরা সাজা পাচ্ছে—এটা আমরা দেখতে চাই।