নারীদের হজ প্রস্তুতি

সাম্য, মৈত্রী ও মানবতার ধর্ম ইসলাম। প্রকৃতির ধর্ম ইসলাম। নারী-পুরুষ, শিশু–বালক, কিশোর–তরুণ, যুবা–প্রৌঢ় ও বৃদ্ধ সবার জন্য ইসলামের বিধান প্রযোজ্য। যার যার সামর্থ্য অনুযায়ী করণীয় নির্দিষ্ট রয়েছে। মানবজাতির প্রায় অর্ধেক অংশ নারী। ইসলামি বিধানে নারীদের ইবাদতের বিশেষ নির্দেশনা রয়েছে।

আল্লাহ তাআলা বলেন, ‘নিশ্চয় আমি ব্যর্থ করি না কোনো আমলকারীর কর্ম, হোক সে পুরুষ বা নারী।’ (সুরা-৩ আলে ইমরান, আয়াত: ১৯৫)। পবিত্র কোরআনে আরও রয়েছে, ‘যে সৎকর্ম করবে সে পুরুষ বা নারী যদি সে বিশ্বাসী হয়, তবে আমি তাকে উত্তম জীবন দান করব।’ (সুরা-১৬ নাহল, আয়াত: ৯৭)। আল্লাহ তাআলা কোরআন কারিমে আরও বলেন, ‘আর যে সৎকর্ম করবে সে পুরুষ বা নারী যদি সে বিশ্বাসী হয়, তবে তারা জান্নাতে প্রবেশ করবে।’ (সুরা-৪০ মুমিন, আয়াত: ৪০)।

নারী ও পুরুষ উভয়ে সৃষ্টিতে স্বতন্ত্র বৈশিষ্ট্যমণ্ডিত। তাদের আমল ও বিধানেও রয়েছে বিশেষ বৈশিষ্ট্য ও স্বাতন্ত্র্য। প্রতিটি কাজ সুনিপুণ ও সুচারুরূপে সম্পাদনের জন্য প্রয়োজন পূর্বপ্রস্তুতি। সামর্থ্যবান মুসলিমের জন্য হজ জীবনে একবার ফরজ। হজ শারীরিক, মানসিক ও আর্থিক ইবাদত। এর জন্য চাই যথাযথ পূর্ণ প্রস্তুতি।

নারীরা হজের যাবতীয় কার্যাবলি পুরুষের মতো একইভাবে আদায় করবেন; কিন্তু বেশ কিছু ক্ষেত্রে এর ব্যতিক্রম রয়েছে। নারীরা ইহরাম অবস্থায় স্বাভাবিক কাপড়ই পরবেন। ইহরামের জন্য কোনো বিশেষ রং বা বিশেষ ধরনের কাপড় নির্ধারিত নেই। তবে চেহারাটা সরাসরি নেকাব দিয়ে ঢাকতে পারবেন না। প্রয়োজন মনে করলে এমনভাবে ঢাকার ব্যবস্থা করবেন, যাতে নিকাব মুখমণ্ডল স্পর্শ না করে। যেকোনো জুতা বা স্যান্ডেল পরতে পারবেন এবং মোজা ও গ্লাভস ব্যবহার করতে পারবেন। তালবিয়াহ (লাব্বাইক) ও কোনো দোয়া–কালাম উচ্চ আওয়াজে পড়বেন না। তাওয়াফের সময় রমল (দুই কাঁধ দুলিয়ে দ্রুত পায়ে চলা) করবেন না। সাঈর সময় দৌড়াবেন না। মাথার চুল মুণ্ডন করবেন না, চুলের আগার অংশ থেকে এক ইঞ্চি পরিমাণ কাটবেন। নারীদের চুল অন্য কোনো নারী বা তাঁর মাহরাম কাটতে পারবেন, যিনি ইহরামমুক্ত হয়েছেন।

