আন্তর্জাতিক নারী দিবস-২০১৯: সমতায় সমৃদ্ধি

‘আন্তর্জাতিক নারী দিবস–২০১৯: সমতায় সমৃদ্ধি’ শীর্ষক গোলটেবিল বৈঠক
‘আন্তর্জাতিক নারী দিবস–২০১৯: সমতায় সমৃদ্ধি’ শীর্ষক গোলটেবিল বৈঠক
গত ২৬ ফেব্রুয়ারি ২০১৯, প্রথম আলোর আয়োজনে ও স্ট্যান্ডার্ড চার্টার্ড ব্যাংকের সহযোগিতায় ‘আন্তর্জাতিক নারী দিবস–২০১৯: সমতায় সমৃদ্ধি’ শীর্ষক গোলটেবিল বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। অনুষ্ঠানে উপস্থিত আলোচকদের বক্তব্য সংক্ষিপ্ত আকারে এই ক্রোড়পত্রে প্রকাশিত হলো।

আলোচনায় সুপারিশ
* নারীর সঙ্গে বৈষম্যমূলক আচরণ করা যাবে না
* কর্মক্ষেত্রের পরিবেশ ভালো রাখতে হবে
* পরিবারের কাজে পুরুষের আরও অংশগ্রহণ প্রয়োজন
* রাস্তার পাশে প্রয়োজনীয় সংখ্যক পাবলিক টয়লেটের ব্যবস্থা করতে হবে
* আমাদের দৃষ্টিভঙ্গির পরিবর্তন করা জরুরি
* অফিসে নিরাপদ পরিবেশ তৈরি করতে হবে
* প্রতিষ্ঠানে যৌন হয়রানি রোধের ব্যবস্থা থাকতে হবে
* সমতার জন্য পুরুষদের সহায়তা ও সমর্থন বেশি প্রয়োজন
* নারীদের জন্য আলাদা ব্যাংক প্রতিষ্ঠা করতে হবে
* নারী উদ্যোক্তা বাড়াতে হবে

আলোচনা
আব্দুল কাইয়ুম
সফলতার পেছনে নারী ও পুরুষের সমান অবদান রয়েছে। নারীকে বাদ দিয়ে পুরুষের একক অংশগ্রহণে উন্নয়ন সম্ভব নয়। কিন্তু প্রায় সব সময় নারীরা অবহেলিত হয়ে আসছেন। তাঁরা তাঁদের প্রতিভার বিকাশ ঘটানোর সুযোগ থেকে অনেক ক্ষেত্রে বঞ্চিত হচ্ছেন। এ জন্য কাঙ্ক্ষিত লক্ষ্যে পৌঁছানো সম্ভব হচ্ছে না। তাই পুরুষের পাশাপাশি নারীদের সমান অংশগ্রহণ প্রয়োজন। আজকের আলোচনায় এসব বিষয় আসবে। এখন আলোচনা করবেন নাসের এজাজ বিজয়।

নাসের এজাজ বিজয়
নাসের এজাজ বিজয়

নাসের এজাজ বিজয়
স্বাধীনতার পর থেকে এখন পর্যন্ত আমাদের জিডিপি বেড়ে চলেছে। গত এক দশকে আমাদের জিডিপির প্রবৃদ্ধি হার ছিল লক্ষণীয়। এর সঙ্গে সরাসরি সম্পৃক্ততা রয়েছে নারীর ক্ষমতায়নের।
গত ১০ বছরে কর্মক্ষেত্রে নারীর অংশগ্রহণ বেড়েছে। একই সঙ্গে বেড়েছে তাঁদের নেতৃত্বের সুযোগ। কিন্তু সেটি আরও বৃদ্ধির সুযোগ রয়েছে।
স্ট্যান্ডার্ড চার্টার্ড ব্যাংক নারীর অন্তর্ভুক্তিকরণের প্রতি বদ্ধপরিকর এবং ব্যাংকের অগ্রযাত্রায় তাদের অবদান অনস্বীকার্য। আমরা মনে করি, যত দিন পর্যন্ত আমাদের কর্মীসংখ্যার ৫০ ভাগ নারী নিশ্চিত না হচ্ছেন, তত দিন আমরা আমাদের পূর্ণ সম্ভাবনা অনুধাবন করতে পারব না।
বাংলাদেশে নারী মালিকানাধীন প্রতিষ্ঠানের সংখ্যা দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে। আর স্ট্যান্ডার্ড চার্টার্ড ব্যাংক নারী উদ্যোক্তাদের সহায়তা করতে দৃঢ়প্রত্তিজ্ঞ। এ লক্ষ্যে ব্যাংকটি নারী উদ্যোক্তাদের বিশেষভাবে ব্যবসায়িক ঋণ প্রদান করে আসছে। আমাদের স্ট্যান্ডার্ড চার্টার্ড ‘অর্জন’ নামে একটি তহবিল রয়েছে। এর মাধ্যমে সহজ শর্তে ঋণ দিয়ে নারী উদ্যোক্তাদের স্বপ্নপূরণে সহায়তা করে থাকে। এর আওতায় জমি ও সম্পত্তি বন্ধক ছাড়াই নারীদের অর্থায়নের ব্যবস্থা করা হয়।
কর্মক্ষেত্রে অনেক সময় নারীরা বঞ্চিত হন। বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে অনেক ক্ষেত্রে নারীরা পুরুষের চেয়ে কম পারিশ্রমিক পেয়ে থাকেন। সামাজিক প্রতিবন্ধকতা বিভিন্ন কর্মক্ষেত্রে নারীদের অংশগ্রহণে নেতিবাচক প্রভাব ফেলে। অনেক প্রতিষ্ঠানের পরিবেশ নারীবান্ধব নয়।এর পেছনে ব্যক্তিগত, প্রাতিষ্ঠানিক ও সামাজিক প্রতিবন্ধকতা কাজ করে। এসব কারণে অনেক সক্ষম নারী কর্মসংস্থানের সুযোগ গ্রহণ করেন না। এ জন্য ব্যক্তিগত ও সামাজিক সচেতনতা প্রয়োজন।


