আস্থা ভোটে মে জয়ী, এরপর কী?

থেরেসা মে
থেরেসা মে

ইউরোপীয় ইউনিয়ন থেকে বেরিয়ে যাওয়ার জন্য ব্রেক্সিট চুক্তি ব্রিটিশ পার্লামেন্টের অনুমোদন পেতে ব্যর্থ হওয়ার পর দ্বিতীয় আস্থা ভোটে থেরেসা মের সরকার টিকে যাওয়ায় ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রীকে শ্বাস ফেলার সুযোগ দিয়েছে। এতে করে তিনি তাঁর রাজনৈতিক সমস্যাগুলো সমাধানের চেষ্টা করতে পারবেন। কেননা এখনো তাঁর বিপদ পুরোপুরি কাটেনি। তিনি আবারও আস্থা ভোটের সম্মুখীন হতে পারেন।

গত মঙ্গলবার প্রধানমন্ত্রী থেরেসা মের সম্পাদিত ব্রেক্সিট চুক্তি প্রত্যাখ্যান করেন দেশটির আইনপ্রণেতারা। এর এক দিন পর ব্রেক্সিট চুক্তি পাসে ব্যর্থ হওয়ার সুযোগ নিয়ে প্রধান বিরোধী দল লেবার পার্টির নেতা জেরেমি করবিন থেরেসা মের সরকারের বিরুদ্ধে অনাস্থা প্রস্তাব উত্থাপন করেন। সংসদের অন্যান্য বিরোধী দল লিবারেল ডেমোক্র্যাটস, স্কটিশ ন্যাশনালিস্ট পার্টি, প্লাইড কামরি ও গ্রিন পার্টি এই অনাস্থা প্রস্তাবে সমর্থন করে।

কিন্তু ক্ষমতাসীন কনজারভেটিভ পার্টির ১১৮ জন আইনপ্রণেতা সরকারের ব্রেক্সিট চুক্তির বিপক্ষে অবস্থান নিলেও অনাস্থা প্রস্তাবে তাঁরা সবাই থেরেসা মের সরকারের প্রতি সমর্থন দেন। সম্ভবত তাঁরা এখনই আরেকটি নির্বাচনের জন্য প্রস্তুত নন। আর এ কারণে উতরে গেছে থেরেসা মের সরকার।

কিন্তু কী চাইছেন যুক্তরাজ্যের পার্লামেন্টের সদস্যরা? তাঁরা কি একটি চুক্তির মাধ্যমে ইউরোপীয় ইউনিয়ন ছাড়তে আগ্রহী? তাঁরা কি কোনো চুক্তি ছাড়া ইউরোপীয় ইউনিয়ন ছাড়তে চান, নাকি তাঁরা আবার একটি গণভোট চান?

লেবার নেতা জেরেমি করবিন চাইছেন মেকে উৎখাত করতে এবং সাধারণ নির্বাচনের মাধ্যমে তাঁর দলকে ক্ষমতায় আনতে, যা কিনা তাঁকে থেরেসা মের অজনপ্রিয় বেক্সিট চুক্তি নিয়ে পুনরায় ইইউ নেতাদের সঙ্গে আলোচনা করতে সাহায্য করবে।

কিন্তু তাঁর নিজের দল লেবার পার্টির অনেক এমপি এবং সদস্য চাইছেন ব্রেক্সিট বিষয়ে দ্বিতীয়বারের মতো গণভোট হোক। তাঁদের আশা, ২০১৬ সালের গণভোটের পর যুক্তরাজ্য ইউরোপীয় ইউনিয়ন থেকে বিচ্ছেদ হওয়ার যে সিদ্ধান্ত নিয়েছিল, দ্বিতীয় গণভোটে তা উল্টে যাবে। হয়তো ব্রিটিশ জনগণ ব্রিটেনকে ইউরোপীয় ইউনিয়নে থাকার পক্ষে রায় দেবে।

লেবার পার্টির সদস্যরা আবার একইভাবে থেরেসা মের সরকারের বিরুদ্ধে অনাস্থা প্রস্তাব আনতে পারেন। এই দলের কিছু পার্লামেন্ট সদস্য এখন এটাকেই টেকসই কৌশল হিসেবে দেখছেন। তবে বুধবারের আস্থা ভোটের ফলাফল সাধারণ নির্বাচনের সম্ভাবনাকে এখনকার মতো কার্যকরভাবে নাকচ করে দিয়েছে।

