প্রাথমিক স্কুলে ছাত্র ভর্তি

১৫ জানুয়ারি সচিবালয়ে মন্ত্রণালয়ের সম্মেলনকক্ষে ঢাকা জেলার চারটি উপজেলার শিক্ষা কর্মকর্তা ও শিক্ষকদের সঙ্গে ভিডিও কনফারেন্সে যোগ দিয়ে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের সচিব যেসব কথা বলেছেন, তা আলোচনা ও ব্যাখ্যার দাবি রাখে। ভিডিও কনফারেন্সে তিনি বলেছেন, ‘আমরা আবার নিশ্চিত করব যে কোনো প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষকদের ছেলেমেয়েরা কিন্ডারগার্টেনে পড়তে পারবে না।’

সচিবের ভাষ্য অনুযায়ী, প্রাক্-প্রাথমিকে গত বছর ২৮ লাখ শিক্ষার্থী ছিল, এবার ৩৫ লাখ ভর্তি হয়েছে। এরাই প্রথম শ্রেণিতে উত্তীর্ণ হবে। এই বিপুলসংখ্যক প্রাথমিক শিক্ষার্থীর মধ্যে কতজন প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ভর্তি হবে, আর কতজন কিন্ডারগার্টেনে যাবে, সেই ভবিষ্যদ্বাণী তিনি করেননি। প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষকেরা তাঁদের সন্তানদের প্রাথমিক বিদ্যালয়েই পড়াবেন, কিন্তু অন্যদের সন্তানদের কিন্ডারগার্টেনে পড়ালে দোষ নেই—এই নির্দেশনা বৈষম্যমূলক; এর ফল নিয়েও সংশয় আছে। সচিবের হিসাব অনুযায়ী, যদি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সব শিক্ষকের সন্তান কিন্ডারগার্টেন ছেড়ে প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ভর্তি হয়, তাহলেও মোট সংখ্যায় খুব হেরফের হবে না। দ্বিতীয়ত, প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক হয়েছেন বলেই যদি তাঁদের সন্তানদের প্রাথমিকে পড়ানো বাধ্যতামূলক হয়, ওই মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তাদের সন্তানদের কেন নয়?

সচিব মহোদয় প্রাথমিক শিক্ষা মানসম্মত করার দায়িত্বটি শিক্ষকদের ওপর দিয়ে রেহাই পেতে চান। আমরা মনে করি, প্রাথমিকে সন্তানদের পাঠানোযদি বাধ্যতামূলক করা হয়, সেটি মন্ত্রণালয়ের সর্বোচ্চ পর্যায় থেকে হওয়া উচিত। মন্ত্রীর সন্তানকে কিন্ডারগার্টেনের বদলে প্রাথমিকে ভর্তি করলে সচিবের সন্তানও সেখানে ভর্তি হবে। সচিবের সন্তান প্রাথমিকে ভর্তি হলে তাঁর অধস্তন কর্মকর্তারাও তাঁদের সন্তানদের সেখানে ভর্তি করাবেন। এভাবে প্রাথমিক শিক্ষায় একটি পরিবর্তন আসতে পারে।

সংবিধানের ১৭ অনুচ্ছেদে লেখা আছে, ‘রাষ্ট্র একই পদ্ধতির গণমুখী ও সর্বজনীন শিক্ষাব্যবস্থা প্রতিষ্ঠার জন্য এবং আইনের দ্বারা নির্ধারিত স্তর পর্যন্ত সকল বালক-বালিকাকে অবৈতনিক ও বাধ্যতামূলক শিক্ষাদানের জন্য কার্যকর ব্যবস্থা করিবে।’ গত ৪৭ বছরে অনেক সরকার এসেছে, বিদায়ও নিয়েছে। কিন্তু সংবিধানে বর্ণিত অবৈতনিক ও বাধ্যতামূলক প্রাথমিক শিক্ষার প্রাথমিক কাজটি করতে পারেনি। শিক্ষার সংস্কার নিয়ে যত কথা হয়েছে, তুলনায় কাজ হয়েছে সামান্য।

সচিব দেশের সব প্রাথমিক বিদ্যালয়কে অভিন্ন পাঠ্যক্রম পরিকল্পনার আওতায় আনার কথা বলেছেন। একই পদ্ধতির প্রাথমিক শিক্ষা চালু করতে না পারলে এই পরিকল্পনার সুফল তেমন পাওয়া যাবে না। তিনি শিক্ষা কর্মকর্তাদের আওয়ামী লীগের নির্বাচনী ইশতেহারে ঘোষিত ‘দুর্নীতির বিরুদ্ধে শূন্য সহিষ্ণুতা’র কথাও স্মরণ করিয়ে দিয়েছেন। কিন্তু তাঁর সময়ে দুর্নীতি নিরোধে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয় কী কী পদক্ষেপ নিয়েছে এবং এর ফলে দুর্নীতি কতটা কমেছে, সচিব মহোদয় তার একটি পরিসংখ্যান দিলে দেশবাসী উপকৃত হতো।