মাধ্যমিকে শিক্ষার্থীদের ঝরে পড়া

বাংলাদেশ শিক্ষা তথ্য ও পরিসংখ্যান ব্যুরোর (ব্যানবেইস) ‘বাংলাদেশ শিক্ষা তথ্য-২০১৮’-এর প্রতিবেদনে একটি উদ্বেগজনক তথ্য প্রকাশিত হয়েছে। এক বছরের ব্যবধানে মাধ্যমিকে ছেলেদের ঝরে পড়ার হার আড়াই শতাংশ বেড়েছে। প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, এখন মাধ্যমিকে ছেলেদের ঝরে পড়ার হার ৩৬ দশমিক শূন্য ১ শতাংশ; যা আগের বছর ছিল ৩৩ দশমিক ৪৩ শতাংশ। আর ছাত্রীদের ঝরে পড়ার হার ১ শতাংশের কিছু বেশি কমলেও এখনো সেই হার ৪০ দশমিক ১৯ শতাংশ। ব্যানবেইসের এ তথ্য দেশের সামগ্রিক শিক্ষাব্যবস্থার দুর্বলতাই তুলে ধরে।

আমরা প্রাথমিকে প্রায় শতভাগ শিশুর বিদ্যালয়ে ভর্তির লক্ষ্য অর্জন করতে পারলেও দেখা যাচ্ছে যে এই শিশুদের একটা বড় অংশ মাধ্যমিক পর্যায় পেরোতে পারছে না। এসএসসি বা সমমানের শিক্ষা অর্জন করার আগেই তাদের শিক্ষাজীবনের সমাপ্তি ঘটছে। এটা খুবই উদ্বেগের বিষয়। কেননা, এ দেশে এখন এসএসসি ও সমমানের শিক্ষাগত যোগ্যতায় ভালো কোনো চাকরি মেলে না। উপরন্তু, এ পরীক্ষায় অংশ নেওয়ার আগেই যারা ঝরে পড়ছে, তাদের কোনো ডিগ্রিই নেওয়া হচ্ছে না। এরা তাদের অর্জিত শিক্ষা অচিরেই ভুলে যায় এবং অদক্ষ জনবলের খাতায় যুক্ত হয়।

মাধ্যমিকে ঝরে পড়া রোধ করতে হলে প্রথমে সমস্যার কারণগুলো চিহ্নিত করতে হবে। জানতে হবে, এ পর্যায়ে এসে কী কী কারণে শিক্ষার্থীরা ঝরে পড়ছে। সমাজের কোন শ্রেণির সন্তানদের মধ্যে ঝরে পড়ার হার বেশি। ধনী বা সচ্ছল পরিবারের তুলনায় দরিদ্র বা অসচ্ছল পরিবারে, শহরের তুলনায় গ্রামাঞ্চলের শিক্ষার্থীদের ঝরে পড়ার হার বেশি কি না; অঞ্চলবিশেষে ধর্মীয়-সাংস্কৃতিক কারণও রয়েছে কি না—এসব খতিয়ে দেখতে হবে। কারণগুলো চিহ্নিত করতে ব্যাপকভিত্তিক গবেষণা প্রয়োজন। এই দায়িত্ব নেওয়া উচিত শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের। সমস্যার কারণগুলো জানলে তাদের পক্ষে এর সমাধানও সহজ হবে। বেসরকারি সংস্থাগুলোও শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের সহযোগিতায় এই কাজ করতে পারে।

বিশেষজ্ঞদের কেউ কেউ বলেছেন, এই বয়সী ছেলেরা এলাকাভিত্তিক বিভিন্ন কাজে যুক্ত হয়ে যায়। তখন বিদ্যালয়ে না যেতে যেতে ঝরে পড়ার দিকে যায়। আর মেয়েদের ঝরে পড়ার বড় কারণ হলো দারিদ্র্য, নিরাপত্তাহীনতা, বাল্যবিবাহ ইত্যাদি। অনেকে আবার বলছেন, শিক্ষকদের রূঢ় আচরণ, অতিরিক্ত পরীক্ষার চাপ, প্রাথমিক স্তর থেকে ওপরের দিকে শিক্ষার ব্যয় ক্রমেই বেড়ে যাওয়া ইত্যাদি কারণে শিক্ষার্থীরা বিদ্যালয় থেকে ঝরে পড়ে। এটাও গুরুত্বপূর্ণ পর্যবেক্ষণ। এ ক্ষেত্রে পরীক্ষা পদ্ধতির সংস্কার ও শিক্ষা খাতে অর্থ বরাদ্দ বাড়ানোর উদ্যোগ নিতে হবে। এ ছাড়া শিক্ষার বিস্তারে দরিদ্রবান্ধব যেসব কর্মসূচি রয়েছে, সেগুলোর যথাযথ বাস্তবায়ন করতে হবে। পাশাপাশি শিক্ষা যাতে ভীতিকর না হয়ে আগ্রহের বিষয় হয়, সেদিকেও খেয়াল রাখতে হবে।