এসএসসি পরীক্ষায় অব্যবস্থাপনা

২ ফেব্রুয়ারি থেকে দেশজুড়ে মাধ্যমিক স্কুল সার্টিফিকেট (এসএসসি) পরীক্ষা চলছে। এ পর্যন্ত একাধিক বিষয়ের পরীক্ষায় যে অব্যবস্থাপনা, অনিয়ম ও ভুলত্রুটির ঘটনা ঘটেছে, তা অগ্রহণযোগ্য ও অমার্জনীয়। এবারের এসএসসি পরীক্ষায় এখন পর্যন্ত প্রশ্নপত্র ফাঁসের ঘটনা ঘটেনি, এটি ভালো কথা। কিন্তু কিছু অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা পরীক্ষার্থীদের স্বস্তি কেড়ে নিয়েছে।

প্রথম দিনে বাংলা প্রথম পত্রের পরীক্ষায় চট্টগ্রাম, জামালপুর, নওগাঁ, শেরপুর, সাতক্ষীরা, মুন্সিগঞ্জ, গাইবান্ধা, ব্রাহ্মণবাড়িয়া, বাগেরহাট ও মাদারীপুরের মোট ১৮টি কেন্দ্রে নিয়মিত পরীক্ষার্থীদের ভুল প্রশ্নপত্র দেওয়া হয়। এসব প্রশ্নপত্র ছিল পুরোনো পাঠ্যক্রমের ভিত্তিতে অনিয়মিত শিক্ষার্থীদের জন্য। এ ছাড়া চট্টগ্রামের পটিয়ার একটি কেন্দ্রের জন্য থানা ট্রেজারি থেকে প্রশ্নপত্র যাছাই করে নেওয়ার সময় ভুল করে ১০১ কোডের (বাংলা প্রথম পত্র) বদলে ১২৬ কোডের (উচ্চতর গণিত) কয়েক প্যাকেট এমসিকিউ প্রশ্নপত্র চলে যায়।

এসএসসি পরীক্ষার ব্যবস্থাপনার সঙ্গে জড়িত ব্যক্তিদের গাফিলতির এখানেই শেষ নয়। ৯ ফেব্রুয়ারি যশোর শিক্ষা বোর্ডের অধীনে তথ্য ও যোগাযোগপ্রযুক্তি (আইসিটি) বিষয়ের পরীক্ষার প্রশ্নপত্রের একটি অংশে পরদিনের ক্যারিয়ার শিক্ষা বিষয়ের প্রশ্নপত্র ছাপা হয়েছে। বিষয়টি বোর্ড কর্তৃপক্ষের নজরে এলে যশোর শিক্ষা বোর্ড কর্তৃপক্ষ আইসিটি বিষয়ের পরীক্ষা বাতিল করে। আবার একটি বিষয়ের প্রশ্নপত্রের ছাপা ছিল ত্রুটিপূর্ণ, বাঁ দিকে কাটা, যা শিক্ষার্থীদের পক্ষে উদ্ধার করা কঠিন ছিল। সব মিলে সবাই না হলেও অনেক এসএসসি পরীক্ষার্থীকে বিপদ ও অনিশ্চয়তার মধ্যে ঠেলে দিয়েছে। পরীক্ষার তারিখ একাধিকবার পরিবর্তন করা হয়েছে।

প্রথম দিনের পরীক্ষার ত্রুটি ধরা পড়ার পর শিক্ষামন্ত্রী দীপু মনি বলেছিলেন, সংশ্লিষ্ট পরীক্ষার্থীদের উত্তরপত্র অন্যভাবে দেখা হবে, যাতে শিক্ষার্থীরা ক্ষতিগ্রস্ত না হয়। কিন্তু একের পর এক প্রশ্নপত্র বিতরণে অনিয়ম ও ত্রুটির কারণে পরীক্ষার্থীদের ওপর যে প্রচণ্ড মানসিক চাপ তৈরি হয়েছে, তার ক্ষতি অপূরণীয়। ভুল প্রশ্নপত্রের কারণে আইসিটি পরীক্ষার পাশাপাশি ১৬, ১৭ ও ১৮ ফেব্রুয়ারির নির্ধারিত পরীক্ষা পিছিয়ে দিতে হয়েছে। এর ফলে পরীক্ষার্থীদের ওপর বাড়তি চাপ সৃষ্টি হয়েছে।

এসএসসির প্রশ্নপত্র মুদ্রণ বা বিতরণে কীভাবে অনিয়ম হলো, কারা এ জন্য দায়ী, সেটি খুঁজে বের করা জরুরি। আন্তশিক্ষা বোর্ড সমন্বয় সাব–কমিটি ও ঢাকা শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যান মু. জিয়াউল হক বলেছেন, যে দুটি ঘটনা ঘটেছে, তা মুদ্রণত্রুটি। মুদ্রণত্রুটি বোর্ডের হাতে নয়। মুদ্রণত্রুটি বোর্ডের হাতে নয় বলে তাঁরা পুরোপুরি দায়িত্ব এড়াতে পারেন না। প্রশ্নপত্র ছাপার দায়িত্ব বিজি প্রেসের হলেও বিতরণের কাজটি করে থাকেন পরীক্ষা গ্রহণকারী ও কেন্দ্রের সঙ্গে জড়িত ব্যক্তিরাই। প্রশ্নপত্র মুদ্রণ কিংবা বিতরণ—যেকোনো পর্যায়ে সামান্য বিচ্যুতি ঘটলে পরীক্ষার্থীরা ক্ষতিগ্রস্ত হবে, সে কথাও তাঁদের অজানা নয়।

অনেক সময় দেখা যায়, এসব অনিয়ম, ত্রুটি ও দুর্নীতির সঙ্গে যঁারা জড়িত, তাঁরা অনায়াসে পার পেয়ে যান। সরকার প্রশ্নপত্র ফাঁসের মতো গুরুতর অপরাধের সঙ্গে জড়িত ব্যক্তিদের ধরতে পারলে অনিয়ম, ত্রুটির সঙ্গে জড়িত ব্যক্তিদের আইনের আওতায় আনা কঠিন নয়।

মূলত জবাবদিহি না থাকা এবং বিচারহীনতার সংস্কৃতির কারণেই সব পর্যায়ে শিক্ষার মানের অবনতি ঘটছে। শিক্ষার হার বাড়লেও মানের অবনতি ঘটে চলেছে। শিক্ষামন্ত্রী বলেছেন, ১০ বছরে শিক্ষার্থীদের সংখ্যা বেড়েছে। এবার মানের দিকে নজর দিতে হবে। মানের দিকে নজর দিতে হলে প্রথমেই দায়িত্বে অবহেলা, অব্যবস্থাপনা ও দুর্নীতির সঙ্গে জড়িত ব্যক্তিদের শাস্তির আওতায় আনতে হবে।

লোক দেখানো তদন্ত নয়। একটি নিরপেক্ষ কমিটির দ্বারা সুষ্ঠু তদন্তের মাধ্যমে দায়ী ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হোক।