সংকট থেকে বের হওয়ার পথ কী?

হুয়ান গুয়াইদো গত ২৩ জানুয়ারি নিজেকে ভেনেজুয়েলার অন্তর্বর্তীকালীন প্রেসিডেন্ট হিসেবে ঘোষণা দেওয়ার পর হয়তো ভেবেছিলেন খুব সহজেই দেশটির শাসক বদলানো যাবে। তাঁর মদদদাতা ওয়াশিংটনও হয়তো সে রকমই ভেবেছিল। কিন্তু দেখা গেল, গুয়াইদো এবং মার্কিন প্রশাসন প্রেসিডেন্ট নিকোলা মাদুরো ও তাঁর সমর্থকদের যতটা দুর্বল ভেবেছিল, আসলে তাঁরা তা নন। দেশটির সামরিক ছাউনি থেকে গুয়াইদোর অভ্যুত্থানের আহ্বান প্রত্যাখ্যান এবং গত মাসে সব সীমান্তে পশ্চিমাদের পাঠানো ‘মানবিক সহায়তা’ বিতরণ মাদুরোপন্থীদের রুখে দেওয়ার মধ্য দিয়ে গুয়াইদো এখন বুঝতে পারছেন, মাদুরোকে উৎখাত করা এতটা সহজ হবে না। মার্কিন ভাইস প্রেসিডেন্ট মাইক পেন্স সামরিক বাহিনীর সমর্থন অর্জনে ব্যর্থ হওয়ায় গুয়াইদোকে ইতিমধ্যে ভর্ৎসনা করেছেন।

গুয়াইদোর অভ্যুত্থানচেষ্টা ব্যর্থ হলেও ভেনেজুয়েলা এখনো গভীর সংকটের মধ্যে রয়েছে। দেশের বিরাট অংশজুড়ে বিদ্যুৎ–সংযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে রয়েছে। জিনিসপত্রের দাম হু হু করে বাড়ছে। খাওয়ার পানি ও রান্নার গ্যাস পাওয়া যাচ্ছে না। মাদুরো বলেছেন, সরকার উৎখাতে পশ্চিমা অনুপ্রবেশকারীরা এই সমস্যা তৈরি করেছে। ভেনেজুয়েলার ওপর আগে থেকেই যুক্তরাষ্ট্র যে অবরোধ আরোপ করে রেখেছে, তা আরও বেশি শক্ত করা হচ্ছে। এতে বোঝা যাচ্ছে আগামী মাসগুলোতে মাদুরো সরকার এবং শাভিস্তাদের (প্রয়াত হুগো চাভেজের রাজনৈতিক মতাদর্শের অনুসারীদের) আরও অনেক বড় দুর্দিন মোকাবিলা করতে হবে। প্রতিদিনই সেখানে উত্তেজনা বাড়ছে। এতে সামরিক হস্তক্ষেপের আশঙ্কাও বাড়ছে। এ অবস্থায় শান্তিপূর্ণ সমাধানের জন্য অনেকেই এখন বিকল্প পথ হিসেবে নতুন করে নির্বাচন দেওয়ার কথা বলছেন। এমনকি তাঁদের মধ্যে অনেক বামপন্থীও রয়েছেন।

নতুন করে ভোটের প্রস্তাবের পক্ষের যুক্তি হলো, উভয় পক্ষই নিজেদের যখন জনপ্রিয় বলে দাবি করছে, তখন নতুন নির্বাচনে যেতে অসুবিধা
কোথায়? কিন্তু কথা হলো, মাত্র এক বছরের কম সময় আগে ভেনেজুয়েলায় লাখ লাখ ভোটার ভোট দিয়েছেন। এখন আবার ভোট দেওয়ার বিষয়টি মেনে নেওয়া তাঁদের জন্য খুব সহজ হবে না। বিরোধী দলগুলো নিকোলা মাদুরোর পুনর্নির্বাচন মেনে নিতে অস্বীকার করেছে, কিন্তু এখনো তারা তার সুস্পষ্ট কারণ দেখায়নি।

