নারীর তামাক ছাড়ার হার কম

বুধবার জাতীয় প্রেসক্লাবে আয়োজিত একটি সেমিনারে গ্লোবাল অ্যাডাল্ট টোব্যাকো সার্ভে (গ্যাটস) ২০১৭ শীর্ষক একটি জরিপের আংশিক ফলাফল একদিকে যেমন আমাদের আশান্বিত করেছে, তেমনি আবার হতাশও করেছে। জরিপের ফলাফলে বলা হয়েছে, দেশে সার্বিকভাবে তামাকের ব্যবহার কমে আসছে। তবে পুরুষদের মধ্যে তামাকের ব্যবহার যে হারে কমেছে, নারীদের ক্ষেত্রে তা হয়নি।

গ্যাটসের তথ্য বলছে, গত আট বছরে পুরুষদের মধ্যে তামাকের ব্যবহার কমেছে ১৮ দশমিক ৫ শতাংশ, যেখানে নারীদের মধ্যে তামাকের ব্যবহার কমেছে ১২ দশমিক ২ শতাংশ। অর্থাৎ নারীদের মধ্যে তামাক ছাড়ার হার কম। হতাশ হওয়ার মতো আরও একটি তথ্য হচ্ছে গ্রামের দরিদ্র জনগোষ্ঠীর মধ্যে তামাক ব্যবহারের প্রবণতা বেশি।

আমাদের দেশে জর্দা ও গুলের মতো ধোঁয়াবিহীন এবং চর্বণযোগ্য তামাক গ্রহণের প্রবণতা পুরুষের চেয়ে নারীদের মধ্যে অনেক বেশি। দুই বছর আগে সামাজিক সংগঠন তামাকবিরোধী নারী জোট (তাবিনাজ) দেশের ৯ জেলায় ৪ হাজার ৫৪৬টি পরিবারের ওপর এক জরিপ চালায়। তাতে দেখা গেছে, প্রতি হাজারে ধোঁয়াবিহীন তামাক ব্যবহারকারীর মধ্যে পুরুষের সংখ্যা ৬৩, আর নারীর সংখ্যা ৩৭৯। সহজলভ্যতা এবং দাম নাগালের মধ্যে থাকায়, বিশেষ করে গ্রামীণ নারীরা সহজেই এই সর্বনাশা নেশায় আক্রান্ত হচ্ছেন।

অথচ তামাকের ক্ষতির কথা বলে শেষ করা যাবে না। মুখ, খাদ্যনালি, পাকস্থলী ও যকৃতের ক্যানসারের জন্য তামাক সরাসরি দায়ী। এর পাশাপাশি মূত্রনালি ও নারীদের জরায়ুর ক্যানসারে পরোক্ষভাবে ভূমিকা পালন করে তামাক। টোব্যাকো এটলাসের ২০১৮ সালের তথ্য অনুযায়ী, তামাকের কারণে বাংলাদেশে বছরে ১ লাখ ৬২ হাজারের বেশি মানুষ মৃত্যুবরণ করছে। পঙ্গুত্ববরণ করে প্রায় ৪ লাখ মানুষ।

জনস্বাস্থ্যের কথা বিবেচনা করে সরকার ২০০৫ সালে ‘ধূমপান ও তামাকজাত দ্রব্য ব্যবহার (নিয়ন্ত্রণ) আইন, ২০০৫’ প্রণয়ন করে। পরে আইনটিকে আরও শক্তিশালী ও যুগোপযোগী করে ‘ধূমপান ও তামাকজাত দ্রব্য ব্যবহার (নিয়ন্ত্রণ) (সংশোধন) আইন-২০১৩’ সংসদে পাস হয়। সর্বশেষ ‘ধূমপান ও তামাকজাত দ্রব্য নিয়ন্ত্রণ বিধিমালা-২০১৫’ প্রণয়ন করা হয়। কিন্তু এসব আইন ও বিধিমালার তেমন একটা প্রয়োগ হতে দেখা যায় না। এটা খুবই দুঃখজনক।

সরকারের এখন সময় হয়েছে এ ব্যাপারে কার্যকর পদক্ষেপ নেওয়ার। তামাক গ্রহণ করলে তা কতটা স্বাস্থ্যগত ঝুঁকি তৈরি করে, সে ব্যাপারে ব্যাপক প্রচারণা চালাতে হবে। সবচেয়ে ভালো হয় দেশে তামাকের ব্যবহার একেবারে নিষিদ্ধ করা। এ জন্য তামাকজাত পণ্যের উৎপাদন বন্ধে পদক্ষেপ নিতে হবে। সিগারেটসহ তামাকজাত পণ্যের আমদানি বন্ধ করতে হবে। হয়তো কাজটা সহজ হবে না, তবে সরকারের সদিচ্ছা থাকলে কোনো কিছুই অসম্ভব নয়।