নারীদের হজের ব্যয় তিনি নিজে নির্বাহ করতে পারেন। বাবা, মা, স্বামী ও সন্তান বা অন্য কেউ ব্যয়ভার বহন করলেও তাঁর হজ আদায় হবে।
মসজিদে নববিতে নারী–পুরুষ একত্রে থাকতে পারবেন না। নারীদের বসার, নামাজের ও ইবাদতের জন্য স্বতন্ত্র ব্যবস্থা আছে। মক্কা মুকাররমায় কাবা শরিফে নারী–পুরুষ একত্রে থাকতে বা একত্রে বসতে অসুবিধা নেই। কিন্তু নামাজের আগে নারীদের উঠিয়ে দিয়ে তাঁদের জন্য সংরক্ষিত স্থানে পাঠিয়ে দেওয়া হয়। ততক্ষণে নারীদের জন্য সংরক্ষিত স্থান পূর্ণ হয়ে যাওয়ায় তাঁদের নামাজে অংশগ্রহণ করতে বিশেষ অসুবিধা হয়ে থাকে। সে জন্য আগে থেকেই নারীরা তাঁদের নির্দিষ্ট স্থানে বসার চেষ্টা করবেন।

নারীদের জামাতে নামাজ
নারীদের জন্য যদিও জুমার নামাজ জরুরি নয়, তবু চাইলে মক্কা শরিফে ও মদিনা শরিফে জুমায় শরিক হতে পারবেন। অনুরূপ নারীদের জামাতে নামাজও জরুরি নয়; কিন্তু চাইলে নারী হাজি সাহেবান ফরজ নামাজ জামাতে আদায় করতে পারবেন। সুন্নত নামাজ ও নফল নামাজ নিজে একাই পড়তে হবে। তাই প্রয়োজনীয় মাসআলা–মাসায়েল এবং একা নামাজ পড়ার নিয়ম ও জামাতে নামাজ পড়ার নিয়ম ভালোভাবে জেনে নিতে হবে।

নারীদের জানাজা নামাজে অংশগ্রহণ
মক্কা শরিফে ও মদিনা শরিফে সাধারণত প্রায়ই ফরজ নামাজের পরে জানাজা নামাজ পড়া হয়ে থাকে। যদিও জানাজা নামাজে অংশগ্রহণ নারীদের জন্য জরুরি নয়; কিন্তু এ সময় এখান থেকে চলে যাওয়ারও কোনো সুযোগ নেই; তাই নারীরাও এতে জামাতের সঙ্গে অংশগ্রহণ করবেন।

কাজা নামাজ আদায়
হাজি সাহেবানরা তাঁদের জীবনের পূর্ববর্তী সময়ের কাজাকৃত নামাজ হারাম শরিফে আদায় করার চেষ্টা করবেন। এ সময় ফজর, জোহর, আসর, মাগরিব, এশা ও বিতরের নামাজ কাজার নিয়তে আদায় করা যেতে পারে। মুসাফির অথবা মুকিম যে অবস্থায় নামাজ কাজা হয়েছিল, তদনুযায়ী কাজা নামাজ আদায় করতে হবে। মক্কা শরিফ ও মদিনা শরিফে অবস্থানকালে বিগত দিনের কাজা নামাজ বেশি বেশি আদায় করতে সচেষ্ট থাকবেন।

নফল ইবাদত
নফল তাওয়াফ, ওমরাহ, সাঈ, কোরআন তিলাওয়াত, নফল নামাজ, দরুদ শরিফ পাঠ, অজিফা ইত্যাদিতে সময় কাটিয়ে দেবেন। প্রয়োজনে রাত জাগার জন্য দিনে ঘুমিয়ে নেবেন। সর্বদা নিঃশব্দে জিকির জারি রাখবেন। মনে রাখবেন, হজের সুযোগ জীবনে আর না–ও আসতে পারে।

মুফতি মাওলানা শাঈখ মুহাম্মাদ উছমান গনী বাংলাদেশ জাতীয় ইমাম সমিতির যুগ্ম মহাসচিব ও আহ্ছানিয়া ইনস্টিটিউট অব সুফিজমের সহকারী অধ্যাপক
smusmangonee@gmail,com