ছাত্রলীগের সংঘর্ষ

কয়েক দিন আগে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্রলীগের দুই গ্রুপের মারামারি ও রক্তাক্ত ঘটনার পর কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগ সেখানে সংগঠনের কার্যক্রম স্থগিত করে দেয়। ধারণা করা গিয়েছিল, সাংগঠনিক শাস্তির পর হয়তো জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীরা কিছুটা সংযত হবেন। কিন্তু তাঁদের অভিধানে সম্ভবত ‘সংযত’ বলে কোনো শব্দ নেই। তা না হলে সোমবার ছাত্রলীগ ফের উপদলীয় কোন্দল ও সংঘাতে লিপ্ত হতো না। আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে ওই দিন জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্রলীগের দুই গ্রুপের দফায় দফায় সংঘর্ষে ৪০ জন আহত হয়েছেন, এর মধ্যে কয়েকজন সাংবাদিকও রয়েছেন। সংঘর্ষ চলাকালে সাত-আটটি ককটেল বিস্ফোরণ ঘটানো হয়।

প্রকাশিত খবরে জানা যায়, সোমবার সকালে ছাত্রলীগের জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় শাখার স্থগিত কমিটির সভাপতি তরিকুল ইসলাম ও সাধারণ সম্পাদক শেখ জয়নুল আবেদিন রাসেলের অনুসারীদের সঙ্গে সংঘর্ষ হয় পদপ্রত্যাশী বিদ্রোহী নেতা-কর্মীদের মধ্যে। এতে উভয় পক্ষের কমপক্ষে ১৫ জন আহত হন। এরপর পদপ্রত্যাশী অন্য বিদ্রোহী নেতা-কর্মীরা ক্যাম্পাস গেট থেকে সরে গেলে স্থগিত কমিটির সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকের অনুসারীরা ক্যাম্পাসের কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারের সামনে অবস্থান নেন। একপর্যায়ে মুঠোফোনে ছবি ধারণ করতে গেলে বিশ্ববিদ্যালয়ের নতুন বিল্ডিংয়ের নিচে থাকা শিক্ষার্থীদের ওপর হামলা করা হয়। এ সময় কমপক্ষে পাঁচজন সাধারণ শিক্ষার্থী আহত হন। বেলা তিনটার দিকে সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকের অনুসারীরা ক্যাম্পাস থেকে বের হয়ে প্রধান ফটকের সামনে অবস্থানরত পদপ্রত্যাশী বিদ্রোহী নেতা-কর্মীদের ধাওয়া দেন। সংঘর্ষের কারণে বিভিন্ন বিভাগের ক্লাস এবং ক্যাম্পাসের আশপাশের দোকানপাট বন্ধ হয়ে যায়।

প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগের সভানেত্রী শেখ হাসিনা ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীদের হাতে বই তুলে দিয়ে মনোযোগ দিয়ে পড়াশোনা করতে বলেছিলেন। জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রলীগের কর্মীরা এখন সেই বই ফেলে ককটেল ও লাঠিসোঁটা হাতে তুলে নিয়েছেন। একই দিন সিলেটের এমসি কলেজে মোহনা বসন্ত উৎসবস্থলে ছাত্রলীগের দুই গ্রুপের মধ্যে সংঘর্ষ হয়। যে সংগঠনের নেতা-কর্মীরা নিজেদের আদর্শবাদী বলে দাবি করেন, তাঁরা কীভাবে একটি স্থানে বসা নিয়ে সংঘর্ষে লিপ্ত হতে পারেন? সাংবাদিকেরা সেই সংঘর্ষের ছবি তুলতে গেলে তাঁরা সাংবাদিকদের ওপর চড়াও হন। এটা কী ধরনের আদর্শের প্রতিফলন?

এর আগে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে নিয়োগ-বাণিজ্যের টাকা ভাগাভাগি নিয়ে ছাত্রলীগের দুই গ্রুপ সংঘর্ষ লিপ্ত হয়। সেই ঘটনায় বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ তদন্ত কমিটিও গঠন করেছে। কিন্তু জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ একেবারে নীরব। কয়েক সপ্তাহ আগে যাঁরা সংঘর্ষ লিপ্ত হয়েছিলেন, তাঁদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নিলে হয়তো তাঁরা নতুন করে সংঘর্ষে লিপ্ত হতেন না।

ছাত্রলীগের নেতাদের দাবি, তাঁদের সংগঠনে যাঁরা নেতৃত্ব দিচ্ছেন, তাঁরা সবাই শিক্ষার্থী, ছাত্রদলের নেতাদের মতো অছাত্র নিয়ে সংগঠন তৈরি করেননি। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্র সংসদ (ডাকসু) নির্বাচনেও বয়সের কারণে ছাত্রদলের কেন্দ্রীয় নেতারা প্রতিদ্বন্দ্বিতা করতে পারছেন না বলে ছাত্রলীগের মধ্যে বেশ উল্লাস লক্ষ করা গেছে। কিন্তু জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে যেসব অঘটন ঘটল, তা প্রকৃত শিক্ষার্থীদের কাজ হতে পারে না। কোনো বিশ্ববিদ্যালয় শাখার নেতৃত্ব পাওয়ার জন্য যে ছাত্রসংগঠনের নেতা-কর্মীরা বারবার সংঘাতে লিপ্ত হতে পারেন, তাঁরা দেশবাসী বা শিক্ষার্থীদের কী দেবেন?

আমরা স্মরণ করতে পারি, ২০১২ সালে বিরোধী দলের হরতালকে কেন্দ্র করে এই বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রলীগের কর্মীরাই বিশ্বজিৎ নামের এক দরজিকর্মীকে ছুরিকাঘাতে হত্যা করেছিলেন। বিচারিক আদালতে সেই হত্যার বিচারও হয়েছে। কিন্তু সেই বিচার জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রলীগের মধ্যে বোধোদয় জাগাতে পেরেছে বলে মনে হয় না।

ঘটনার সুষ্ঠু তদন্ত ও দায়ী ব্যক্তিদের শাস্তি হোক।