বিদেশে টাকা পাচার

গ্লোবাল ফাইন্যান্সিয়াল ইন্টেগ্রিটির (জিএফআই) প্রতিবেদন অনুযায়ী, কেবল ২০১২ সালেই বাংলাদেশ থেকে ১৭৮ কোটি ডলার বা ১৩ হাজার ৭৩২ কোটি টাকা পাচার হয়ে গেছে। এই অর্থ সরকারের ওই বছরের স্বাস্থ্য খাতে বরাদ্দের চেয়ে বেশি। গত এক দশকে (২০০৩-২০১২) বাংলাদেশ থেকে পাচার হয়ে যাওয়া অর্থের পরিমাণ এক লাখ কোটি টাকা, যা দিয়ে কয়েকটি পদ্মা সেতু নির্মাণ করা যেত।
পরিসংখ্যান আরও সাক্ষ্য দেয় যে যেকোনো সরকারের প্রথম দিকে টাকা কম পাচার হয় এবং শেষ সময়ে পাচারের মাত্রা বেড়ে যায়। সর্বোচ্চ পাচার হয়েছে ২০০৬ সালে, ২০ হাজার ৫৭৬ কোটি টাকা। এর কারণ সম্ভবত ক্ষমতা হারানোর পর অর্জিত অর্থের উৎস জানাতে না পারার ভয়। রাজনৈতিক অস্থিতিশীলতা ও অনিশ্চয়তাও অর্থ পাচারের একটি বড় কারণ।
বাংলাদেশ থেকে পাচার ১৪ হাজার কোটি টাকাটাকা পাচার রোধের প্রথম ও প্রধান পদক্ষেপ হলো অবৈধ অর্থের উৎসগুলো যথাসম্ভব বন্ধ করা এবং যারা এ ধরনের অপরাধের সঙ্গে জড়িত, তাদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির ব্যবস্থা করা। এ ব্যাপারে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) কার্যকর পদক্ষেপ নিতে পারে, যদিও তাদের কর্মকাণ্ডে তা প্রতীয়মান হয় না। দ্বিতীয়ত, অবকাঠামোগত সুযোগ-সুবিধা, রাজনৈতিক স্থিতিশীলতার পাশাপাশি সর্বস্তরে আইনের শাসন প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে বিনিয়োগের অনুকূল পরিবেশ সৃষ্টি করতে পারলে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা পাচারে নিরুৎসাহিত হবেন।
২০০৯ সালে আওয়ামী লীগের সরকার ক্ষমতায় আসার পর বিদেশে পাচার করা অর্থ ফেরত আনার ব্যাপারে বুলন্দ আওয়াজ তুললেও তেমন সাফল্য দেখাতে পারেনি। যে একটি মামলায় তারা সিঙ্গাপুরের ব্যাংকে গচ্ছিত আরাফাত রহমানের টাকা ফেরত আনার কৃতিত্ব দাবি করে, সেটি ছিল তত্ত্বাবধায়ক সরকারের আমলের।
টাকা পাচার একটি বৈশ্বিক প্রবণতা হলেও দরিদ্র ও ভঙ্গুর অর্থনীতির বাংলাদেশের পক্ষে এর দায় বহন করা দুরূহ। অতএব, অবৈধ উপায়ে অর্থ উপার্জনের পথ রুদ্ধ করার পাশাপাশি বিদেশে টাকা ও অর্থ পাচার বন্ধে কার্যকর ও কঠোর পদক্ষেপ নেওয়ার বিকল্প নেই।