শাহরুখ রহমান
শাহরুখ রহমান

শাহরুখ রহমান
যুগ যুগ ধরে নারীরা অবহেলিত হয়ে আসছেন। তাঁদের মূল্যায়ন করা হয় না। কিন্তু বর্তমানে নারীদের নিয়ে অনেক কাজ করা হচ্ছে। কর্মক্ষেত্রে তাঁদের অংশগ্রহণ বেড়েছে। আরও বাড়ানো প্রয়োজন।
আমরা সব সময় শহরের নারীদের কথা চিন্তা করি। তাঁদের নিয়ে কাজ করি। ফলে তাঁরাই সুবিধা পান। কিন্তু গ্রামীণ নারীদের কথা তেমন ভাবা হয় না। গ্রামে নারীরা বিভিন্ন সমস্যার শিকার হন। পরিবারেই এই সমস্যার উৎপত্তি ঘটে। শাশুড়ির সঙ্গে ঝগড়া বাধে। এ ছাড়া স্বামীর সঙ্গেও মনোমালিন্য দেখা দেয়। অনেক সময় স্বামীর হাতে মার খেতে হয়।

নারীরা প্রতিবাদ করেন না। অনেক সময় পরিস্থিতি প্রতিবাদ করতে দেয় না। তাই গ্রামীণ নারীদের দিকে নজর দেওয়া দরকার।

প্রীতি চক্রবর্তী
প্রীতি চক্রবর্তী

প্রীতি চক্রবর্তী
নারীরা ঘরের ভেতরে অনেক কাজ করেন। এগুলোকে স্বীকৃতি দিতে হবে। শুধু বাইরে নয়, নারীর ঘরের কাজের অর্থনৈতিক মূল্যায়ন করতে হবে।

আমরা টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা (এসডিজি) বাস্তবায়নের পথে এগিয়ে যাচ্ছি। এসডিজি বাস্তবায়নের জন্য ঘরের কাজের অর্থনৈতিক মূল্যায়ন জরুরি। অন্যথায় এটা অর্জন করা সম্ভব নয়।

পুরুষেরা চাইলেই খুব সহজে গভীর রাতে আড্ডা দিতে পারেন। বিভিন্ন সেমিনার কিংবা ক্লাবে যাওয়ার সুযোগ পান। এ সময় তাঁরা বিভিন্ন প্রয়োজনীয় বিষয় নিয়ে আলোচনা করেন। কিন্তু সেটা নারীদের পক্ষে সম্ভব নয়। বেশি রাতে তাঁরা ঘরের বাইরে যেতে পারেন না। সমাজ তা মেনে নিতে পারে না। অনেক ক্ষেত্রে নারীরা ঘরের বাইরে থাকতে চান না। কারণ, পরিবারের একটা চিন্তা মাথায় সব সময় থাকে। নারীদের মানসিকতার পরিবর্তন করতে হবে।

কে এম হাবিব উল্লাহ
কে এম হাবিব উল্লাহ

কে এম হাবিব উল্লাহ

আমরা দীর্ঘদিন ধরে নারীদের নিয়ে কাজ করছি। উদ্যোক্তা তৈরি করার চেষ্টা করছি। তবে পুরুষ উদ্যোক্তা নয়। আমরা নারী উদ্যোক্তা তৈরি করছি।

