বাঞ্ছারামপুরে পুকুর ভরাট

আইন বলছে ‘হবে না’, স্থানীয় বাসিন্দারা বলছেন, ‘হবে না’, কিন্তু প্রভাবশালীরা বলছেন, ‘হতেই হবে’। সুতরাং না হওয়ার কারণ নেই। আইনকানুন, বিধি–প্রবিধি, সামাজিক আপত্তি সব উড়িয়ে দিয়ে প্রভাবশালীদের কথামতোই ‘হচ্ছে’; ২০০ বছরের পুরোনো একটি বিশাল সরকারি পুকুর ভরাট করে ফেলা হচ্ছে। কারও কথাই কানে তোলা হচ্ছে না। ব্রাহ্মণবাড়িয়ার বাঞ্ছারামপুর উপজেলার রূপসদী ইউনিয়নের হোগলাকান্দি গ্রামে এ ঘটনা ঘটছে। স্থানীয় বাসিন্দারা দেখছেন, একজন ইউপি সদস্যের সঙ্গে যোগসাজশে দুই ব্যক্তি পুকুরটি ভরাট করছেন। কিন্তু প্রথম আলোর প্রতিবেদনের সুবাদে সবাই জানতে পেরেছে, স্থানীয় সংসদ সদস্য (ব্রাহ্মণবাড়িয়া-৬) এ বি তাজুল ইসলাম বিষয়টি সম্পর্কে শুধু ওয়াকিবহালই নন; তাঁর নিজের ভাষ্যমতে তিনিই মূলত পুকুরটি ভরাট করতে বলেছেন। উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাকেও (ইউএনও) তিনি বিষয়টি জানিয়েছেন। খুব অবাক করা বিষয় হলো, সংসদ সদস্য মহোদয় ওই পুকুরটিকে পুকুর বলতে রাজি নন। তিনি মনে করেন, এটি ‘নোংরা একটি বদ্ধ জলাশয়’। এটি ভরাট করলে তাতে জনগণের উপকারই হবে।

ইউএনও যে বিষয়টি আগে থেকে জানেন এবং জেনেও কাজ বন্ধে উদ্যোগ নেননি, প্রকাশিত প্রতিবেদনে উল্লেখিত তাঁর বক্তব্য থেকে বোঝা যায়। ইতিমধ্যে প্রায় এক একর (৮৬ শতক) আয়তনের এই পুকুরের অর্ধেকের বেশি ভরাট হয়ে গেছে। অথচ পরিবেশ সংরক্ষণ আইন, ১৯৯৫-এর ৬-এর ঙ ধারায় বলা হয়েছে, আপাতত বলবৎ অন্য আইনে যা-ই থাকুক না কেন, জলাধার হিসেবে চিহ্নিত জায়গা ভরাট বা অন্য কোনোভাবে শ্রেণি পরিবর্তন করা যাবে না। সংশ্লিষ্ট ভূমি কর্মকর্তাদের ভাষ্যমতে, তাঁরা পুকুর ভরাট বন্ধে হস্তক্ষেপ করতে গিয়েও পারেননি। পরিস্থিতি বিবেচনায় তাঁদের সেখান থেকে সরে আসতে হয়েছে। পরিবেশ অধিদপ্তরের ব্রাহ্মণবাড়িয়া কার্যালয় সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের পুকুর ভরাট বন্ধের জন্য নির্দেশ দিয়েছে। কিন্তু কাজ হচ্ছে না।

দেশের এই একটি মাত্র সরকারি পুকুরই যে গায়ের জোরে ভরাট করা হচ্ছে তা নয়। দেশের আনাচকানাচে প্রতিনিয়ত এমনভাবে পুকুর-জলাশয় ভরাটের কাজ চলছেই। অথচ প্রাকৃতিক জলাধার সংরক্ষণ আইন-২০০০ অনুযায়ী, কোনো পুকুর, জলাশয়, নদী, খাল ইত্যাদি ভরাট করা বেআইনি। এটি করলে পাঁচ বছরের কারাদণ্ড বা অনধিক ৫০ হাজার টাকা অর্থদণ্ড অথবা উভয় দণ্ডের বিধান রয়েছে। কিন্তু পেশিশক্তি যখন সবকিছু নিয়ন্ত্রক হয়ে দাঁড়ায়, তখন এসব দণ্ডকে কেউ তোয়াক্কা করে না। একজন আইনপ্রণেতা যখন সচেতনভাবে আইন লঙ্ঘন করেন, তখন তা শেষ বিচারে সরকারেরই ভাবমূর্তিকে ম্লান করে দেয়। এ কারণে তাঁকে থামানোর দায় সরকারের ঘাড়ে এসে বর্তায়। সরকারের উচিত সুনির্দিষ্টভাবে বাঞ্ছারামপুরের জলাশয় ভরাট কাজটি এখনই বন্ধ করা এবং একই সঙ্গে ভরাটকারীদের দিয়েই পুকুরটির আগের অবস্থা ফিরিয়ে আনা।