উচ্চশিক্ষার পথ রুদ্ধ হবে

বাংলাদেশ একটি বিচিত্র দেশ, যেখানে কোন ধারায় বিভক্ত একটি শিক্ষাব্যবস্থা বর্তমান বাংলাদেশে উচ্চশিক্ষার মূলত দুটি ধারা প্রধান ভূমিকা রাখে।
ক. পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় ও প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়;
খ. জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ে অন্তর্ভুক্ত কলেজগুলো
উচ্চশিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে শুধু উচ্চশিক্ষা প্রদান করা হয় তা নয়, একই সঙ্গে শিক্ষা-গবেষণা ক্ষেত্রেও ভূমিকা রাখে। বাংলাদেশে সরকারি কলেজগুলোর শিক্ষার্থীর আধিক্যের কারণে শিক্ষা-গবেষণাতে তেমন ভূমিকা রাখা সম্ভব হয় না। অন্যদিকে পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়গুলো শিক্ষা গবেষণায় কতটা ভূমিকা রাখছে, সেটাও প্রশ্ন? প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়গুলো শিক্ষার চেয়ে শিক্ষাকে মূল্যবান পণ্য হিসেবে বেশি গুরুত্ব দিচ্ছে, তা তাদের পাঠ্য বিষয় বিবেচনা করলেই বোঝা যায়।
শিক্ষার্থী ভর্তির ক্ষেত্রে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে যে অর্থের প্রয়োজন, তা একটি গরিব পরিবারের পক্ষে ব্যবস্থা করা অসম্ভব। অন্যদিকে পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির জন্য যে কোচিং এবং অন্যান্য ব্যবস্থাপনার জন্য অর্থের প্রয়োজন, তা বহু কষ্টে অর্থসংস্থানের মাধ্যমে এইচএসসি পাস করা একটি গরিব শিক্ষার্থী ইচ্ছা থাকলেও সংগ্রহ করতে পারেন না। গরিব বা মাদ্রাসায় পাস করা শিক্ষার্থীদের একমাত্র ভরসার স্থল সরকারি কলেজগুলো।
ঢাকা কলেজ, ইডেন কলেজ, তিতুমীর কলেজ, বাংলা কলেজ—এ চারটি কলেজে মোট শিক্ষার্থীর সংখ্যা প্রায় দেড় লাখ। যদি কলেজগুলোকে বিশ্ববিদ্যালয়ে রূপান্তর করা হয় তবে শিক্ষার্থীর সংখ্যা দেড় লাখ থেকে (সর্বোচ্চ) ১৫ হাজারে নেমে যাবে, অন্যদিকে কম মেধাসম্পন্ন এবং গরিব ছাত্রছাত্রীরা ভর্তির সুযোগ হারাবে।
জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় একসময় পুরান ঢাকার সবচেয়ে বড় শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ছিল। বিশ্ববিদ্যালয়ে রূপান্তরের ফলে একদিকে যেমন কমেছে শিক্ষার্থীর সংখ্যা, অন্যদিকে সাধারণ গরিব শিক্ষার্থীরা হারিয়েছে পড়ার সুযোগ।
দেশের আর্থসামাজিক প্রেক্ষাপট বিবেচনা করে সরকারি কলেজকে সরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে রূপান্তর অবিলম্বে বন্ধ করা উচিত এবং সে স্থলে নতুন বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপন করা যেতে পারে।
নূর মোহাম্মদ
গ্রিন রোড, ঢাকা।