সরকার বাংলাদেশকে ২০২১ সালে মধ্যম আয়ের দেশ গড়ার অঙ্গীকার করেছে। এটা বাস্তবায়নের জন্য নারীদের অংশগ্রহণ অত্যন্ত জরুরি। কেননা, পুরুষের একক প্রচেষ্টায় অতীতে সফলতা অর্জন করা সম্ভব হয়নি। সামনেও সম্ভব হবে না। আমাদের মোট জনসংখ্যার ৫০ ভাগই নারী। আর ৪০ শতাংশ নারী গ্রামে বসবাস করেন। তাঁরা প্রায় সবাই কৃষক পরিবারের সন্তান। তাঁদের শহরে আনা সম্ভব নয়।

অনেকে মেয়েকে বাইরে পাঠাতে রাজি নন। শহরে চাকরি করতেও পাঠাবেন না। এ জন্য গ্রামেই নারীদের জন্য কাজের ব্যবস্থা করে দিতে হবে। তাহলে তাঁরা সহজে কাজ করতে পারবেন। তাঁদের কোনো প্রতিবন্ধকতা থাকবে না।

থাইল্যান্ডে এক নারীর বাড়িতে থাকার অভিজ্ঞতা রয়েছে। তিনি পোলট্রি ফার্ম গ্রামে নিয়ে যান। এতে বেশ সফলতা আসে। আর সেখানকার নারীরা কর্মক্ষেত্র খুঁজে পেয়েছেন। এতে তিনি জনসমর্থন পান। পরবর্তী সময়ে থাইল্যান্ডের প্রধানমন্ত্রী হতে সক্ষম হন।

আগে রাজশাহীর পটিয়ায় মাটির ও শণের ঘর ছিল। কিন্তু এখন আর নেই। এর মূল কারণ বিনিয়োগ। সেখানে প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করা হয়। আর চামড়াসহ আনুষঙ্গিক জিনিস কিনে দেওয়া হয়। ফলে তাঁরা ঘরে বসে জুতা তৈরি করেন।

মোহাম্মদ নাছির
মোহাম্মদ নাছির

মোহাম্মদ নাছির
লেবার ফোর্স স্টাডি (শ্রম শিক্ষা অধ্যয়ন) অনুযায়ী ২০১৬-১৭ সালে বাংলাদেশের জনসংখ্যা প্রায় ১৬ কোটি ১৩ লাখ। এতে নারীর সংখ্যা প্রায় ৮ কোটি ৩ লাখ। অর্থাৎ নারীরা দেশের একটি বিরাট অংশজুড়ে রয়েছেন।

আমাদের প্রতিষ্ঠানে প্রায় ৪৪ লাখ শ্রমিক কাজ করেন। এর মধ্যে প্রায় ২৯ লাখ নারী শ্রমিক। অর্থাৎ প্রায় ৬৫ ভাগ কাজই নারীরা করেন।

একসময় নারীরা পরিবারের কোনো সিদ্ধান্ত নিতে পারতেন না। কিন্তু এখন সেই দৃশ্যটা পাল্টেছে। নারীরা আর পিছিয়ে নেই। পুরুষদের পাশাপাশি তাঁরাও এখন সিদ্ধান্ত নিচ্ছেন। সন্তানের শিক্ষা, স্বাস্থ্য ও চাকরির ক্ষেত্রেও প্রভাব রাখছেন।

২০১৭-১৮ অর্থবছরে জিডিপির প্রবৃদ্ধির হার ছিল ৭ দশমিক ৮৬ শতাংশ। এর মধ্যে নারীর একটা উল্লেখযোগ্য অবদান রয়েছে। ফলে দেশ অপ্রতিরোধ্য গতিতে এগিয়ে যাচ্ছে।

বাজেটের পরিমাণ বেড়েছে। ১৯৭২ সালে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান প্রথম বাজেট প্রদান করেন। তখন বাজেট ছিল ৭৮৬ কোটি টাকার। আর ২০১৮-১৯ অর্থবছরে বাজেট ৪ লাখ ৬৪ হাজার কোটি টাকার। নারীরা পুরুষের সঙ্গে অংশগ্রহণ করছেন বলেই এটা সম্ভব হয়েছে। অন্যথায় তা সম্ভব হতো না। তাই সামনে তাঁদের আরও বেশি অংশগ্রহণ নিশ্চিত করতে হবে।

আয়েশা বানু
আয়েশা বানু

আয়েশা বানু
আজকের তরুণেরা নারীদের ক্ষমতায়ন চান। নারীদের সমান অংশগ্রহণে দেশের উন্নতি সম্ভব। এটা তরুণেরা বোঝেন। তরুণেরা সব ক্ষেত্রে নারীদের সমান অংশগ্রহণ চান। সেটা যত তাড়াতাড়ি সম্ভব, বাস্তবায়ন করতে হবে।