এখন লেবার পার্টির নেতারা আগামী দিনে কী করবেন, তা নিয়ে পরস্পরবিরোধী বক্তব্য দিচ্ছেন। কেউ কেউ বলছেন আবারও থেরেসা মের সরকারের প্রতি অনাস্থা প্রস্তাব উপস্থাপন করতে। কিন্তু অন্যরা বলছেন, এটা হবে অর্থহীন। এ নিয়ে লেবার পার্টির মধ্যে সত্যিকারের একটি লড়াই চলছে এবং কেউ জানেন না আসলেই কী ঘটবে।

আস্থা ভোটে জয় থেরেসা মেকে সাময়িকভাবে হলেও কিছুটা অবকাশ দেবে। এই সুযোগে তিনি ব্রেক্সিট চুক্তির বিষয়ে ছাড় দেওয়ার জন্য ইইউ নেতাদের সঙ্গে আলোচনার উদ্যোগ নিতে পারবেন। তবে এই অনাস্থা প্রস্তাবে এটা বোঝা গেছে যে থেরেসা মের ওপর হাউস অব কমন্সের আস্থা আছে। এ বিষয়টি তাঁকে পরবর্তী পদক্ষেপ নিতে সাহায্য করবে।

আস্থা ভোটে জেতার বিষয়টি হয়তো থেরেসা মেকে আরও শক্তিশালী করবে। কিন্তু তার মানে এই নয় যে তিনি ফের আস্থা ভোটের সম্মুখীন হবেন না। তখন ভিন্নতর এক পরিস্থিতি সৃষ্টি হবে।

করবিন এবং লেবার পার্টির অন্য জ্যেষ্ঠ নেতারা আসলে নির্বাচনটা চাইছিলেন তাঁদের দলের সদস্যদের কাছে এই সত্যটা লুকাতে যে তাঁরা আসলে ব্রেক্সিট নিয়ে অগ্রসর হতে চান এবং এ কারণে তাঁরা দ্বিতীয় গণভোটের বিপক্ষে। মোট কথা, দ্বিতীয় গণভোট এড়াতেই তাঁরা নির্বাচনটা চাইছেন।

লন্ডনের কুইন ম্যারি ইউনিভার্সিটির রাজনীতি বিষয়ের অধ্যাপক টিম ব্যালে বলেছেন, লেবার পার্টি অনেক দিন ধরেই একটা ছুতো খুঁজছিল থেরেসা মের সরকারের বিরুদ্ধে অনাস্থা প্রস্তাব আনার। গত শরতে এক সম্মেলনে দলটির নেতারা তাঁদের সমর্থকদের আশ্বস্ত করেছিলেন যে দ্বিতীয় গণভোটের কোনো প্রয়োজন নেই, কারণ তাঁরা একটি সাধারণ নির্বাচনের ব্যবস্থা করতে সক্ষম। এ জন্য আগামী দুই থেকে তিন সপ্তাহের মধ্যে তাঁরা হয়তো ফের থেরেসা মের সরকারের বিরুদ্ধে অনাস্থা প্রস্তাব আনার চেষ্টা করবেন।

তবে লেবার পার্টি কী করবে, সেটা নির্ভর করবে থেরেসা মের পরবর্তী পদক্ষেপের ওপর। আস্থা ভোটে জয়ী হওয়ার পর থেরেসা মে বলেছেন, ব্রেক্সিটের অচলাবস্থার সমাধানে তিনি বিরোধী দলগুলোর নেতাদের সঙ্গে আলাদা বৈঠক করবেন। সত্যি বলতে, তিনি এ বৈঠক শুরু করে দিয়েছেন। এখন পরিস্থিতি লেবার পার্টির অনুকূলে যায় না প্রতিকূলে যায়, তা দেখার অপেক্ষা।
আল-জাজিরা থেকে নেওয়া, ইংরেজি থেকে অনূদিত
গ্যাভিন ও’টুলি ব্রিটিশ সাংবাদিক ও কলামিস্ট