ফসল রক্ষা বাঁধ নির্মাণ

দেশের কোথাও খাবারের অভাব দেখা দেওয়ার মতো কোনো পরিস্থিতি তখন ছিল না। কিন্তু তারপরও ২০১৭ সালের এপ্রিলের শেষ থেকে জুন পর্যন্ত খাদ্যসংকটে পড়েছিল হাওর অঞ্চলের ৯০ লাখ মানুষ। অথচ এই সংকটের জন্য দায়ী ছিল অল্প কিছু দুর্নীতিগ্রস্ত মানুষ। হাওর রক্ষার বাঁধ নির্মাণ ও দেখাশোনার দায়িত্ব ছিল যাঁদের হাতে, তাঁদের অসততা ও গাফিলতিতে বাঁধ ভেঙে ঢুকেছিল পাহাড়ি ঢল। পোয়াতি আর প্রসূতি ধানখেত ডুবে গিয়েছিল। হাওরবাসীর আয়রোজগারের সব পথ বন্ধ হয়ে গিয়েছিল। ডুবে যাওয়া ফসল পচে মাছ ও অন্যান্য জলজ প্রাণী মরে সাফ হয়ে গিয়েছিল। হাওরের মানুষ, পশু, পাখি, উদ্ভিদ—সবাই ক্ষুধাক্লিষ্ট এক দুঃস্বপ্নের ঘোরের মধ্যে হারিয়ে যাচ্ছিল।

এখন হাওরে আবার সুবাতাস বইতে শুরু করেছে। আবার সেখানে ফসল ফলছে। কিন্তু সেই আঘাতের ক্ষত পুরোপুরি শুকায়নি। মুছে যায়নি নতুন বিপদের আশঙ্কাও। ২০১৭ সালের ঘটনার পুনরাবৃত্তি যাতে না হয়, তা নিশ্চিত করতে সরকারের পক্ষ থেকে হাওর রক্ষা বাঁধ নতুন করে তৈরি করার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। কিন্তু মাঠপর্যায়ে এই কাজের দায়িত্বে যাঁরা আছেন, তাঁদের গাফিলতি ও অনিয়মের খবর পাওয়া যাচ্ছে। এই অনিয়মে উচ্চপর্যায়ের কর্মকর্তারাও ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন।

সুনামগঞ্জের জগন্নাথপুরে ফসল রক্ষা বাঁধ নির্মাণ ও সংস্কারকাজে ধীরগতি নিয়ে খবর পাওয়া যাচ্ছে। প্রকল্পের অগ্রগতি পর্যালোচনা সভায় এ নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করা হয়েছে। প্রকল্প বাস্তবায়ন কমিটির প্রধানেরা কাজে অগ্রগতি না হওয়ার নানা অজুহাত দেখিয়েছেন। কেউ বলেছেন, মাটি কাটার যন্ত্র সময়মতো জোগাড় করা যায়নি। কেউ বলেছেন, দ্বিতীয় দফার বিল না পাওয়ায় কাজ শেষ করতে সমস্যায় আছেন। পানি উন্নয়ন বোর্ডের কর্মকর্তারা বলেছেন, প্রকল্প বাস্তবায়নে যেসব সমস্যা রয়েছে, সেগুলো সমাধানে তাঁরা সব সময় মাঠে কাজ করছেন। ধীরে ধীরে সব সমস্যার সমাধান হয়ে যাবে।

সুনামগঞ্জের ধরমপাশা উপজেলার গুরমার হাওরে ফসল রক্ষা বাঁধের কাজেও অনিয়ম ও গাফিলতির প্রমাণ পাওয়া গেছে। সেখানকার সাতটি প্রকল্প বাস্তবায়ন কমিটির সভাপতি, সদস্যসচিবসহ ১৪ জনকে কারণ দর্শানোর নোটিশ দিয়েছে উপজেলা প্রশাসন। তাঁদের বিরুদ্ধে কাজে ধীরগতি ও গাফিলতি, নীতিমালা অনুযায়ী বাঁধ দৃঢ়করণ ও ঢাল না করা, নদীর পাড় কেটে বাঁধে বালু মাটি ফেলা ইত্যাদি অভিযোগ পাওয়া গেছে। নদীর পাড় কেটে বাঁধে বালুমাটি ফেলার প্রমাণও পেয়েছেন পরিদর্শনকারীরা। দেখা গেছে, অনেক বাঁধই নীতিমালা অনুযায়ী সঠিকভাবে দৃঢ়করণ ও ঢালুকরণ করা হচ্ছে না।

এখন এসব অনিয়ম করছেন যাঁরা, তাঁরা সংখ্যায় একেবারেই হাতে গোনা। এসব অনিয়মের সঙ্গে তাঁদের ব্যক্তিগত অন্যায্য স্বার্থ জড়ানো। কিন্তু তাঁদের স্বার্থসিদ্ধির জন্য লাখ লাখ মানুষকে ভয়াবহ বিপর্যয়ের মুখে পড়তে হতে পারে। এটি কোনোভাবে গ্রহণযোগ্য নয়। এ বিষয়ে প্রশাসনকে আরও সতর্ক হতে হবে, যাতে নির্ধারিত সময়ের মধ্যেই সঠিক নিয়ম মেনে বাঁধ নির্মাণ করা সম্ভব হয়।