লিঙ্গসমতা অর্জনে বাংলাদেশ অনেক এগিয়েছে। এশিয়ার দেশগুলোর মধ্যে শীর্ষ অবস্থানে। নারীরা বর্তমানে সবখানে অবস্থান করছেন। রাজনৈতিক, শ্রমবাজার ও ব্যবসায় নারীদের উপস্থিতি রয়েছে।

প্রাথমিক শিক্ষার পর অনেক মেয়ে শিক্ষার্থী ঝরে পড়ছে। ঘরেও অনেক নারী অত্যাচারের শিকার হচ্ছেন। সম্প্রতি বাল্যবিবাহ বড় চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়িয়েছে। এটা খুবই ভয়ানক আকার ধারণ করতে পারে। বাল্যবিবাহ প্রতিরোধে একত্রে কাজ করতে হবে।

নারীর সমান অংশগ্রহণের জন্য পুরুষকে এগিয়ে আসতে হবে। এ জন্য পুরুষদের কিছু ত্যাগ স্বীকার করতে হবে। এ ছাড়া সমতা সম্ভব নয়। নারী যেমন ঘরে–বাইরে কাজ করেন, পুরুষদেরও তেমনি ঘরে–বাইরে কাজ করতে হবে। সময় বদলেছে। এখন এভাবেই সাবইকে কাজ করতে হবে।

শিরিন সুলতানা
শিরিন সুলতানা

শিরিন সুলতানা

ক্রীড়াক্ষেত্রে পুরুষের চেয়ে নারীরা অনেক এগিয়ে রয়েছেন। গত ১২তম সাফ গেমস সেটা প্রমাণ করে। সেখানে বাংলাদেশ ৭৫টি পদক অর্জন করে। এর ৩৯টি পদকই নারীরা জিতেছেন। আমি মোট ১০টি আন্তর্জাতিক প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণ করেছি। এর মধ্যে একমাত্র বাংলাদেশি নারী হিসেবে ৯টি প্রতিযোগিতায় অংশ নেওয়ার যোগ্যতা অর্জন করেছি। সেই সঙ্গে চারটি পদকও লাভ করেছি।

ক্রীড়াক্ষেত্রে নারীদের অনেক অবদান রয়েছে। এটা সবাই একবাক্যে মেনে নেবে। কিন্তু পরবর্তী সময়ে তাঁদের সুযোগ প্রদান করা হয় না।

দেশের অধিকাংশ ফেডারেশনে নারীর আসনসংখ্যা প্রায় শূন্য। অথচ নারী আসনসংখ্যা ৩০ ভাগ করা দরকার। ক্রীড়াক্ষেত্রে নারীদের সমতা নেই। অদূর ভবিষ্যতেও থাকবে কি না, নিশ্চিত না।
দেশে এখনো নারী কোচ নেই বললেই চলে। এখানে নারীদের সুযোগ দেওয়া দরকার। তা না হলে সমতা সম্ভব নয়। আর তাতে সমৃদ্ধি ঘটবে না।

ফরিদা ইয়াসমিন
ফরিদা ইয়াসমিন

ফরিদা ইয়াসমিন
সব ক্ষেত্রেই নারীদের অংশগ্রহণ লক্ষ করা যায়। তবে এত সহজে তাঁরা কাঙ্ক্ষিত স্থানে পদার্পণ করেননি। এর পেছনে অনেক করুণ কাহিনি নিহিত রয়েছে।

নারীরা অস্তিত্বের সঙ্গে সংগ্রাম করে বিভিন্ন চ্যালেঞ্জিং পেশায় কাজ করছেন। এরপরও কোনো এক অদৃশ্য সুতা তাঁদের পিছু টানে। এটা শুরু হয় ঘর থেকে। পরিবারের সদস্যরা মেয়েদের অবাধ বিচরণ মানতে পারেন না। তাঁরা নারীদের ঘরে আবদ্ধ করে রাখতে চান।

নারী-পুরুষের সমতার জন্য পুরুষদের এগিয়ে আসতে হবে। তাঁদের নিয়েই বেশি কাজ করতে হবে। তাই তাঁদের সেমিনারে আনতে হবে। কিন্তু এর উল্টোটা করা হয়। তাঁদের তুলনায় নারীদেরই বেশি আনা হয়। শিশু ও নারীরা এখনো নির্যাতনের শিকার। সেটা অচিরেই কমাতে হবে। মেয়েরা অনেক ক্ষেত্রে হাল ছেড়ে দেয়। ছোটবেলা থেকেই তারা বঞ্চিত হতে থাকে। ফলে তারা মনোবল হারিয়ে ফেলে। মূলত মনোবল ভেঙে ফেলা হয়।
প্রাতিষ্ঠানিক পর্যায়েও নারীরা বাধা পান। সেটা অতিক্রম করে অনেকে কর্মক্ষেত্রে প্রবেশ করেন। সেখানেও তাঁরা সহযোগিতা পান না। অনেকে তাঁদের কর্মক্ষমতা নিয়ে প্রশ্ন তোলে। অথচ সবার উচিত তাঁদের উৎসাহ প্রদান করা।
নারী নির্যাতন কমাতে অথবা বন্ধ করতে হবে। এখনো পত্রিকা খুললেই নারী নির্যাতনের খবর দেখতে পাই। এটা কমাতে না পারলে সমৃদ্ধি সম্ভব নয়।

