নলছিটিতে ভূমি জরিপে দুর্নীতি

ভূমি ব্যবস্থাপনায় দুর্নীতির অভিযোগের যে ব্যাপকতা, সে বিষয়টিকে সম্প্রতি আলোচনায় এনেছিলেন নবনিযুক্ত ভূমিমন্ত্রী। তিনি প্রথম রাতেই বিড়াল মারতে উদ্যোগী ছিলেন বলে প্রতীয়মান হয়। ভূমি মন্ত্রণালয়ের সব স্তরের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের সম্পদের হিসাব দিতে বলেছিলেন। কিন্তু সে ব্যাপারে এখনো তেমন অগ্রগতির খবর মেলেনি। তবে জনপ্রশাসনে যে একটি স্থায়ী ক্ষত তৈরি হয়েছে, তার আভাস মিলছে। পাবলিক সার্ভেন্ট বলতে সরকারি কর্মকর্তা ও কর্মচারী উভয়কেই বোঝায়। অথচ ভূমিমন্ত্রীর ওই ঘোষণার প্রাথমিক চমক মিলিয়ে না যেতেই বলা হয়েছে, কর্মকর্তারা নয়, কর্মচারীরা সম্পদের হিসাব দেবেন। এভাবে বিভাজন টানা অনুচিত এবং এটি একটি বৈষম্যমূলক দৃষ্টিভঙ্গি। তবে মন্ত্রীর পরিবর্তিত ঘোষণা সত্ত্বেও কর্মচারীদের সবাই যদি সম্পদের বিবরণী জমা দেন এবং তার প্রতিটির ডিজিটাল কপি যদি আমজনতার দ্বারা যাচাই-বাছাইয়ের সুযোগ তৈরি হয়, তাও একটা বিপ্লবী ফল বয়ে আনতে পারে। কিন্তু এটা সবারই জানা যে কর্মকর্তাদের সহযোগিতা ও সমর্থন ছাড়া কর্মচারীরা নিজেরা অবৈধ টাকা অর্জন করতে পারেন না। কারণ, সিদ্ধান্তগুলো কর্মচারীদের সইয়ে কার্যকর হয় না। কর্মকর্তাদের অসম্মতিতে বড় ধরনের বা কোনো কার্যকর দুর্নীতি করা সম্ভব নয়। ফলে কর্মকর্তাদের দিকে নজরদারির বিষয়টিই বেশি গুরুত্বপূর্ণ।

ঝালকাঠির নলছিটি উপজেলার সেটেলমেন্ট অফিসের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বিরুদ্ধে টাকা নেওয়ার অভিযোগ উঠেছে। এ নিয়ে প্রথম আলোতে একটি প্রতিবেদন ছাপা হয়েছে। জমির রেকর্ড সংশোধন প্রক্রিয়ার এই দুর্নীতি কোনো বিচ্ছিন্ন চিত্র নয়। সারা দেশে কমবেশি এটা চলে আসছে। দুই বছরের কম সময় আগে আমরা তথ্য প্রকাশ করেছিলাম যে দেশের ৪৩টি ভূমি জরিপ ট্রাইব্যুনালে আড়াই লাখ মামলা নিষ্পত্তির অপেক্ষায় আটকে আছে। এর ফলে সংশ্লিষ্ট এলাকাগুলোতে ভূমি বিরোধ নিরসনে জটিলতা দেখা দিয়েছে। আসলে এই জটিলতাই অনিয়ম ও দুর্নীতির বিস্তারে বিরাট ভূমিকা রাখছে।

সরকারের দায়িত্বশীলদের এটা জানা যে ভূমি জরিপ দুর্নীতির একটি মস্ত বড় উৎস হতে বাধ্য। অথচ দেশব্যাপী মাঠপর্যায়ে ভূমি জরিপ শুরু হওয়া থেকে আজ পর্যন্ত প্রশাসনের তরফে সুষ্ঠু জরিপ নিশ্চিত করতে যথা পদক্ষেপ নেওয়া হয়নি। এ বিষয়ে বরং সরকারের বিরুদ্ধে পদ্ধতিগত গাফিলতির অভিযোগ তোলা চলে। তারা বিচারক–সংকট জিইয়ে রেখেছে, এমনকি তারা আপিল ট্রাইব্যুনাল গঠন করেনি। এমন একটি বাস্তবতা নিচের পর্যায়ের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের ভূমির প্রতি ঐতিহ্যগতভাবে স্পর্শকাতর জনগণের পকেট কাটার পরিস্থিতি তৈরি করে।

নলছিটির মোল্লারহাট ও সিদ্ধকাঠি ইউনিয়নের ভুক্তভোগীরা নির্দিষ্টভাবে তিনটি মৌজার ভূমি জরিপ ও রেকর্ড সংশোধনীর নামে শতাংশ গুনে টাকা নেওয়ার অভিযোগ তুলেছেন। এর একটা আশু বিভাগীয় তদন্ত হোক। দোষী ব্যক্তিদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দিয়ে তা ভালোভাবে প্রচারের ব্যবস্থা নিলে তা দেশের অন্যান্য স্থানের দুর্নীতিবাজদের কিছুটা হলেও নিবৃত্ত করতে পারে।