এমনকি অনেক ডানপন্থীও বলছেন, দেশের একটা বিরাট অংশে বিরোধীরা গত নির্বাচনে অংশ নেয়নি। সে নির্বাচনে মাদুরো জয়ী হয়েছেন। তাহলে এখন শাভিস্তারা কেন গুয়াইদোর চাপে পড়ে নতুন করে নির্বাচন দিতে যাবেন? তাঁরা মনে করছেন, মাদুরো যদি এখন চাপে পড়ে নির্বাচনে যান, তাহলে দেশবাসীর কাছে তিনি একজন দুর্বল নেতা হিসেবে প্রতিপন্ন হবেন। তবে গুয়াইদোর বক্তব্য থেকে এটা বোঝা যাচ্ছে, তিনি নিজেও মাদুরোকে ক্ষমতায় রেখে নতুন করে নির্বাচন চাওয়ায় আগ্রহী নন। তিনি এবং তাঁর পশ্চিমা পৃষ্ঠপোষকেরা চান, এখনই মাদুরো পদত্যাগ করুন। তারপর ৩০ দিনের মধ্যে নির্বাচন হোক। আসলে নির্বাচন নিয়ে এখন বিরোধী দল বা ওয়াশিংটন ভাবছেই না। তারা এখনই ক্ষমতার পালাবদল চায়।

অন্যদিকে শাভিস্তারা গুয়াইদোপন্থী ও যুক্তরাষ্ট্রের মদদপুষ্ট বিরোধীদের বিরুদ্ধে শেষ পর্যন্ত লড়াই চালিয়ে যাওয়ার ঘোষণা দিয়েছেন। কিছু বিশ্লেষক মনে করেন, পরিস্থিতি যেদিকে গড়াচ্ছে, তাতে মধ্যপন্থী একটি শ্রেণি হয়তো শিগগিরই দাঁড়িয়ে গিয়ে বলবে তারা মাদুরো বা গুয়াইদো কাউকেই চায় না। তারা নতুন কোনো নেতৃত্ব দেখতে চায়। এ অবস্থায় সেনা হস্তক্ষেপের বাইরে সংকট সমাধানের অন্য কোনো বিকল্প আপাতত দেখা যাচ্ছে না। তাতেও জাতীয় বিপর্যয় কমবে বলে মনে হয় না, কারণ যুক্তরাষ্ট্র নিষেধাজ্ঞা যদি আরও কড়াকড়ি করে, তাহলে পরিস্থিতি অবনতির দিকেই যাবে।

১৯৯০ সালে নিকারাগুয়ায় প্রায় একই ধরনের পরিস্থিতি হয়েছিল। তৎকালীন বুশ সিনিয়র প্রশাসন ঘোষণা করেছিল, তারা যদি দেখে বিরোধী দল ক্ষমতায় এসেছে, তাহলেই শুধু তারা দেশটির ওপর থেকে নিষেধাজ্ঞা তুলে নেবে। ভেনেজুয়েলার ক্ষেত্রেও হয়তো যুক্তরাষ্ট্র একই নীতি গ্রহণ করবে। যুক্তরাষ্ট্র হয়তো ভেনেজুয়েলার ক্ষেত্রে সরাসরি এমন কথা বলবে না। আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের মাধ্যমে যুক্তরাষ্ট্র হয়তো ভেনেজুয়েলায় স্বচ্ছ ও নিরপেক্ষ নির্বাচন চাইবে। কিন্তু এ মুহূর্তে নির্বাচন অনুষ্ঠান মাদুরো পক্ষ মেনে নেবে বলে মনে হয় না।

সমাধানের পথ পাওয়া যাবে কি না, পাওয়া গেলেও সেটি কী হতে পারে, সে জন্য আরও কিছুদিন হয়তো অপেক্ষা করতে হবে।

আল–জাজিরা থেকে নেওয়া। ইংরেজি থেকে অনূদিত
জর্জ সিক্কারেলো মাহের হেমিস্ফেরিক ইনস্টিটিউট অব পারফরম্যান্স অ্যান্ড পলিটিকসের ভিজিটিং স্কলার