শাহ্‌নাজ মুন্নী
শাহ্‌নাজ মুন্নী

শাহ্‌নাজ মুন্নী

নারীরা অনেক এগিয়েছেন। তারপরও অনেক ক্ষেত্রে প্রশ্নবোধক চিহ্ন রয়ে গেছে। এই জায়গাগুলো চিহ্নিত করে সমাধান করতে হবে। সাংবাদিকতা পেশায় নারীদের অংশগ্রহণ লক্ষ করা যাচ্ছে। কিন্তু সেটা আশানুরূপ নয়। সাংবাদিকতায় তাঁদের অংশগ্রহণের পথটা খুব বেশি মসৃণ নয়।

সাংবাদিকতা একটি চ্যালেঞ্জিং পেশা। তবে গত ২০ বছরে অনেক নারী এই পেশা গ্রহণ করেছেন। কিন্তু গণমাধ্যমে নারী-পুরুষের অংশগ্রহণ সমান নয়। টেলিভিশনের পর্দায় নারী উপস্থিতি দেখা যায়। অনেক সময় তাঁদের ব্যবহার করা হয়। প্রতিবেদনে তাঁদের অংশগ্রহণ খুবই কম।

শুরুতে অনেক তরুণী এই পেশা বেছে নেন। কিন্তু সময়ের পরিবর্তনে তাঁদের আর খুঁজে পাওয়া যায় না। বিশ্ববিদ্যালয়ের অনেক তরুণীও সাংবাদিকতা পেশা গ্রহণ করেন। কিন্তু একটা পর্যায়ে তাঁরা ঝরে যান। অনেক ক্ষেত্রে পারিবারিক সমর্থন পান না। যানবাহনে নারীরা হয়রানির শিকার হন। নারীকে বাইরে আনতে হলে নিরাপত্তা দিতে হবে। কর্মক্ষেত্রের পরিবেশ ভালো থাকতে হবে।

অনেক পত্রিকা অফিসে নিরাপদ পরিবেশ থাকে না। নারীরা গভীর রাত পর্যন্ত কাজ করতে প্রস্তুত থাকেন। কিন্তু সমাজ সেটা করতে দেয় না। তাই আমাদের দৃষ্টিভঙ্গি পরিবর্তন করতে হবে।

কাশফিয়া ফিরোজ
কাশফিয়া ফিরোজ

কাশফিয়া ফিরোজ
তৃণমূল পর্যায়ে নারীদের নিয়ে অ্যাকশনএইড কাজ করে। আমরা গ্রামপর্যায়ে অনেক গবেষণা করেছি। একটা গবেষণায় দেখা গেছে, বীজ বপন থেকে ধান কাটা পর্যন্ত মোট ২২ ধাপে কাজ করতে হয়। এর মধ্যে ১৯টি ধাপে নারীরা সরাসরি যুক্ত। কিন্তু বাজারজাতকরণে পুরুষেরা একক ভূমিকা পালন করেন। সেখানে নারীদের কোনো অংশগ্রহণ থাকে না। আর ফসল বিক্রি শেষে স্ত্রীর জন্য একটি শাড়ি আনা হয়। স্ত্রী সেটিতেই খুশি থাকেন।

এখানে নারীর কোনো মূল্যায়ন করা হয় না। ১৯টি ধাপে কাজ করার মূল্য মাত্র একটি শাড়ি। নারীরা কাজ করার জন্য ঘর থেকে বের হয়ে আসছেন। কিন্তু কাজে পূর্ণ মনোযোগ দিতে পারেন না। কেননা, পরিবারের চিন্তা মাথায় ঘুরপাক খায়।

অ্যাকশনএইডের আরেকটি গবেষণায় দেখা যায়, নারীরা অবৈতনিকভাবে সাড়ে ছয় ঘণ্টা শ্রম দেন। আর সেখানে পুরুষেরা মাত্র ৩০ মিনিট কাজ করেন। এরপরও নারীরা কোনো অভিযোগ করেন না। সেই সঙ্গে নারীরা শ্রমের মূল্যও চান না। রাস্তার পাশে প্রয়োজনীয় সংখ্যক পাবলিক টয়লেটের ব্যবস্থা করতে হবে। কেননা, রাস্তাঘাটে নারীরা অনেক সমস্যায় পড়তে পারেন। এ সময় তাঁদের পিরিয়ডও হতে পারে।

