রোগীর জন্য ভালোবাসা

১৪ ফেব্রুয়ারি বিশ্বের অন্যান্য দেশের মতো বাংলাদেশেও নানা আয়োজনে বিশ্ব ভালোবাসা দিবস উদ্‌যাপিত হলো। এদিন ভালোবাসার রঙে সবাই নিজেকে সাজিয়েছেন। প্রিয়জনকে শুভেচ্ছা ও ভালোবাসা জানিয়েছেন। অমর একুশে বইমেলায় সেদিন রঙিন পোশাক ও বাহারি ফুলে সজ্জিত উপচে পড়া ভিড় ছিল তরুণ-তরুণীদের। শুধু তরুণ-তরুণীই–বা কেন। নানা বয়সের মানুষ বিশ্ব ভালোবাসা দিবসটি উদ্‌যাপন করেছে নিজের মতো করে। এর আগের দিনটি ছিল বসন্তের প্রথম দিন। চারু ও কারুকলা ইনস্টিটিউটের বকুলতলায় ছিল বসন্তবরণের প্রাণমাতানো আয়োজন।

তবে ভালোবাসার দিনটিতে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার আখাউড়া উপজেলার ‘আত্মীয়’ নামের সংগঠনটি যে ভালোবাসার নজির দেখিয়েছে, তা স্মরণীয় ও অনুকরণীয় হয়ে থাকবে। সংগঠনটির কর্মকর্তা ও সদস্যরা সেদিন উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে গিয়ে ২৫ জন রোগীর মধ্যে আপেল, কমলা, আঙুর ও খেজুর বিতরণ করেছেন। তাদের সঙ্গে কিছুটা সময় কাটিয়েছেন। এ ঘটনা আমাদের মনে করিয়ে দেয় চট্টগ্রামের সেই তরুণের কথা, যিনি প্রতিদিন অফিসের কাজ শেষ করে ছুটে যেতেন হাসপাতালে। সেখানে তিনি দীর্ঘ সময় ধরে অনাথ ও অভিভাবকহীন রোগীদের সেবাশুশ্রূষা করতেন। আখাউড়ার আত্মীয় নামক সংগঠনটি তাঁর কাছ থেকেও অনুপ্রাণিত হয়ে থাকতে পারে।

উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ফল বিতরণের সময় উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের চিকিৎসক, নার্স, কর্মচারী ছাড়াও খাগড়াছড়ির সিভিল সার্জনও উপস্থিত ছিলেন। যখন উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সগুলোতে চিকিৎসক না থাকার অভিযোগ ওঠে প্রায়ই, তখন একটি স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে একজন সিভিল সার্জনের উপস্থিতি ও রোগীদের খোঁজখবর নেওয়া খুবই উৎসাহব্যঞ্জক। আমরা আশা করব, অন্যান্য সিভিল সার্জনও এভাবে রোগীদের পাশে থাকবেন।

এর পাশাপাশি আমরা কুমিল্লায় স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন ‘অন্বেষণ’কে দেখি ভালোবাসা দিবসে কুমিল্লা নগরের পার্টি সেন্টারে একটি ব্যতিক্রমী অনুষ্ঠানের আয়োজন করতে। তাদের ব্যানারে লেখা ছিল, ‘ভালোবাসা হোক সর্বজনীন, থাকবে না কেউ ভালোবাসাহীন’। আসলে বছরের একটি দিন নয়, প্রতিদিনই ভালোবাসা ছড়িয়ে দিতে হবে সমাজের যারা সুবিধাবঞ্চিত, তাদের কাছে। আমাদের একটু ভালোবাসা হয়তো তাদের জীবন বদলে দিতে পারে, আনতে পারে স্বাচ্ছন্দ্য। বছরের প্রতিটি দিনই হয়ে উঠুক ভালোবাসা দিবস।

আখাউড়ার আত্মীয় ও কুমিল্লার অন্বেষণ যে আয়োজন করেছে, তা আকারে ছোট হলেও খুব তাৎপর্যপূর্ণ ও উৎসাহব্যঞ্জক। তারা আমাদের জানিয়ে দিয়ে গেল মানুষ মানুষের জন্য। মনের সব কালিমা দূর করে আমরা যেন একে অপরের প্রতি ভালোবাসার হাত বাড়াই। এটাই হয়তো ভালোবাসা দিবসের শিক্ষা।

এই দুটি সংগঠনের দৃষ্টান্ত অনুসরণ করলে আমরা ভালোবাসায় সিক্ত করতে পারব দেশের প্রতিটি জনপদ। তখন আর কেউ ভালোবাসাবঞ্চিত থাকবে না। অন্বেষণ ও আত্মীয়কে অভিনন্দন।