নাসরীন ফাতেমা আউয়াল
নাসরীন ফাতেমা আউয়াল

নাসরীন ফাতেমা আউয়াল
গ্রামের নারীরা শহরে আসছেন। আর বিভিন্ন কর্মক্ষেত্রে কাজ করছেন। কিন্তু তাঁদের নিরাপত্তা এখনো নিশ্চিত করা যায়নি। পত্রিকায় সব সময় নারী লাঞ্ছনার সংবাদ দেখা যায়। এ ছাড়া তাঁরা যৌন হয়রানি, অ্যাসিড নিক্ষেপসহ বিভিন্ন সমস্যার সম্মুখীন হন। এগুলো বন্ধ হতে হবে।

বেতনবৈষম্যের বিষয়টি দীর্ঘদিন ধরে চলে আসছে। পুরুষেরা বেশি বেতন পান আর নারীরা তুলনামূলকভাবে কম বেতন পান। যদিও তাঁদের কাজের সময় একই। নারীরা কাজের জন্য সমান সময় ব্যয় করেন। নারীদের মানুষ ভাবা হয় না। তাঁদের মেশিন মনে করা হয়। তাঁরা ঘর ও সংসার চালাবেন। এটাই তাঁদের কাজ।

আমাদের দেশের নারীরা অনেক বেশি এগিয়েছেন। তাঁরা পুলিশে, আর্মিতে, শিক্ষা, ব্যবসাসহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে রয়েছেন। কিন্তু সমপরিমাণে নেই। নারীদের জন্য কোনো ব্যাংক নেই। তাঁদের জন্য পৃথক ব্যাংকের ব্যবস্থা করতে হবে। তাহলে নতুন নারী উদ্যোক্তা পাওয়া যাবে।

বিটপী দাশ চৌধুরী
বিটপী দাশ চৌধুরী

বিটপী দাশ চৌধুরী
অর্থনৈতিক স্বাধীনতার নিশ্চয়তার জন্য শিক্ষার পাশাপাশি নারীকে বিভিন্ন কাজে দক্ষ করে গড়ে তোলার প্রশিক্ষণ দেওয়া প্রয়োজন। পাশাপাশি নারী উদ্যোক্তাদের জন্য নিশ্চিত করতে হবে এক্সেস টু ফিন্যান্স। নারীর শিক্ষা অত্যন্ত জরুরি। এটা কর্মসংস্থান ও ব্যবসায়িক উদ্যোগে সহায়ক ভূমিকা পালন করে। নারীর ক্ষমতায়নে ব্যক্তি খাতেরও বড় ভূমিকা রয়েছে।

নারীর উন্নয়নে বেশি গুরুত্বপূর্ণ তাঁর আত্মবিশ্বাস। নারীদের নিজেদের আগে এগিয়ে আসতে হবে। নিজেদের দুর্বল ভাবা চলবে না। নারীর প্রতি দৃষ্টিভঙ্গি পাল্টাতে হবে। নারীকেই নারীর উন্নয়নে উদ্যেগ নিতে হবে। নারীর ও পুরুষের পেশা আলাদা ভাবা যাবে না।

নারী সহকর্মীদের নেতৃত্ব ও দক্ষতা উন্নয়নে উৎসাহিত করার জন্য স্ট্যান্ডার্ড চার্টার্ড উইমেন্স নেটওয়ার্ক ‘ফিমেল লিডারশিপ ডেভেলপমেন্ট প্রোগ্রাম’ চালু করেছে।

কর্মক্ষেত্রের বাইরে স্ট্যান্ডার্ড চার্টার্ড ব্যাংক ২০১৩ সালে ‘গোল’ প্রকল্প চালু করে। এ কর্মসূচির মাধ্যমে খেলাধুলা ও জীবনভিত্তিক প্রশিক্ষণে আত্মবিশ্বাস এবং জ্ঞান ও দক্ষতা তৈরির মাধ্যমে সমাজে নারীর ক্ষমতায়নে সহযোগিতা করা হয়। ইতিমধ্যে ৩৯ হাজারের বেশি অংশগ্রহণকারীর কাছে প্রকল্প পৌঁছে গেছে। তাদের মধ্য থেকে ৮৫০ জন গোল চ্যাম্পিয়ন হয়েছে।

যেসব সংগঠন ও প্রতিষ্ঠান লিঙ্গ, জাতি, ধর্ম, বর্ণ ইত্যাদির দিক থেকে বেশি বৈচিত্র্যপূর্ণ, তাদের উন্নয়ন কম বৈচিত্র্যপূর্ণ সংগঠন ও প্রতিষ্ঠানগুলোর তুলনায় টেকসই হয়। সবাই সমন্বিতভাবে কাজ করলে নারীর আরও ক্ষমতায়ন ও অন্তর্ভুক্তি সম্ভব। এ ক্ষেত্রে আমাদের যেমন নারীর প্রতি নেতিবাচক দৃষ্টিভঙ্গি বদলাতে হবে, তেমনি নারীদেরও বদলাতে হবে। হয়ে উঠতে হবে আরও সর্বজনীন।

রাশেদা কে চৌধূরী
রাশেদা কে চৌধূরী

রাশেদা কে চৌধূরী
নারীরা অনেক কষ্ট করে তৃণমূল থেকে ওপরে এসেছেন। নীতিনির্ধারণের সময় এটা আমলে আনা হয়। নারীর প্রতি সহিংসতা রোধে সবাইকে একত্রে কাজ করতে হবে। বাল্যবিবাহ অনেক বড় অপরাধ। এটা অনেক আগে থেকেই প্রচলিত। এটাকে সামাজিক ব্যাধিও বলা যায়। বাল্যবিবাহ প্রতিরোধ করতে হবে।

মৌলভীবাজারের আদিবাসী কিশোরীদের সঙ্গে কথা হয়। তারা কেউ বাল্যবিবাহের পক্ষে কথা বলেনি। তারা তাদের অভিভাবকদের বোঝাতে বলেছে। কেননা, বাবা-মায়েরাই অল্প বয়সে বিয়ে দিতে চান। ছেলেরা অল্প বয়সী মেয়েদের বিয়ে করতে আগ্রহ প্রকাশ করে। তাই তাদের নিয়ে পরামর্শ সভা করা প্রয়োজন। এভাবে তাদের সচেতন করে তুলতে হবে।

মেয়েরা বিয়ে করতে চায় না। তারা পড়ালেখা করতে চায়। মাধ্যমিকে মেয়েদের ঝরে পড়ার হার তুলনামূলকভাবে কম। সেখানে ছেলেদের হার

অনেক বেশি। কর্মসূচি গ্রহণ করার সময় কোনো সুনির্দিষ্ট পরিকল্পনা থাকে না। তাই চিন্তা করে পরিকল্পনা গ্রহণ করতে হবে। নারীদের সহানুভূতির চোখে দেখা হয়। এ ধরনের মানসিকতা থেকে বেরিয়ে আসতে হবে।

সেলিমা আহমাদ
সেলিমা আহমাদ

সেলিমা আহমাদ
প্রতি মাসে সেমিনার কিংবা গোলটেবিলের আয়োজন করতে হবে। দীর্ঘদিন পর একবার আলোচনা করলে সমস্যার সমাধান হয় না। আলোচনার পর চুপচাপ থাকলেও সমাধান সম্ভব নয়।
পোশাকশিল্পে নারীদের অংশগ্রহণ সবচেয়ে বেশি। সেই তুলনায় পুরুষেরা পিছিয়ে রয়েছেন। সেবা খাতে নারীদের অংশগ্রহণ সন্তোষজনক।

দেশে আইন থাকা সত্ত্বেও অপরাধ সংঘটিত হয়। অনেক সময় আইন সঠিকভাবে প্রয়োগ করা হয় না। আবার সাধারণ জনগণও অনেক সময় অাইন মানে না।

অনেক মা–বাবা অল্প বয়সে মেয়ের বিয়ে দেন। এর কারণ হিসেবে তাঁরা নিরাপত্তার অভাবকে দোষারোপ করেন। তাই আইনকে তৃণমূল পর্যায়ে নিয়ে যেতে হবে।
বাল্যবিবাহ ও যৌতুকের কথা জানানো হলেও প্রশাসন অনেক সময় নিশ্চুপ থাকে। দুর্নীতিসহ বিভিন্ন অপকর্মের কারণে এমনটা হয়। ফলে ভুক্তভোগীরা সুষ্ঠু বিচার পায় না।

নারীর অর্থনৈতিক ক্ষমতায়ন খুবই জরুরি। সেই সঙ্গে কারিগরি শিক্ষারও দরকার রয়েছে। তবেই সমতায় সমৃদ্ধি সম্ভব হবে।

টিপু মুনশি
টিপু মুনশি

টিপু মুনশি
দেশে সমৃদ্ধির জন্য নারী-পুরুষের সমতা প্রয়োজন। আর সমতার জন্য পুরুষদের মানসিকতা পরিবর্তনের দরকার। তাই সেমিনারগুলোতে পুরুষদের অংশগ্রহণ বাড়াতে হবে। তাহলে তাঁদের বোধশক্তি জাগ্রত হবে।

আমার এলাকার এক মেয়ে দৌড়ে জাতীয় চ্যাম্পিয়ন হয়। তাকে প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করে দেওয়ার চিন্তা করি। কিন্তু তার মায়ের কাছ থেকে প্রথম বাধা আসে। তিনি কোনোভাবেই মেয়েকে বাইরে পাঠাতে প্রস্তুত নন। শেষ পর্যন্ত সেই মেয়ের প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করা যায়নি। তাই পরিবারের সহযোগিতা দরকার।

আমাদের এলাকায় আবাদি কাজকর্মে নারীরা সমানতালে অংশগ্রহণ করেন। কিন্তু তাঁদের ন্যায্য মজুরির ব্যবস্থা করে দেওয়া সম্ভব হয়নি। আমাদের এলাকায় প্রত্যন্ত অঞ্চলে একটি কলেজ আছে। সেখানে বিপুলসংখ্যক মেয়ে লেখাপড়া করছে। তারা সাইকেল চালিয়ে কলেজে পড়তে যায়। এটি ইতিবাচক দিক।

বাল্যবিবাহের ক্ষেত্রে মায়েরা চাপ দেন। তাঁদের মানসিকতার পরিবর্তন ঘটাতে হবে। এ জন্য পুরুষদের কাজ করতে হবে। তাঁরাই নারীদের সচেতনতা বাড়াতে সক্ষম হবেন।

সরকার আইন প্রণয়ন করে। কিন্তু সেটা বাস্তবায়ন করা সম্ভব হয় না। এ জন্য সমাজকে দায়ী করা যেতে পারে। কেননা, সমাজব্যবস্থা অনেক ক্ষেত্রে অনুকূলে থাকে না। সরকারের একার পক্ষে লড়াই করা সম্ভব নয়। সবাইকে সমন্বিতভাবে কাজ করতে হবে। তাহলে নারী-পুরুষ সাম্যাবস্থা নিশ্চিত হবে। আর দেশ সমৃদ্ধির পথে এগিয়ে যাবে।

আব্দুল কাইয়ুম

নারীর প্রতি সামাজিক নেতিবাচক দৃষ্টিভঙ্গি বদলাতে হবে। নারী–পুরুষ একসঙ্গে কাজ করলেই দেশ এগিয়ে যাবে। নারীর সমান অংশগ্রহণ নিশ্চিত করা প্রয়োজন। আলোচনায় অংশগ্রহণের জন্য প্রথম আলোর পক্ষ থেকে কৃতজ্ঞতা ও ধন্যবাদ।এই গোলটেবিল বৈঠক আলোচনায় আমন্ত্রিত আলোচকদের বক্তব্য তাঁদের নিজম্ব মতামত। এ জন্য স্ট্যান্ডার্ড চার্টার্ড ব্যাংক কোনো দায় বহন করবে না।

যাঁরা অংশ নিলেন

টিপু মুনশি: মাননীয় সাংসদ, মন্ত্রী, বাণিজ্য মন্ত্রণালয়

সেলিমা আহমাদ: মাননীয় সাংসদ,সভাপতি, বাংলাদেশ উইমেন চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রি (বিডব্লিউসিসিআই)

রাশেদা কে চৌধূরী: নির্বাহী পরিচালক, গণসাক্ষরতা অভিযান

নাসের এজাজ বিজয়: প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা, স্ট্যান্ডার্ড চার্টার্ড ব্যাংক

মোহাম্মদ নাছির: সহসভাপতি, বিজিএমইএ

আয়েশা বানু: অধ্যাপক, উইমেন অ্যান্ড জেন্ডার স্টাডিজ বিভাগ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়

ফরিদা ইয়াসমিন: ডেপুটি পুলিশ কমিশনার, উইমেন সাপোর্ট অ্যান্ড ইনভেস্টিগেশন ডিভিশন

কে এম হাবিব উল্লাহ: চেয়ারপারসন, এসএমই ফাউন্ডেশন

কাশফিয়া ফিরোজ: ব্যবস্থাপক, উইমেন রাইটস অ্যান্ড জেন্ডার ইক্যুইটি, অ্যাকশনএইড বাংলাদেশ

শাহরুখ রহমান: সভাপতি, উইমেন এন্ট্রাপ্রেনিউর অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (ডব্লিউইএবি)

নাসরীন ফাতেমা আউয়াল: প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি, উইমেন এন্ট্রাপ্রেনিউর অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (ডব্লিউইএবি), সহসভাপতি, মাল্টিমোড গ্রুপ

প্রীতি চক্রবর্তী: চেয়ারম্যান, ইউনিভার্সেল মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল

শাহ্্নাজ মুন্নী: প্রধান বার্তা সম্পাদক, নিউজ টোয়েন্টিফোর

বিটপী দাশ চৌধুরী: হেড অব করপোরেট অ্যাফেয়ার্স, স্ট্যান্ডার্ড চার্টার্ড ব্যাংক

শিরিন সুলতানা: জাতীয় ক্রীড়াবিদ ও উদ্যোক্তা

সঞ্চালক

আব্দুল কাইয়ুম: সহযোগী সম্পাদক, প্রথম আলো